
বান্দরবানের পোয়াংপাড়া জেতবন বৌদ্ধ বিহারের অষ্টম
দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন
রামু উত্তর মিঠাছড়ি বন বিহারের আজীবন অধ্যক্ষ সবর্জনপূজ্য প্রয়াত প্রজ্ঞামিত্র মহাস্থবিরের প্রিয় শিষ্য, বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, বহু গ্রন্থ সংকলক, তরুণ সাংঘিক ব্যক্তিত্ব, পোয়াংপাড়া জেতবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সুদেশক এস. ধর্মমিত্র থের পবিত্র ভিক্ষুজীবনের ২০ বর্ষবাস পূর্তি উদ্যাপন ও অষ্টম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব গতকাল ৫ নভেম্বর রবিবার বান্দরবান জেলাধীন ২নং লামা সদর ইউনিয়নের পোয়াংপাড়া জেতবন বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল ছয়টায় জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ছয়টায় ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ গ্রহণ, সকাল নয়টায় প্রয়াত বিহার-অধ্যক্ষ বোধিমিত্র ভিক্ষু, উপাধ্যক্ষ জ্যোতি আনন্দ ভিক্ষু ও সকল জ্ঞাতিগণের নির্বাণ শান্তি কামনায় মহতী সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, বিকাল দুইটায় সদ্ধর্ম সভা ও কঠিন চীবর দানোৎসব, রাত দশটায় বুদ্ধ কীর্তন।
সকাল নয়টায় অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনে দরদরী সুনন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষুকুল গৌতম বিনয় শীল ভদন্ত প্রজ্ঞাশ্রী মহাস্থবির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ধর্মসভায় প্রধান সদ্ধর্মদেশক ছিলেন বাথুয়া জ্ঞানোদয় বিহারের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার যুগ্ন মহাসচিব পি. লোকানন্দ মহাথেরো, সদ্ধর্মদেশক ছিলেন নারিশ্চা ধাতু চৈত্য জাদি বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সাধন মিত্র থের, দক্ষিণ জোয়ারা পরমানন্দ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত কে. জ্যোতি মিত্র থের, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ উন্নয়ন সংস্থা,বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সংগঠক জে বি এস আনন্দবোধি থের, বিলছড়ি ত্রিরত্নাংকুর বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞারত্ন ভিক্ষু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চীবর দান উদযাপন পরিষদের সভাপতি পোতন বড়ুয়া। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন ভূমিদাতার কনিষ্ঠ কন্যা
রিমা বড়ুয়া।
বেলা একটায় দ্বিতীয় পর্বে দরদরী সুনন্দ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ,প্রজ্ঞাশ্রী মহাথেরো সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান সদ্ধর্মদেশক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ও চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জিনবোধি মহাথেরো। শুরুতে মঙ্গালাচরণ করেন শ্রীমাণ সংঘমিত্র শ্রামণ। বিশেষ সদ্ধর্মদেশক ছিলেন চেমী কপিলা বস্তু বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত দীপংকর মহাথেরো, অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন পোয়াংপাড়া জেতবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত এস. ধর্মমিত্র থের। প্রধান অতিথি ছিলেন ২নং লামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার পরিমল বড়ুয়া, দানশীল ব্যক্তিত্ব মতিলাল বড়ুয়া, কাজল বড়ুয়া। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন উসমিতা বড়ুয়া ও কণিকা বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে সকাল ও বিকালে সঞ্চালনায় ছিলেন অনামিকা বড়ুয়া এ্যানি।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। সকল ধর্মের মানুষ নানা আচার অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় কার্যাদি স্বাধীনভাবে পালন করছে। সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির নিদর্শনের দেশ বাংলাদেশ। বক্তারা বলেন, অহিংস পরম ধর্ম ও মৈত্রী সুভাশীষ বৌদ্ধবাণী ও নীতি-আদর্শ অনুসরণের মধ্য দিয়ে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। সকল মানুষ ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সাম্য ও মৈত্রীর মেলবন্ধনে এগিয়ে এলে সম্প্রীতির এই বাংলাদেশ আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে।