বৃহস্পতিবার - ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ - ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা পেলেন সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী

২৭ মে, ২০২৩ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘বিদ্রোহী The Nazrul Centre’ কতৃক ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র’এ আয়োজিত ‘নজরুল চেতনায় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, কাজী নজরুল ইসলামের দৌহিত্রী খিলখিল কাজী। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, ‘সুফি ইউনিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি’ এর চেয়ারম্যান শাহ্সুফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী। বিশ্বজুড়ে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তির জন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে বিশেষ সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।

তার বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন মানবতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহান দূত। যে মানুষেরা তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন, কষ্ট দিয়েছে, তার নিজ মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছে, মক্কা বিজয়ের দিন তিনি চাইলে, প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু ক্ষমা ও উদারতার অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তিনি সকলকে ক্ষমা করে দিলেন। বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করলেন। ঐতিহাসিক মদীনা সনদের মাধ্যমে তিনি শান্তি-সম্প্রীতিপূর্ণ, সাম্যের একটি আধুনিক কল্যানরাষ্ট্রের রূপরেখা বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। এর পেছনে অগণিত সুফি সাধকদের অবদান রয়েছে। এখনও আজমির শরীফ, মাইজভাণ্ডার শরীফ, হযরত শাহ্জালাল (রহঃ) সহ বিভিন্ন সুফিদের মাজার শরীফগুলোতে, দরবারগুলোতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাচ্ছেন। তারা সেখানে শান্তি ও প্রেম খুঁজে পাচ্ছেন বলেই যাচ্ছেন। বিশেষত ‘মাইজভাণ্ডারী দর্শন’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি আলোকবর্তিকা হয়ে সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ দূর করে সাম্যের পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।”
সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী আরো বলেন, “আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও ছিলেন একজন সুফিবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ মহামানব৷ ২০ শতকে এ উপমহাদেশ যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সংঘাতে জর্জরিত ছিলো, মানবতার বিপর্যয় ঘটছিলো, উগ্রবাদী অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিলো, তখন তিনি তার লেখনীর তরবারির আঘাতে সকল অশুভ শক্তিকে দমন করেছেন। তার লেখনীতে আমরা মুসলিম, হিন্দু উভয় ধর্মেরই ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মহাপুরুষদের আলোচনা দেখতে পাই। তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলমানদের বিভেদ, দ্বন্দ্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। হতদরিদ্র, কুলি-মজুর, খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিক, সর্বহারা-নির্যাতিত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষেরা, অবহেলিত নারীরা তার রচনার মাধ্যমে অধিকার আদায়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। এদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামে, মহান মুক্তিযুদ্ধেও তার রচনা আমাদেরকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে ও ন্যায়ের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই স্রষ্টার সান্নিধ্য অর্জন হয়। – এ মহাসত্যটি তিনি সফলতার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। মানুষের বন্দনাই ছিলো, তার রচনার মূল উপজীব্য। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনন্য সৃষ্টি, এ সংঘাতময় বিশ্বকে শান্তির নীড়ে রূপান্তর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।”
উদ্বোধক ছিলেন, এ্যাড. সামছুল আলম দুদু এম.পি সদস্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জনাব এম. এ. আউয়াল, সাবেক সংসদ সদস্য ও চেয়ারম্যান, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টির চেয়ারম্যান ফারহানায হক,প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা, কর্ণেল আশরাফ আল দ্বীন, ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুল হাই। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর ডক্টর শহীদ মনজু নির্বাহী পরিচালক, বিদ্রোহী The Nazrul Centre।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn