মঙ্গলবার - ২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৮শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

উপকূলের জ্বালানী সংকট: সুন্দরবনের পাতা কুড়ানোর সংগ্রাম

উপকূলের জ্বালানী সংকট: সুন্দরবনের পাতা কুড়ানোর সংগ্রাম

 

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামে সত্তরের কোঠায় থাকা তরী বালা প্রতিদিনের মত বনের পাতা কুড়াতে দেখা যায়। তাদের ছয় জনের সংসারে মালঞ্চ নদীর থেকে পাতা কুড়িয়ে চলে সারা বছরের জ্বালানী।

তরী বালা বলেন, ‘আমাগো এছাড়া উপায় নেই। এই বনের পাতা জ্বলালি আমাগো হাড়ি জ্বলে।’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলো বিশেষ করে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলে জ্বালানী সংকট অব্যাহত রয়েছে। এই সংকটের ফলে হাজারও পরিবার জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরবনের পাতা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। উপকূলের আরেক বৃদ্ধা, হিরা বেগম, আক্ষেপ করে বলেন, ‘বনে গিলি ফরেষ্টাররা ধরে মামলা দেয়, আইলা’র পর থেকে গোটা এলাকা যেন বিরাভূমি।

একটু জ্বালানীর জন্যি তাই আমরা পানিতে ভেসে আসা পাতা কুড়া”িছ।’ পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারী আরও বলেন, ‘আমাগা কোন আয় নি। এলাকায় এটটা বড় লোকের বাড়ি নি, টাউন বন্দর নি, আমারা খাবো কি, চলবো কেমবায় (কিভাবে)।’ হিরা বেগমের মত আরও অনেক পরিবারই নদীতে ভেসে আসা পাতা কুড়িয়ে সংসার চালা”েছ। পশ্চিম কৈখালী গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, ‘কুড়ানো পাতা মুলত তারা জ্বালানীর কাজে ব্যবহার করে।

আবার অসংখ্য মানুষ নদীতে ভেসে আসা এসব পাতা কুড়িয়ে নিয়ে শুকিয়ে বিক্রি করে সংসারের খরচ যোগা”েছ।’ এদিকে, সুন্দরবন তীরবর্তী গ্রামবাসীদের মতে, আইলার পর থেকে প্রায় গাছ-গাছালি শুন্য হওয়ায় এলাকায় তীব্র জ্বলানী সংকট দেখা দিয়েছে। ধনী পরিবারগুলো শহরাঞ্চল থেকে জ্বালানী ক্রয় করে প্রয়োজন মেটায়, কিš‘ সাধারণ মানুষদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘সুন্দরবনের পাতা, ফুল ও ফল সাধারণত সেখানকার প্রাণী ও মাছদের খাদ্য।

তাছাড়া অনেক সময় জোয়ারের পানিতে ভেসে সেগুলো বিভিন্ন চরে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে বনভুমির সৃষ্টি করে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জ্বালানীর জন্য অবশ্যই উপকূলবাসীকে বিকল্প ব্যব¯’ার চিন্তা করতে হবে।’ উপকূলবাসীরা প্রশাসনের কাছে পাতা সংগ্রহের জন্য অনুমতির দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা নির্বিঘ্নে জীবন ধারণ করতে পারেন। তাদের ভয়, পাতা সংগ্রহের কাজ বন্ধ হলে জীবন চালানো তাদের আরও কঠিন হয়ে যাবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn