
তেঁতুলিয়ায় কাল বৈশাখের ঝড়ে বসতবাড়ি হারানো হতদরিদ্র দম্পতির শিশু সহ ঈদ উৎব থেকে বঞ্চিত
ঈদের আনন্দে যখন দেশজুড়ে প্রতিটি ঘর আলোয় ঝলমল, তখন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের এক কোণে ঈদের দিনটিও কেটে যাচ্ছে ঘরবাঙ্গা শিশুসহ এক দম্পতির। হঠাৎ ঝড়ে ঘর হারিয়ে প্রায় এক মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আব্দুল বাসেদ (৬০) ও তার স্ত্রী বাসিরন বেগম শিশু সহ। আজও মেলেনি সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা কিংবা আশ্রয়ের ব্যবস্থা। এমনকি ঈদে নতুন জামা কাপড়, সেমাই চিনি ক্রয় করার সমর্থ্য নেই।এতে ঈদের আনন্দে থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
গত ১১ মে’র হঠাৎ ঝড়েে তাদের একমাত্র ঘরটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। তখন থেকেই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। স্থানীয় কিছু যুবকের সহায়তায় ভাঙা টিন ও বাঁশ দিয়ে বানানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি, যা সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই অকার্যকর হয়ে পড়ে। নেই নিরাপত্তা, নেই খাদ্য। ঈদের আগের দিনেও তাদের ঘরে একমুঠো চাল, ডাল, তেল কিংবা লবণ পর্যন্ত নেই।
আব্দুল বাসেদ এক সময় পাথরভাঙার শ্রমিক ছিলেন। বার্ধক্যে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। স্ত্রী বাসিরনের সামান্য রোজগারেই চলত সংসার। এখন দুজনই ঘরবিহীন ও খাদ্যবঞ্চিত।
আব্দুল বাসেদ বলেন,”ঘর ভেঙে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে আছি। ভিজে ঘুমাই, খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই। অনেকবার উপজেলা পরিষদে গিয়ে বলেছি, কেউ সহায়তা দেয়নি। ঈদের দিনেও মনে হয় না কিছু খেতে পারবো।”
বাসিরন বেগম বলেন,”স্বামী অসুস্থ, আমি কিছুই করতে পারি না। ঈদের দিনে খালি হাতে বসে থাকতে হবে ভাবতেও কষ্ট হয়। একটু সহযোগিতা পেলে হয়তো মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলামের দায়িত্বে গাফিলতির কারণে বহু ত্রাণসামগ্রী পড়ে রয়েছে বিতরণের অপেক্ষায়। অফিসে অনিয়মিত উপস্থিতি ও অগ্রাধিকারহীনতার কারণে সংকটে থাকা পরিবারগুলো ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, কাবিখা, টিআর, কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে প্রকৃত কাজ না করেই মোটা অঙ্কের বিল উত্তোলন করা হয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শুকনো খাবার ক্রয়ের জন্য কয়েক লক্ষ টাকার বরাদ্দ এলেও বিতরনের সময় অতিবাহিত হলেও সেগুলো এখনো কেনা হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম বলেন,এটি আমাদের আগে জানা ছিল না। গত সপ্তাহে আমরা যখন জানছি তখন ইউএনও স্যারসহ যাওয়ার কথা ছিল৷ পরে ইউএনও স্যারও বললো আগে দেবনগড়ের কাজটা শেষ করি। পরে ওখানে গিয়ে ব্যবস্থা নিবো৷ পরে রাত হওয়াতে আর যাওয়া হয়নি৷ আশা করি ঈদের পর এসে,চেয়ারম্যানও কাগজপত্র অবশ্য দিয়েছে৷ যে দৌড়াদৌড়ি চলতেছে সেসময়তে সেখানে যাওয়া সময় হয়নি৷
এবিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, তাকে আমরা টিন দিবো, টাকাও দিবো। পিআইও সাহেব দেখতে যেতে চেয়েছেন মাঝে পরে ভুলে গেছেন। এ কারনে আর দেয়া হয়নি৷ তবে আমরা তাকে সহযোগীতা করবো৷
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই একসঙ্গে ভাগাভাগি করে খুশি উদ্যাপন। কিন্তু দর্জিপাড়ার এই দম্পতির কাছে ঈদ মানে কেবলই বেঁচে থাকার সংগ্রাম।