শুক্রবার - ২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২রা মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ঘুরে আসুন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা শরিফ থেকে

ঘুরে আসুন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা শরিফ থেকে

ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা ঈদ বা সাপ্তাহিক ছুটির আমেজ কালীগঞ্জের নলতা শরিফ থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামে অবস্থিত নলতা শরিফ, একজন মহান শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। ১৮৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এখানেই জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ১৯২১ সালে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর ভূমিকা ছিল অসামান্য, পাশাপাশি একজন আউলিয়া হিসেবেও তিনি মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করেন।

১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হলে নলতায় তাকে সমাহিত করা হয়। পরে তার সমাধিকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় নলতা শরিফ বা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ সমাধি কমপ্লেক্স।

সমাধি কমপ্লেক্স ও এর বৈশিষ্ট্য
প্রায় ৪০ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এই কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন সমাধি সৌধ। এখানে রয়েছে মসজিদ, মাজার, লাইব্রেরি, অফিস, অতিথিশালা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পুকুর এবং ফুলের বাগান। মূল সমাধি সৌধটি ৩টি দিক থেকে সিঁড়িপথ দিয়ে ঘেরা, যার মধ্যে প্রধান সিঁড়িটি বেশ প্রশস্ত ও সুন্দরভাবে নকশা করা। সৌধটিতে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজসহ মোট ৯টি গম্বুজ যা স্থাপত্যের দিক থেকে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

প্রতিবছর ৮, ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী আয়োজিত হয় খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বার্ষিক ওরস মাহফিল। এ উপলক্ষে বসে বড় মেলা, যেখানে দেশজুড়ে থেকে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থী অংশ নেন। এছাড়াও ১৯৫০ সাল থেকে প্রতি রমজান মাসে এখানে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল।

দর্শনার্থীদের জন্য সময়সূচি
নলতা শরিফ সারাবছর দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে এখানকার জাদুঘরটি সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে।

নলতা শরিফ যেভাবে যাবেন
ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, কল্যাণপুর, শ্যামলী ও সাভার থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এসি ও নন-এসি বাস চলাচল করে। জনপ্রিয় বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে রয়েছে এসপি গোল্ডেন লাইন, এ কে ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন, মামুন এন্টারপ্রাইজ, ঈগল, সোহাগ, সৌদিয়া, সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস ও শ্যামলী পরিবহন। বাসভেদে ভাড়া পড়ে ৬৫০ থেকে ১৩০০ টাকা।

সাতক্ষীরা শহর থেকে কালীগঞ্জগামী লোকাল যানবাহনে নলতা শরিফ পৌঁছানো যায় সহজেই। নলতা শরিফ সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত, নলতা বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি। কালীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে এটি প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে।

রাতযাপনের জন্য কোথায় যাবেন?
সাতক্ষীরায় রাতযাপনের জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল সংগ্রাম, হোটেল সম্রাট, হোটেল সীমান্ত, মোজাফ্ফর গার্ডেন, হোটেল মোহনা ও হোটেল উত্তরা ভালো মানের সেবা দিয়ে থাকে।

খাবেন কোথায়?
সাতক্ষীরা তার স্থানীয় খাবার, যেমন কুল, আম, ওল, মাছ এবং সুন্দরবনের খাঁটি মধুর জন্য বিখ্যাত। এখানে আসলে ‘ঘোষ ডেইরির সন্দেশ’ একবার চেখে দেখতেই হয় – এর স্বাদ অনেকদিন মনে থাকবে নিশ্চয়!

সাতক্ষীরায় আরো যা যা দেখবেন
নলতা শরিফ ছাড়াও সাতক্ষীরায় রয়েছে আরো কিছু চমৎকার দর্শনীয় স্থান। সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন – সুন্দরবন, জোড়া শিবমন্দির, মন্টু মিয়ার বাগানবাড়ি, দেবহাটার বনবিবির বটগাছ, মান্দারবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত, সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির এবং ঐতিহাসিক জাহাজমারী।

সতর্কতা
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়; তাই প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সঙ্গে মিল নাও থাকতে পারে। অনুগ্রহ করে আপনি কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বে বর্তমান তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নিয়ে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়। এইসব নম্বরে কোনোরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই বাচাই করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

উল্লেখ্য
যেকোনো পর্যটন স্থান আমাদের দেশের সম্পদ। প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। মনে রাখবেন, দেশ আমাদের, দেশের সব কিছুর প্রতি যত্নবান হওয়ার দায়িত্বও আমাদেরই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn