শুক্রবার - ২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২রা মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালা

ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালা

 

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ১১ টায় কৃষ সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চল খুলনা অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন পরিচালক(অবঃ), প্রশাসন ও অর্থ উইং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার কাজী আব্দুল মান্নান,
নোট স্পিকার একল্প পরিচালক, ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প,প্রকল্প পরিচালক ফজলুল হক মনি, প্রমুখ। বক্তব্য বক্তরা বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুলনা অঞ্চলের কৃষি ও কৃষিজীবী মানুষের জীবন জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি, দুর্বল পোল্ডার ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে কৃষি জমিতে লবণাক্ত পানির প্রবেশ, সেচ ও নিষ্কাশনের অপ্রতুলতা, মানসম্মত কৃষি উপকরণের অভাব, কৃষি শ্রমিকের অভাব, শুকনো মৌসুমে মাটি ও পানির লবণাক্ততার কারণে অনেক জমি পতিত থাকে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে খুলনা কৃষি অঞ্চলে “ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প” গ্রহনের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রকল্পটি ৩১/১০/২০২১ তারিখে ৪৯.৭১ কোটি টাকায় বাস্তবায়নে মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরে কার্যক্রম শুরু করে। প্রকল্পটি খুলনা অঞ্চলের ০৪ টি জেলার (নড়াইল, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট) ২৮টি উপজেলা ও ২টি মেট্রো অফিসে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রবি ও খরিপ মৌসুমে মোট চাষযোগ্য জমির এক-চতুর্থাংশ পতিত থাকে। এসব সমস্যা সমাধানে রিলে ফসল, মিশ্র ফসল, আন্তঃফসল, পলি-মালচ পদ্ধতি, সর্জন পদ্ধতি, ড্রিপ সেচ প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

প্রকল্পটি দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, ভুমির সর্বোত্তম ব্যবহার, ইফিসিয়েন্ট মেকানাইজেশনের, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফসল উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর কাজ করেছে যা উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ কৃষকদের স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলেছে। তারা বাজার বিশ্লেষণ, প্রাথমিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের মুনাফার পরিমাণও বৃদ্ধি করেছে এবং উল্লেখযোগ্য উৎপাদনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য খরচ সাশ্রয় করেছে। ফলস্বরূপ, প্রযুক্তির কল্যানে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে কৃষকগন খাপ খাওয়াতে সক্ষম হচ্ছে এবং বছরের পর বছর পতিত থাকা জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে, যা টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে।

এছাড়াও সেচের মিষ্টি পানির উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে অনেক সময় কৃষক জমি পতিত রাখত। প্রকল্পের মাধ্যমে মিনি পুকুর খনন, বরো পিট খননের ফলে এক ফসলি জমি দুই ফসলি জমিতে রুপান্তরিত হয়েছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দূরীভূত করে জমির জো অবস্থা আনয়নের মাধ্যমে ফসলি জমি বৃদ্ধিতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করছে। সূর্যমূখী এক্সপেলার মেশিন সরবরাহের ফলে এ অঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোকোনাট ক্লাইম্বারের মাধ্যমে নারিকেল গাছে আরোহণ ও পরিচর্যা সহজতর হয়েছে।

প্রকল্প এলাকায় অভিঘাত সহনশীল মাঠ ফসল সম্প্রসারণ, স্বল্প পানির চাহিদা সম্পন্ন ফসলের আবাদ বৃদ্ধি, ঘেরের পাড়ে আগাম উচ্চমূল্যের ফসল চাষ, অফ সিজন তরমুজ, সুর্যমূখী, গ্রীষ্মকালীন সীম, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ইত্যাদির চাষাবাদ সম্প্রসারণ, স্থানীয় ফসলের জাতগুলোর উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রায়োগিক কার্যক্রম গ্রহণ এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে পতিত জমির সুষ্ঠু ব্যবহারসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষম কৃষি প্রযুক্তিগুলো সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn