মঙ্গলবার - ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নারী সৃষ্টির প্রতীক

নারী সৃষ্টির প্রতীক

শাহিদা আকতার জাহান

 

নারী হলো সৃষ্টির প্রতীক। নারী ও পুরুষের পারস্পরিক নির্ভরশীলতাই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। নারী ছাড়া সৃষ্টির অস্তিত্ব কল্পনায় করা যায় না। আবহমানকাল থেকে নারী ও পুরুষের হাত ধরেই পৃথিবী সভ্যতার পথে এগিয়ে চলছে।
নারী এই একটি শব্দে সীমাহীন শক্তি,বিশাল গভীরতা,সুন্দর এক সত্তা। তিনি কখনও মায়ের মমতায় স্নেহময়ী, কখনও স্ত্রীর ভালোবাসায় নিবেদিতা, কখনও বোনের স্নেহে ভালোবাসায় এগিয়ে যাবার প্রেরণা। আবার কখনও বন্ধুর মতো শক্তির উৎস। তার ব্যক্তিত্ব, শ্রম, এবং মেধার মাধ্যমে সমাজে অসাধারণ অবদান রেখে চলেছেন। নারী যখন কর্মজীবনে অংশগ্রহণ করেন, তখন তিনি শুধু নিজের জন্যই নন, সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অবদান রাখেন। তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, তার প্রতিটি পদক্ষেপ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নারী ও পুরুষের উভয় অংশের অবদানই সভ্যতার এ অগ্রযাত্রা। নারী শুধু জীবন সঙ্গী নন, তিনি জীবনের শৃঙ্খল, পথপ্রদর্শক ও অনুপ্রেরণা পথিক। নিজের মধ্যে প্রেম,মায়া সাহস, বুদ্ধিমত্তা এবং সহমর্মিতা বহন করেন । সংসারে নারীকে সবাই দেখে শুধুই ঘরের কাজকর্মে, কিন্তু এই ক্ষুদ্র কাজগুলোর মাধ্যমে তিনি পরিবারের সমস্ত সদস্যদের জীবনে আনন্দ, ভালোবাসা, এবং স্থিরতা বয়ে আনেন। এই সমাজ ব্যবস্হা এক বার ও চিন্তা করে না।
অতীতে এমন এক নিষ্ঠুর সমাজও ছিলো যেখানে নারীদের মূল্যায়ন তো দূরের কথা, ‘নারী’-হওয়া তো এক অভিশাপ মনে করতো। সমাজ ব্যবস্হা তাদের দিকে ছুড়ে দিত অপবাদ,অকল্যান,এক প্রতিকূল পরিবেশ। কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন সেই জন্মধাত্রী মায়ের জন্য অভিশাপস্বরূপ। কন্যাশিশু নামক নারীকে জন্ম দেওয়ার জন্য অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হতে হতো মা নামক সে নারীকে। এক অর্থে, আতুর ঘরে,অঙ্কুর থেকে তার নিযার্তন শুরু। সে কন্যা শিশু পরিপূর্ণ নারীরূপে প্রস্ফুটিত হওয়াটাই সেই নারীসত্তার জন্য ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় ।
নারীর শক্তি প্রকৃতির মতোই সীমাহীন—কখনও তিনি ঢেউয়ের মতো প্রবল,আবার কখনও শান্ত নদীর মতো। সমাজ,পরিবার এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অবদান আমাদের সকলের জীবনে অপরিসীম প্রভাব রাখে। তাই নারীর মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব। নারী মানেই সৃষ্টির প্রথম ধাপ। তার মধ্যে রয়েছে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি ও পালনের ক্ষমতা। একজন মা হিসেবে তিনি তার সন্তানকে প্রথম বুনিয়াদি শিক্ষা দেন, মানবিকতার প্রথম পাঠ শেখান। সমাজে নারীই কন্যা, বোন, বন্ধু, স্ত্রী, এবং মা হিসেবে এক বিশেষ স্থান অধিকার করেন, যার কোনো বিকল্প নেই।
বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অংশই নারী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় যুগ যুগ ধরেই নারীসমাজ অবহেলিত, শোষিত ও নিযার্যিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক কুসংস্কার, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বেড়াজালে নারীদের সর্বদা রাখা হয়েছে অবদমিত। নারী
শুধু একজন মানুষ নয়, তিনি এক সত্তা, এক শক্তি, এক অনুপ্রেরণা, এবং জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে তিনি আলোকবর্তিকা। তার ভেতরে রয়েছে স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা, এবং সহানুভূতির এক অজানা ভাণ্ডার। পরিবার ও সমাজে তার ভূমিকা অপরিসীম। পূর্বে নারীদের মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও দেশ গঠনে সম্পৃক্ত করা হয়নি বলে নারীরা ছিলো পিছিয়ে পড়া জাতির কাতারে। বিশ্বের সমস্ত কল্যাণ-অকল্যাণ সবেতেই নারী পুরুষের ভূমিকা আছে। একটা সময় নারীকে প্রেমের, পূজার, ভক্তির দেবীর
লতা-পাতা ফুলের আসনে আসীন করতেন, সমাজে নারী ছিলো কেবল ভোগ ও বঞ্চনার বস্তু, নারীকে মানুষের মর্যাদা দেয়া হতো না। নারী মানে শুধুই তার শারীরিক সত্তা নয়। তার মন, অনুভূতি, চিন্তা, ও সৃজনশীলতা একজন নারী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে পারে। যদি তাকে তার সমান সুযোগ এবং সম্মান দেওয়া হয়। নারীকে মানুষ হিসেবে তার চিন্তা, তার সাহস, তার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে আমরা এক নতুন পৃথিবীর আলোর সন্ধান পাই। নারীর শক্তিকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোই হবে তার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। নারীর পদচারণায় মুখরিত হোক রাজপথ।।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn