বৃহস্পতিবার - ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

ঠাকুরগাঁওয়ে দেশি গরুর সরবরাহ ভালো, খামারের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বিক্রির আশায়, গরুর দাম প্রত্যাশিত না হওয়ায় পড়েছেন বিপাকে !

ঠাকুরগাঁওয়ে দেশি গরুর সরবরাহ ভালো, খামারের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বিক্রির আশায়, গরুর দাম প্রত্যাশিত না হওয়ায় পড়েছেন বিপাকে !

 

ঠাকুরগাঁও জেলার সদর, রাণীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী লাহিড়ী বাজার সহ বিভিন্ন উপজেলার গরুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশি গরুর সরবরাহ ভালো। অনেক খামারিই তাদের খামারের গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বিক্রির আশায়। কিন্তু গরুর দাম প্রত্যাশিত না হওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে।
খামারিরা কয়েক মাস আগে থেকেই গরু প্রস্তুত করেছেন কোরবানির জন্য। কিন্তু বাজারে অন্যান্য ফসল আলু, মরিচের ধাম কমে যাওয়া এবং চাহিদার তুলনায় পশু বেশি হওয়ায় দাম কম বলে মনে করছেন অনেকে। স্থানীয় খামারিরা বলেন, একটা গরু বড় করতে ৮-১০ মাস লেগে যায়। খাবার, ঔষুধ, পরিচর্যা- সব মিলিয়ে অনেক খরচ হয়। এখন হাটে এসে দেখি, যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে খরচই ওঠে না। গত বছরের তুলনায় এবার গরুপ্রতি প্রায় ১০-২২ হাজার টাকা ও প্রতি ছাগলে ৩-৫ হাজার টাকা কম। এছাড়াও হাটে কাদা-পানি জমে থাকা ও অব্যবস্থাপনাসহ অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। পুরাতন ঠাকুরগাঁও এলাকার গরু বিক্রেতা মজিদ বলেন, এবার মানুষের হাতে টাকা নেই। মানুষ আলু ও মরিচ করে লস খেয়েছে। তাই এবার গরুর দাম নেই। গতবার তিন মণ ওজনের যে গরু বিক্রি করেছি ৮০-৯০ হাজার, এবার ওই গরু বিক্রি করলাম ৭০ হাজার টাকায়। রব্বানী ও হাবিবুর, রমজান নামে স্থানীয় দুই খামারি বলেন, একটা গরু বড় করতে ৮-১০ মাস লেগে যায়। খাবার, ঔষুধ, পরিচর্যা- সব মিলিয়ে অনেক খরচ হয়। এখন হাটে এসে দেখি, যে দামে গরু বিক্রি হচ্ছে তাতে খরচই ওঠে না। এবার গরু লালন-পালন করে লস। অন্যদিকে অনেক সাধারণ ক্রেতা ও অন্য জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের থেকে বাজারে এবার গরুর দাম তুলনামূলকভাবে কম ও সহনীয়। এতে সহনীয় দামে পশু ক্রয় করতে পেরে খুশি তারা। রোড এলাকার মো. সোবহান বড় খোঁচাবাড়ি পশুর হাটে ছেলেকে নিয়ে গরু নিতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, বাজারে যদিও থার্ড পার্টি দৌরাত্ম্য বেশি সরাসরি মূল মালিকের কাছ থেকে গরু কেনা কষ্টকর তারপরও অন্যবারের তুলনায় আমার কাছে মনে হয়েছে বাজার কম। যে বাজেট নিয়ে এসেছিলাম সে অনুযায়ী গরু নিতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ। এতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করি। গত বছর যে গরু ১ লাখ ও ৯০ হাজার টাকা দাম ছিল সেই গরু এবার ৭০-৭৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমি এবার গরুটি নিয়েছি ৬৯ হাজার ৫০০ টাকায়। সেটির মাংস ১০০ কেজি হবে বলছে গরু বিক্রেতা। আমার ধারণা ৯০-৯৫ কেজি মাংস হতে পারে। এতে আমি খুশি। হোসেন নামে এক গরু ব্যবসায়ী বলেন, এবার এইদিকের বাজারগুলোতে ইন্ডিয়ান গরু নেই কিন্তু তার পরেও দেশি গরুর দাম কম। ক্রেতা নেই। বাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে গরু আমদানি হয়েছে সেই তুলনায় পার্টি ও কেনার লোক নেই। এবার আড়াই থেকে তিন মণের গরুতে ১০ হাজার টাকা কম ও ৫-৬ মণ ওজনের গরুতে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা দাম কম। বর্তমানে গরু বাজারে এখনো উঠেনি। গ্রামের গরুগুলো বাজারে আনা শুরু করলে দাম আরও কমে যাবে। এবার আমাদের ব্যবসায়ীদের লসের পাল্লা বেশি।
আমিন ও রহমান নামে ছাগল বিক্রেতা বলেন, ছাগলের দাম চাই ৮ হাজার দাম বলে ৪-৫ হাজার। গতবছর যে ছাগলের দাম ছিল ১০ হাজার সেই ছাগল এবার ৫-৬ হাজার টাকা। গতবার ছাগলের প্রতি কেজি মাংস ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা অনুযায়ী বিক্রি হয়েছিল। এবার ৮০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।
আগামী কয়েক দিনে বাজারে পশুর দাম বাড়ার সম্ভাবনা কথা জানতে চাইলে অনেক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমান আবহাওয়া ও অবস্থায় এবার মনে হয় না আর দাম বাড়বে বরং দাম আরও কমতে পারে বলেও জানান তারা। এবার প্রচুর সংখ্যক খামারি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন গরু পালনের, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, মধ্যবিত্তদের বাজেট কমে যাওয়া এবং পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকেও ক্রয় বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় হাটগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই বলেও জানান অনেকেই। অনেক খামারিরা জানান, এভাবে দাম কমে গেলে ভবিষ্যতে তারা আর গরু পালন করবেন না। এতে দেশীয় পশুর সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৫ হাজার। সে জায়গায় পশু লালনপালন করে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ৯১ হাজার। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৬ হাজার পশু বেশি রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজহার আহমেদ খান জানান, বর্তমানে গরুর দাম কম হলেও পাইকারের সংখ্যা বাড়লে পশুর দাম বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে ও গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলার প্রতিটি হাটে ভেটেরিনারি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। হাটে জাল টাকার নোট শনাক্ত করার ব্যবস্থা, অতিরিক্ত টোল আদায়, হাট ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে নির্ধারিত ফি থেকে বেশি টোল আদায় করা না হয় সে জন্য ঠাকুরগাঁও জেলার ৪০টি হাটের ইজারাদারে নির্দেশ দেওয়া আছে। এছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ বাজার মনিটরিং করছেন কোথাও কোনো ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, সড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও হাটগুলো উন্নয়নের বিষয়ে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঠিকাদারদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী অর্থবছরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn