
ডাল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মানববন্ধন করেন চাকরিচ্যুত কর্মচারীরা
বাংলাদেশের প্রখ্যাত বীমাবিদ ও এ্যাকচ্যুয়ারী জনাব শাফাত আহম্মেদ চৌধুরী ১৯৮৫ সালে কিছু স্বনামধন্য প্রবাসী উদ্যোক্ত নিয়ে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিঃ গঠন করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে কোম্পানীটি বীমা খাতে বিরটি সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু জনাব শাফাত আহম্মেদ চৌধুরী এর অকাল মৃত্যুর পর বিভিন্ন চরাই উৎরাই পার করে ২০১২ সাল থেকে অদ্যাবদি ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিভিন্ন দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়ম চলে আসছে। উক্ত অনিয়মের অভিযোগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। প্রশাসকগণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত্রের জন্য কয়েকটি অডিট ফার্মকে নিয়োগ দেন। তবে, অডিটি চলাকালীন সময়ে কোম্পানির আইটি বিভাগের দুইজন কর্মকর্তা বীমা গ্রাহকের ডাটা আপডেট এবং ডিলিট করে কোটি কোটি টাকার হিসাব কম্পিউটার সার্ভার থেকে মুছে ফেলেন। তদন্তে এই ডাটা ডিলিটের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় আইডিআরএ’র একজন কর্মকর্তা, জনাব ইমদাদ হোসেন বাদী হয়ে গুলশান থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় একটি মামলা দায়ের করেন উক্ত মাফলা নাম্বর ১০ এবং জাল জালিয়াতি ও প্রতারনামূলক ভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ডেল্টা লাইফের একজন সম্মানীত শেয়ার হোল্ডার জনাব মানিক রতন চাকমা বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উক্ত মামলা নাম্বার ৩৩ (এই বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আসামীদের। দ্রুত গ্রেফতারের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি)।
এদিকে, ডেল্টা লাইফের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ আইডিআরএ’র বিরুদ্ধে প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা করে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে। তবে আপিল বিভাগে উক্ত রিট আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং মঞ্জুরুর রহমান পরিবারের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে বোর্ড গঠন করা হয়, যার নামকরণ করা হয় “সমঝোতা বোর্ড।
ডেল্টা লাইফের বর্তমান পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার এবং অন্যান্য পরিচালকগন মিলে, প্রশাসকের অধীনে পরিচালনাধীন অবস্থায়, যে সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারী ডেল্টা লাইফের পক্ষে এবং আইডিআর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অডিটরদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাদের মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ১০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শ্রম আইনের ২৬ ঘারায় চাকরিচ্যুত করে এবং জোরপূর্বক চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেন। কোম্পানি দেওলিয়া না হলেও, নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত কর হচ্ছে এবং নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। যদিও “সমঝোতা বোর্ড” কথ্য দিয়েছিল যে কোনো কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে হয়রানি মূলক বদলি বা চাকুরিচ্যুত করবে না। এই ক্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করি এবং সেই অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হইতে এই ব্যপারে তদন্ত পূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ০২/১০/২০২৪ ইং তারিখ অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পত্র প্রেরণ করেন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইডিআরকে ১৫/১০/২০২৪ ইং তারিখে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করেন। এখনও পর্যন্ত আইডিআরএ সে ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
আমরা জানি, ১৩ মে, ২০১৭ সালে বহুল প্রচলিত জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক সমকাল”-এ তৎকালীন পূবালী ব্যাংকের পরিচালক জনাব মজুরুর রহমান এর বিরুদ্ধে একটি সত্য সংবাদ প্রকাশ হয়েছিলো। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে জনাব মঞ্জুরুর রহমান উক্ত সংবাদটি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিদান স্বরুপ সমকালের মালিক জনাব একে আজাদ এর পুত্র সাকিব আজাদকে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোঃ লিঃ এর সমঝোতার বোর্ড এর একজন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমানে, ডেল্টা লাইফের চেনারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার, যিনি আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের এমপি, কোনো শেয়ারের মালিক না হয়েও চেয়ারম্যান পদে আসীন হন। একইভাবে, জনাব ফিদা এম কামাল মহামান্য আদালতের নির্দেশে সমঝোতা বোর্ডের দুর্নীতি এবং আর্থিক অনিয়মের অডিট করতে গিয়ে ডেলুটা লাইফের একজন পরিচালক হয়ে যান।
আইন অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের ২ জনের অধিক পরিচালক থাকতে পারবে না এবং তাদের কাছে ১০০% এর বেশি শেয়ার থাকা যাবে না। আইন ভঙ্গ করে, জনাব মঞ্জুরুর রহমান ডেল্টা লাইফে নিজ পরিবারের ৫ জন সদস্যকে পরিচালক হিসেবে দেখিয়ে কোম্পানীর পরিচালন পর্যনকে “পরিবার কোড” হিসেবে গঠন করেছেন, যার ফলে আওয়ামীলীগ পত্নী কিছু ক্ষমতাধর লোকজন এখানে পরিচালক হিসেবে ওসে কিছুদিন বিলাসিতা করেন এবং চলে যান। যখনই নতুন পরিচালকগন আসেন, তখনই কিছু সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা (উত্তম কুমার সানু, আনোয়ারুল হক, মিন্টন বেপারী, আসাদুজ্জামান মল্লিক, মাকসুদ, পল্লব ভৌমিক ও কাজী এহতেশাম ফয়সাল) তাদের অপকর্ম আড়াল করতে নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে।
এছাড়াও আমরা ইতিমধ্যে বিচারের দাবিতে, অর্থ মন্ত্রণালয়, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ ও আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ক্যাবের স্মারকলিপি প্রদান করেছি। এখন পর্যন্ত উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
আরোও উল্লেখ্য যে, ডেল্টা লাইফের সাবেক ও পূবালী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান মঞ্জুরুর রহমান এবং ডেল্টা লাইফের বর্তমান ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব হাফিজ আহম্মেদ মজুমদার এর বিরুদ্ধে স্বনামধন্য পূরুলী বাহক লিঃ পিএলসিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ০৫/০২/২০২৫ ইং তারিখ থেকে বিভিন্ন সৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে উক্ত প্রতিবেদনগুলোতেও ডেল্টা লাইফের জাল জালিয়াতি ও প্রতারনামূলক ভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রমান পাওয়া গিয়েছে বলে উল্লেখ আছে। এই ব্যাপারে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং দুদক তদন্ত শেষে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া চলমান।
ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সর্বোচ্চ মঙ্গলের জন্য, শেয়ারহোল্ডার, বীমাগ্রাহক, এবং চাকুরীচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করে, ডেলুটা লাইফের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কোম্পানির মূল পৃষ্ঠপোষক পরিচালকদের নিয়ে একটি নতুন নিরপেক্ষ পরিচালনা পর্ষদ গঠন এবং অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের কথা বিবেচনা কারে পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহাল করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোঃ ইউনুস স্যারের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।