মঙ্গলবার - ১০ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৪ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

মুনতাহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

মুনতাহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

 

সিলেটের কানাইঘাটের পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনকে সাবেক গৃহশিক্ষিকা, তার মা ও নানী তিনজন মিলে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ প্রথমে মাটিতে পুঁতে ফেলেন তারা।

রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে মাটিতে পুঁতে ফেলা লাশ তুলে মুনতাহার চাচার বাড়ির পুকুরে ফেলার সময় হাতেনাতে গৃহশিক্ষিকার মাকে আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মুনতাহার লাশ দেখতে পান স্বজনরা।

শিশু মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। সে নিখোঁজের পর থেকে তাদের প্রতিবেশী মার্জিয়ার (৪০) পরিবারকে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

এ ঘটনায় শিশু মুনতাহার গৃহশিক্ষিকা শামীমা বেগম মার্জিয়া, তার মা আলিফজান বিবি ও নানি কুতুবজান বিবিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কানাইঘাট (সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, শনিবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে মার্জিয়াকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তিনি কোনো কিছু স্বীকার করতে রাজি হননি। এ সময় মুনতাহার আত্মীয়-স্বজনও থানায় যায়। পুলিশ বাড়ির আশপাশের এলাকা তন্ন তন্ন করে নতুন গর্ত ইত্যাদি খোঁজার জন্য বলে গ্রামবাসী ও স্বজনদের। এ খবর পেয়ে তৎপর হয়ে উঠে মার্জিয়ার মা আলিফজান। গ্রামবাসী ও মুনতাহার পরিজন থানায় অবস্থান করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান তাদের ঘরের পাশের একটা পুরানো খালে পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশ দ্রুত বাড়ির পুকুরে ফেলে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এ সময় মুনতাহার প্রতিবেশী দাদা আবদুল ওয়াহিদ তা দেখে ফেলেন। উন্মোচন হয় নিখোঁজ শিশু মুনতাহাকে অপহরণ করে হত্যার লোমহর্ষক পরিকল্পনা।

কে এই মার্জিয়া, কিভাবে হত্যা করে মুনতাহাকে
মুনতাহার প্রতিবেশী এই ঘাতক মার্জিয়া একসময় মুনতাহার গৃহশিক্ষক হিসেবে তাকে পড়াতেন। কিন্তু কয়েক মাস থেকে মুনতাহার পরিবার তাকে পড়ানো থেকে বাদ দেন। এ নিয়ে মার্জিয়ার পরিবারের সাথে মনোমালিন্য দেখা দেয় মুহতাহার পরিবারের। সেই বিরোধ থেকে তাদের পরিবারের ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেন মার্জিয়া। গত ৩ নভেম্বর মার্জিয়াকে তার ঘরের সামনে ঘুরাঘুরি করার সময় লুকিয়ে রাখেন মার্জিয়া। পরে পরিবারের অন্যদের সহযোগিতায় শিশু মার্জিয়াকে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করেন।

জানা গেছে, মুনতাহা নিখোঁজের পর মার্জিয়ার পরিবারকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। মুনতাহার পরিবারের সন্দেহের কারণে শনিবার মার্জিয়াকে আটক করে কানাইঘাট থানা পুলিশ এবং তার পরিবারের ওপর নজর রাখে মুনতাহার পরিবার। তবে মার্জিয়া পুলিশের কাছে মুনতাহাকে অপহরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি।

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আওয়াল সকালে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, শিশু মুনতাহা অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় তিন নারীকে আটক করা হয়েছে। মুনতাহার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৩ নভেম্বর সকালে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় একটি মাদরাসার ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফেরেন মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ। পরে মেয়েটি প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সাথে খেলা করতে যায়। বিকেল ৩টার দিকে মেয়েকে খোঁজাখুঁজির পর কোথাও কোনো সন্ধান পাননি তারা। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn