বৃহস্পতিবার - ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

২৫ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ: পরিত্যক্ত পিলারে পলি জমে ভরাট হচ্ছে কপোতাক্ষ নদ

২৫ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ: পরিত্যক্ত পিলারে পলি জমে ভরাট হচ্ছে কপোতাক্ষ নদ

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামসহ বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ সাঁকো পার হয়েই আসে বিনোগঞ্জ (কপিলমুনি) কেন্দ্রীক ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে। বিশেষ করে উৎপাদিত ও নিত্য প্রযোজনীয় পণ্য সরবরাহে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় সাঁকো দিয়ে।
নদের দু’পাড়ের এক পাড়ে সাতক্ষীরা তালা উপজেলা অন্য পাড়ে খুলনার পাইকগাছা উপজেলা মাঝখানে বহমান কপোতাক্ষ নদ। দু’জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০০০ সালে আওয়ামীলীগ সরকার কপোতাক্ষ নদের কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতু নির্মানের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের পাশাপাশি পাউবোর খাম-খেয়ালীপনায় মাঝ পথে বন্ধ হয়ে যায় কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতুর নির্মাণ কাজ। সেতু নির্মাণ বন্ধ হলেও নদের বুকে থেকে যায় ১৮টি পরিত্যক্ত পিলার। কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত কানাইদিয়া-কপিলমুনি অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পরিত্যক্ত পিলারের কারণে খননকৃত নদ পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসি জানায়, কপোতাক্ষ নদের উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পোষণ করছিল আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু। কপিলমুনি কানাইদিয়া সেতু সাতক্ষীরা সদর হয়ে কলিকাতা পর্যন্ত সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সে সময় সেতু নির্মাণের জন্য কোলকাতা স্টেট ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকাও জমা রাখা হয়। কিন্তু সে সময় কিছু লোকের বিরোধিতা ও দেশ স্বাধীনের আগে তার ভারতে চলে যাওয়ায় কানাইদিয়া-কপিলমুনির সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় দু’জনপদের সাধারণ মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে ২০০০সালে আওয়ামী লীগ সরকার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ঐ সময় সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন হক এসোসিয়েট। কার্যাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০০০সালের ১২ এপ্রিল এর কার্যক্রম শুরু করে ২০০৩ সালের ১২নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে আইএফআইসি ব্যাংক খুলনা শাখা হতে ১কোটি ৬৭লাখ ৭২২টাকা উত্তোলণ করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ঐসময় বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক পর্যায়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
তবে সেতু নির্মাণ বন্ধ হলে নদের বুকে থেকে যায় ১৮টি পিলার। আর এই আংশিক কাজ শেষ হওয়া পিলারে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে পলি জমে কপোতাক্ষের নাব্যতাহ্রাস পায়। মৃতপ্রায় কপোতাক্ষ নদকে পুনর্জীবিত করতে কপোতাক্ষ পাড়ের দু’জনপদের মানুষ নদ খননের দাবীতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। যার ফলশ্রুতিতে ২০১১সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কপোতাক্ষ খননের সময় অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পরিত্যক্ত পিলার অপসারণ না করেই খনন কাজ সম্পান্ন করা হয়। পিলারগুলোর কারণে একদিকে যেমন জোয়ার ভাটায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে নদ অন্যদিকে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, তালার কানাইদিয়া ও পাইকগাছার কপিলমুনি সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের উপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করলেও মামলাসহ নানা জটিলতা অসমাপ্ত অবস্থায় পরিতাক্ত্য ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অসমাপ্ত পিলারে কারণে নদের জোয়ার ভাটার সাভাবিক গতির ব্যাহত হতে থাকে। খনন প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার পরেও অসমাপ্ত সেতুর ১৮টি পিলার নদের বক্ষে থাকার কারণে সরকারের ২৬২কোটি টাকা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।অচিরেই পিলারগুলি অপসারণ করা না হলে কপোতাক্ষ হারাবে তার নাব্যতা।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নদের বুকে আসমাপ্ত কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতুর ১৮টি পিলারের কারণে আবোর পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কপোতাক্ষে বুক থেকে পিলারগুলি অপসারণ করা না হলে আবারও জলাবদ্ধতার শিকার হবে কপোতাক্ষ পাড়ের দু’জনপদের মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) খুলনা জানান, মামলাসহ নানা জটিলতা ও দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে কানাইদিয়া-কপিলমুনি সেতু নির্মাণ প্রকল্প কপোতাক্ষ খনন শুরু আগেই শেষ হয়েছিল। এখন সেতুটি নির্মাণ করতে হলে নতুনভাবে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। আসমাপ্ত পিলার কপোতাক্ষ নদের জন্য বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে কপোতাক্ষ খননের সময় অসমাপ্ত পিলারগুলো অপসারণ করলে সব থেকে ভালো হতো, কিন্তু সে সময় পিলারগুলো কেন অপসারণ করা হলো না তা বুঝতে পারলাম না।
সর্বশেষ এবছর পলি মৌসুমের অনেক আগেই কপোতক্ষে পলির আগমন ঘটেছে এবং পিলারের কারণে কপোতাক্ষের তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কপোতাক্ষ হারাবে তার নাব্যতা এবং আবারও জলাবদ্ধতার শিকার হবে ৫০লাখের উর্দ্ধে কপোতাক্ষ পাড়ের দু’জনপদের মানুষ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn