শনিবার - ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

“শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মনোমালিন্যের অজানা অধ্যায়”
-মো. কামাল উদ্দিন
শেখ হাসিনা ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক এক সময় সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। কিন্তু সময়ের প্রবাহে সেই সম্পর্ক কখন যে মতবিরোধে পরিণত হলো, তা অনেকে বুঝতেই পারেননি। দ্বন্দ্বের সূচনা হয়েছিল মতের পার্থক্য থেকে, যা ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত বিরোধে রূপ নেয়। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ যখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গড়ায়, তখন সেটি শুধু দুজন ব্যক্তির মধ্যকার বিরোধ থাকে না, বরং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধও এমন এক নজির হয়ে উঠেছে। এই মতবিরোধের শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, যার প্রতিফলন আমরা দেখেছি রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে, ব্যবসায়িক ও আর্থিক খাতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির উত্থান-পতনে। এই বিরোধের ফলে শুধু একজন ব্যক্তির মর্যাদাই ক্ষুণ্ন হয়নি, বরং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিও সংকটে পড়েছে। আজ, এই দ্বন্দ্বের শেষ পরিণতি হলো শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানো এবং দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া। ইতিহাস একদিন এই অধ্যায়কে শুধু রাজনৈতিক সংকট হিসেবে দেখবে না, বরং দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির সম্পর্কের করুণ পরিণতির সাক্ষী হিসেবেও বিবেচনা করবে। এই লেখাটি সেই অজানা অধ্যায়ের একটি চিত্র তুলে ধরতে চায়, যেখানে শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূসের বিরোধের সূচনা থেকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিতর্ক
প্রতি বছর নরওয়ের নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যা প্রশ্নের জন্ম দেয়—তারা কি সত্যিই বিশ্বশান্তির উপযুক্ত বিচারক? ২০০৬ সালে, যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার পান, তখন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ওলে ড্যানবোল্ট, যিনি নরওয়ের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কাসি কুলম্যান ফাইভ, যিনি মার্কিনপন্থী কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য এবং ব্যবসায়ী। ২০০৭ সালে তিনিই সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর এবং ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কমিটির আরও দুই সদস্য ছিলেন সিসেল রনবেক ও ইঙ্গার ম্যারি ইটারহর্ন, যারা নরওয়ের সোশ্যালিস্ট লেফট পার্টি ও প্রগ্রেস পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন। এদের পেশাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে—বিশ্বশান্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা কতটুকু? নরওয়ের বুদ্ধিজীবী সমাজের কেউ না থাকায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে, নরওয়েজিয়ান নোবেল ইনস্টিটিউট এই কমিটিকে পুরস্কার নির্ধারণে সহায়তা করে। ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান গ্যের লুন্ডস্ট্যাড একজন ঐতিহাসিক, যার গবেষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ওলাভ নোলস্ট্যাড, দ্যাগ কুল গোটোভ্যাক—যারা মূলত পশ্চিমা বিশ্বের রাজনীতিতে অভ্যস্ত, কিন্তু আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।
এই বিতর্কই প্রমাণ করে যে, শান্তি পুরস্কারের সিদ্ধান্ত একাধিকবার রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কারও এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে দেখা যেতে পারে, যা শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের অন্যতম একটি কারণ হয়ে উঠেছিল।
নোবেল শান্তি পুরস্কার: বিতর্ক ও বাস্তবতা সিগরিড ল্যাঞ্জব্রেক, অ্যানি সেসিল জেলিং, টোরিল জোহানসেন এবং বর্ণ হেলগে ভ্যাঞ্জেন—এরা কেউই বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত নন। গুগল বা উইকিপিডিয়ায় খুঁজলেও এদের সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবু এই অখ্যাত রাজনীতিকরাই নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নির্ধারণ করেন। বিষয়টি অনেকের কাছেই অবাক করা মনে হতে পারে। যদি নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রবর্তক আলফ্রেড নোবেল জানতেন যে তার নামে আজ কিছু অজানা রাজনীতিবিদ যুদ্ধবাজ শাসক ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করছেন, তবে তিনি হয়তো লজ্জিত হতেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের দিকে তাকানো যায়১. বারাক ওবামার নোবেল (২০০9)
২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে “বিশ্ব কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অসাধারণ অবদানের জন্য” নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু এটি কি সত্যিই তার প্রাপ্য ছিল? ওবামা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসেন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি এমন কী অর্জন করলেন যার জন্য তাকে নোবেল দেওয়া হলো? পরে দেখা গেল, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, লিবিয়ায় সামরিক হামলা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ড্রোন হামলার মতো পদক্ষেপের কারণে ওবামার শান্তি প্রতিষ্ঠার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।
২. আনোয়ার সাদাত ও মেনাহেম বেগিন (১৯৭৯) মিশরের আনোয়ার সাদাত এবং ইসরায়েলের মেনাহেম বেগিনকে ১৯৭৯ সালে শান্তিচুক্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু জানা যায়, দুজনেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন। তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মাপকাঠি কীভাবে নির্ধারিত হয়?
৩. হেনরি কিসিঞ্জার (১৯৭৩) হেনরি কিসিঞ্জারকে ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। অথচ কিসিঞ্জার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে দমন করার চেষ্টায় যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে “তলাবিহীন ঝুড়ি” বলে অবজ্ঞা করেছিলেন, আর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। কম্বোডিয়ায় বোমাবর্ষণ এবং দক্ষিণ আমেরিকায় সামরিক স্বৈরতন্ত্র সমর্থনের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। তাহলে কি সত্যিই তিনি শান্তির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন?
৪. ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ক্ষুদ্রঋণের বিতর্ক (২০০৬)
২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল কমিটি বলেছিল, এটি নারী ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের একটি অংশ। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ক্ষুদ্রঋণ কি প্রকৃতপক্ষে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক, নাকি এটি একধরনের সুদভিত্তিক ব্যবসা? পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্ষুদ্রঋণের প্রয়োজন হয় না, কারণ তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ভিন্ন। তবে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এটি কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, ঋণের বোঝা বাড়তে থাকায় দরিদ্র পরিবারগুলো আরও আর্থিক সংকটে পড়ে। তাহলে ক্ষুদ্রঋণ কি আসলেই দারিদ্র্য বিমোচনের একটি কার্যকর উপায়, নাকি এটি কেবল আরেকটি ঋণজাল?
নোবেল শান্তি পুরস্কারের অনেক সিদ্ধান্তই বিতর্কিত। রাজনৈতিক বিবেচনা, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রভাবের কারণে অনেক সময় এই পুরস্কার প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আলফ্রেড নোবেলের মূল চেতনার সঙ্গে এসব সিদ্ধান্ত কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
শেখ হাসিনার শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্যতা
দারিদ্র্য বিমোচনের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের দুরবস্থা আরও বাড়িয়ে তোলে। গ্রামীণ ব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সুদের বোঝা দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নিঃস্ব করেছে। বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে, ডেনমার্কের সাংবাদিক টম হেইনম্যানের প্রামাণ্যচিত্র Caught in Microdebt এ ধরনের নিষ্ঠুর বাস্তবতার দলিল তুলে ধরেছে।
যদি সত্যিই ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচিত হতো, তাহলে গ্রামাঞ্চলে আজও এত অভাব-অনটন থাকত না। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ অনেক আগেই শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত হতো। ব্যক্তিগত শান্তি দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তবে রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর সরাসরি ভূমিকা নেই। শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় সংঘর্ষ নিরসনের মাধ্যমে, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শেখ হাসিনার শান্তিচুক্তি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও শেখ হাসিনার অবদান
১৯৭৩-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ও বাঙালি অভিবাসীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদিবাসীদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার স্বীকৃতি দেননি, বরং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে একীভূত করার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা পার্বত্য সমস্যার সমাধানে সাহসিকতা দেখান এবং ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সন্তু লারমার সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে: ৭০,০০০ সশস্ত্র বিদ্রোহী অস্ত্র সমর্পণ করে সেনাবাহিনীর অনেক ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়
কিছু জমি ফেরত দেওয়া হয়
বাঙালি ও আদিবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষ হ্রাস পায়
১৯৭৬-২০১১ সাল পর্যন্ত তথাকথিত দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতির তুলনায়, ১৯৯৭-২০১১ সালে পার্বত্য অঞ্চলে সংঘর্ষ অনেকাংশে কমে যায়।
গঙ্গা পানি চুক্তি: শেখ হাসিনার আরেকটি কৃতিত্ব
শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা পানি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ১৯৮২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ তেমন পানি পেত না, ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খরা দেখা দিত। সেচের অভাবে কৃষকদের দুর্দশা চরমে উঠেছিল। শেখ হাসিনার চুক্তির ফলে কৃষকরা পর্যাপ্ত পানি পেতে শুরু করেন এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এর স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার Ceres Award লাভ করেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার আরও অবদান
বিডিআর বিদ্রোহের সময় রক্তপাত এড়ানো: ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনাবাহিনী প্রতিশোধ নিতে চাইলেও শেখ হাসিনা ধৈর্য ও কৌশলের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেন। এতে সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া: তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান: জাতিসংঘে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর পক্ষে শক্তিশালী বক্তব্য রাখা।

শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চারটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন:
ইউনেস্কোর শান্তি পুরস্কার
ভারতের ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার
মাদার তেরেসা পুরস্কার
নোবেল বিজয়ী পার্ল এস বাক পুরস্কার
অপরদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধুমাত্র একটি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রভাব ও লবিংয়ের ফল বলে অনেকেই মনে করেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার কি যথাযথভাবে প্রদান করা হয়? শান্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধী কখনো নোবেল পুরস্কার পাননি। অথচ বিতর্কিত ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এটি বোঝায় যে নোবেল কমিটি সবসময় নিরপেক্ষ থাকে না। শেখ হাসিনা কখনো নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য লবিং করেননি, কারণ তিনি মুহাম্মদ ইউনূস নন। তাঁর শান্তিচুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দারিদ্র্য বিমোচন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের মতো পদক্ষেপগুলো তাঁকে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য করেছে।
যদি নোবেল শান্তি পুরস্কার সত্যিই যোগ্য ব্যক্তিদের দেওয়া হতো, তাহলে শেখ হাসিনা এবং সন্তু লারমা এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ছিলেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, গঙ্গা পানি চুক্তি, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। তাঁর নীতি অহিংস, কৌশলী ও বাস্তবভিত্তিক।

অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণের নামে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুদের ফাঁদে ফেলেছেন। তাঁর নোবেল প্রাপ্তি ছিল আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের লবিংয়ের ফল।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিতর্কিত হলেও, শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাস্তব অবদান রেখেছেন। তাই যদি কোনো বাংলাদেশি নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য হন, তবে তিনি শেখ হাসিনাই। নিরপেক্ষ মন্তব্য হচ্ছে-
নোবেল শান্তি পুরস্কার বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এটি শুধু গৌরবের বিষয় নয়, বরং এর পেছনে আন্তর্জাতিক কূটনীতি, লবিং এবং বৈশ্বিক স্বার্থ জড়িত থাকে। অনেক যোগ্য ব্যক্তি কখনো এই পুরস্কার পাননি, আবার অনেকে রাজনৈতিক প্রভাব ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের মাধ্যমে এটি অর্জন করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে, তবে এটি নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কও কম নেই। ক্ষুদ্রঋণ যে দারিদ্র্য দূরীকরণে চূড়ান্ত সমাধান নয়, তা অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের উচ্চ সুদের চাপ নিয়েও সমালোচনা রয়েছে।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে একটি দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। যদিও বাস্তবায়ন নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, তবে এই চুক্তির ফলে সংঘাত অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তার সরকারের অন্যান্য শান্তি প্রচেষ্টাও অনেক ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে।
তবে নোবেল পুরস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রকৃত শান্তি ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। কেউ নোবেল শান্তি পুরস্কার পান বা না পান, মূল বিষয় হলো তাদের কাজ ও অর্জন কতটা টেকসই এবং জনকল্যাণমুখী। নোবেল পুরস্কার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রতীক হলেও, প্রকৃত শান্তি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। অতএব, ব্যক্তি বা পুরস্কারের চেয়ে কাজের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান-
দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner,

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn