
এস আলম গ্রুপকে বাঁচানোর আর্তনাদ: ডুবে যাওয়া টাইটানিকের মতো : চট্টগ্রামের বাণিজ্য জাহাজকে রক্ষা করুন
-মো. কামাল উদ্দিন
আমি যখন এই লেখাটি লিখতে বসেছি, তখন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই মহাজাহাজ টাইটানিকের ছবি—যে জাহাজটি সমুদ্রের গভীরে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। আজ আমাদের চট্টগ্রামের গর্ব, আমাদের ব্যবসার জাহাজ, এস আলম গ্রুপও যেন একইভাবে ডুবে যাওয়ার পথে। সেই জাহাজ যেন আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, বলছে—“আমাকে রক্ষা করো! আমাকে বাঁচাও এই অথই সাগরের ঢেউয়ের মাঝে ডুবে যাওয়া থেকে।” আমার মতো সাধারণ মানুষের হয়তো এত ক্ষমতা নেই, যা দিয়ে টাইটানিকের মতো বিশাল এক জাহাজকে বাঁচানো যায়। তবুও আমি এস আলম গ্রুপের এই বাঁচার আকুতির সাথে আমার কলমের মাধ্যমে একাত্মতা জানাচ্ছি। আমার এই মানবিক আবেদন ক’জনের কানে যাবে, ক’জনের চোখে পড়বে, আমি জানি না। তবে এটুকু জানি, একজন নাগরিক হিসেবে আমার দায়বদ্ধতা থেকে আমার লেখনীর হাত প্রসারিত করছি, হয়তো কেউ একবার পড়ে ভাববে, একবার কেঁদে উঠবে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প গ্রুপের জন্য।
প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রাম:
আমাদের প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রাম প্রাচীনকাল থেকে বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। এখানকার মানুষ ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে যুগ যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আজকের চট্টগ্রামকে আমরা বাণিজ্য নগরী বলে ডাকি তার পেছনে রয়েছে এস আলম গ্রুপের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবদান। আশির দশকে পরিবহন ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করা এস আলম গ্রুপ আজ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছে দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগের মেলবন্ধন ঘটিয়ে এস আলম গ্রুপ আজ হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনা করেছে, নিজেও একাধিক ব্যাংকের মালিক হয়ে সেগুলোকে ব্যবসার জন্য ব্যবহার করেছে—কিন্তু কখনো খেলাপি হয়নি। তবুও আজ তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে বিদেশে টাকা পাচার করার অপবাদে। বিদেশি বিনিয়োগ না কি ষড়যন্ত্র? বিদেশে ব্যবসা করা মানে বিদেশে টাকা পাচার নয়। এস আলম বৈধভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবসায় হাত বাড়িয়েছে। বিদেশিরা যেমন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে, ঠিক তেমনি এস আলমও বৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। এতে যদি কোনো অসংগতি থাকে, সরকার তো তা সংশোধন করতেই পারে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা একধরনের দুরভিসন্ধিমূলক আক্রমণ, যা দেশের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
সকল বিবেকবান মানুষের কাছে আবেদন:আমি জানি না, আমার এই ছোট্ট লেখা কতজনের হৃদয়ে পৌঁছাবে। তবে আমার আকুল আবেদন, আমাদের সকলের উচিত দলমত নির্বিশেষে এস আলম গ্রুপকে রক্ষা করার জন্য এক হয়ে দাঁড়ানো। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি এই কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি—এটা কেবল এস আলমের লড়াই নয়, এটা আমাদের সকলের লড়াই। একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে বেশি সময় লাগে না, কিন্তু গড়ে তুলতে লাগে বছরের পর বছর। এস আলমের এই দীর্ঘ দিনের অর্জনকে এক নিমেষে শেষ হতে দেওয়া যায় না।
আসুন, আমরা সকলে মিলে এই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে এস আলম গ্রুপকে রক্ষা করি, তাদের পাশে দাঁড়াই। আমাদের মানবিক দায়িত্ব আজ কেবল এই শিল্প গ্রুপকে রক্ষা করাই নয়, বরং আমাদের প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যকেও রক্ষা করা। আসুন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করি। আমাদের আবেদন সরকার ও মাননীয় উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যেন তারা এই মহাবিপদ থেকে এস আলম গ্রুপকে রক্ষা করেন।আশা করি, লেখাটি আপনার চাহিদা অনুযায়ী আবেগময় ও আবেদনমূলক হয়েছে। এই লেখাটি পাঠক ও নীতি নির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে বলে আমার বিশ্বাস। জাতীয় স্বার্থে এবং চট্টগ্রামের বৃহত্তর কল্যাণে এস আলম শিল্প গ্রুপকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষায় আমাদের দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রামবাসীর জন্য এটি একটি মহাবিপদের সময়। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এখন সময়ের দাবি। এস আলম শিল্প গ্রুপ দেশি ও বিদেশি মহলে একটি গৌরবের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আজ সেই প্রতিষ্ঠানটি কূটকৌশলে দেউলিয়া হওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে এস আলমকে বাঁচাতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
মনে রাখতে হবে, একটি প্রতিষ্ঠান সুপ্রতিষ্ঠিত হতে বহু বছর সময়ের প্রয়োজন হয়, কিন্তু ধ্বংস করতে সময় লাগে না। এস আলম গ্রুপ দীর্ঘ বছর ধরে তিলে তিলে শ্রম, মেধা এবং সৃজনশীলতায় আজকের এই অবস্থানে এসেছে। কিন্তু, কোনো না কোনো কারণে আজ এটি ষড়যন্ত্রের শিকার। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য এই গ্রুপের সঙ্গে জড়িত, তেমনি দেশীয় অর্থনীতিতেও তাদের অবদান উল্লেখ যোগ্য। যেখানে আমরা এখনও শতভাগ বেকারত্ব দূর করতে পারিনি, সেখানে এস আলমকে দেউলিয়া করে লক্ষ লক্ষ কর্মরত মানুষকে বেকার করার অভিশাপ থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আল্লাহর ওয়াস্তে, একটি সুসংগঠিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্প গ্রুপকে রক্ষার জন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আবেদনসহ চট্টগ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সরকারের দ্বারস্থ হবো। এস আলম শিল্প গ্রুপ ধ্বংস হয়ে গেলে আমাদের কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কিভাবে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়—এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:এস আলম শিল্প গ্রুপ ধ্বংস হলে আমাদের সমস্যা:লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হারাবে:** এস আলম গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান, যার অধীনে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত আছেন। যদি এই গ্রুপটি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এসব মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। বেকারত্বের এই ঢেউ শুধু চট্টগ্রামেই নয়, বরং সারা দেশে আর্থ-সামাজিক সংকট তৈরি করবে। দেশীয় অর্থনীতিতে বিপর্যয়: এস আলম গ্রুপ দেশের খাদ্য, ইস্পাত, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ, এবং অন্যান্য খাতে বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে এসব খাতের উৎপাদন, সরবরাহ, এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, সরবরাহে ঘাটতি, এবং বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে নেতিবাচক বার্তা, এস আলম একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ও গৌরবময় প্রতিষ্ঠান, যা দেশি-বিদেশি মহলে সুনাম অর্জন করেছে। এই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাবে। এতে ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাবে।শ্রমিকদের সামাজিক ও পারিবারিক সংকট, কর্মসংস্থান হারালে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও তাদের পরিবার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়বে। বেকারত্বের কারণে তাদের সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও জীবনযাপনের মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতি অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণ কি হতে পারে-
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মূল কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:
প্রতিযোগীদের ঈর্ষা ও স্বার্থহানি: এস আলম গ্রুপের প্রতিযোগীরা বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এবং এস আলমের ব্যবসা ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করছে। এ ধরনের শত্রুতা এবং অপরিণত ব্যবসায়িক কৌশলগুলো তাদের এই ষড়যন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি।
অপ্রতিরোধ্য সাফল্য ও শক্তিশালী নেতৃত্ব: এস আলম গ্রুপের অতুলনীয় সাফল্য এবং তাদের শক্তিশালী নেতৃত্ব একশ্রেণির মহলকে অসন্তুষ্ট করেছে। তারা মনে করে এস আলম গ্রুপের সাফল্য তাদের স্বার্থের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপ:এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তার পেছনে রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে। অনেক সময় একটি সফল প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাব এবং চাপ প্রয়োগ করে তার স্বার্থবিরোধী কাজ করানোর চেষ্টা করা হয়।বিরোধীদের স্বার্থ রক্ষা:** দেশের কিছু প্রভাবশালী মহল তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এস আলম গ্রুপকে ধ্বংস করতে চাইছে। এদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা এবং অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানকে পিছনে ফেলে রাখা।
এস আলম গ্রুপকে রক্ষায় আমাদের করণীয়: গণসমর্থন গড়ে তোলা: এস আলম গ্রুপের পক্ষে জনগণের সমর্থন জাগিয়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যও অত্যাবশ্যক।
মিডিয়াতে সোচ্চার হওয়া: স্থানীয় এবং জাতীয় মিডিয়ায় এস আলম গ্রুপের অবদান এবং চলমান ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিরপেক্ষভাবে সত্য তুলে ধরে জনগণকে জানানো যেতে পারে যে, এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হলে দেশ কী কী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানানো: সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ জানাতে হবে, যেন তারা দলমত নির্বিশেষে এস আলম গ্রুপ রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁকে অনুরোধ জানানো উচিত, যেন তিনি সরাসরি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেন
আন্দোলন ও প্রতিবাদ সংগঠিত করা: চট্টগ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এস আলম গ্রুপ রক্ষায় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলন হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, এবং আইনানুগ।
সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ: সরকারের কাছে দাবি জানাতে হবে, যেন তারা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় এবং এস আলম গ্রুপকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করা যেতে পারে আজকের এই সংকটময় সময়ে এস আলম শিল্প গ্রুপকে রক্ষা করা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশ্ন নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষারও প্রশ্ন। দলমত নির্বিশেষে সকলের উচিত এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এস আলমের শ্রমিক, কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের স্বার্থে এবং আমাদের অর্থনীতির সুরক্ষায় আমরা সকলে একত্রিত হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক, টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম