শীলঘাটা গ্রামের কৃতিসন্তান রত্নপ্রিয় প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র ও শীলঘাটা তরুন সংঘ সহ বহুসংগঠনের সাথে জড়িত মানবতার সেবক বিভিন্ন রক্তদান কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে অল্প বয়সে সবার প্রিয়ভাজন মানবতাবাদী তাপস বড়ুয়া । গত ১ এপ্রিল ২০২৩ ইং এক বন্ধুর মৃত্যুতে তাকে দেখে পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে মিরসরাই থেকে চট্রগ্রাম আসার পথে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে মারাত্মক ভাবে আহত অবস্থায় ট্রিটমেন্ট হাসপাতাল চিকিৎসা পরে চট্রগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পরও বহুপ্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে আজ সকালে অনিত্যজগতের মহা সত্য মৃত্যুকে বরণ করেন স্নেহের প্রিয় তাপস ।
ছোটবেলায় অত্যন্ত মেধাবী ছিল, মাঝ পথে খেয়ালীমন ও আর্থিক সমস্যা কারণে দশম শ্রেনীতে লেখাপড়া করার সময় চট্রগ্রাম শহরে এসে গার্মেন্টস এর চাকরী শুরু করেন কিন্তু এক বছর পরে চৈতন্য উদয় হয় অপরে এস এস সি পাশ সার্টিফিকেট নিয়ে কেন চাকুরী করবো ? আমি আবার লেখাপড়া শুরু করবো , বাবা মা ও বড় বোন কে বলল আমি আবার লেখাপড়া শুরু করবো তোমরা টাকা দাও নয়তো আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাবো । তারা ৪ বোন ১ ভাই , সে সবার আদরের। তার বাবার নাম আদিত্য বড়ুয়া মাতা টকি বড়ুয়া ,তারা দুইজনে অত্যন্ত সহজ সরল বিনয়ী, দারিদ্র সাথে যুদ্ধ করে জীবন অতিবাহিত করলেও মায়ের স্বপ্ন ছিল আমার ছেলে অধ্যক্ষ ড অর্থদর্শী বড়ুয়া , ওসি রনজিত বড়ুয়া অনাদি বড়ুয়া র মতো শিক্ষিত হবেন ।প্রায় সময় ছেলেকে এই কথা বলতেন । আবার লেখাপড়ার আগ্রহ দেখে মা অত্যন্ত খুশি হলেন এবং মেয়েদের বলল তোমরা চাকুরী করে হলেও আমার ছেলেকে লেখাপড়া করাতে হবে । দুই বোন গার্মেন্টস চাকুরী করে ভাই কে লেখাপড়া করার দায়িত্ব নিল সে নতুন করে ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়ে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শুরু করল এস এস সি পাস এবং কৃতিত্বের সাথে ডিপ্লোমা শেষ করে কয়েক মাস আগে মাসিক কিস্তিরে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ভাইকে বিএসসি ভর্তি করলো । মায়ের স্বপ্ন ছেলে অনেক বড় একজন শিক্ষিত মানুষ হবেন , জীবনের সমস্ত দুঃখ অপনোদন হবে , ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছিল মায়ের আশা পূর্ণ্যতার লক্ষ্যে , সাথে সমাজিক কর্মকান্ড সাথে জড়িত হয়ে কোভিড ১৯ করোনা কালীন সময় জীবনে মায়া ত্যাগ করে মানবতা কাজে নিজেকে নিবেদিত করেছেন । রক্তদান , বস্ত্রদান সহ বহুবিদ মানবিক কর্মে সম্পৃক্ত থাকতো এই প্রিয় তাপস । সিলেটে বন্যার সময়ে মানবিক সাহায্য নিয়ে সিলেট গিয়ে অনেক কাজ করেছিল । মানবিক সামাজিক কাজ করতে গিয়ে বৌদ্ধ , মুসলিম ,হিন্দু, খৃষ্টান সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠে । রাতদুপুর যখন তখন বন্ধুদের আহবানে ছুটে যেত । গত ১ তারিখও এক বন্ধুর মৃত্যুতে তাকে দেখে ফেরার পথে ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কে রাত ৯/১০ টার সময় মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে মারাত্মক ভাবে আহত হয় বলে জানা যায় , তার সাথে থাকা মোটরসাইকেলের চালক তার বন্ধুটা তাকে নিয়ে আসে চ্ট্রগ্রামে । কিন্ত চালকবন্ধু এক্সিডেন্টে তেমন কিছু হয় নাই, তার কথা অনুসারে তাপসের এক্সিডেন্টের কথা বিশ্বাস করতে হচ্ছে ।
বাইক তথা মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে তাপসের মতো অনেক তরুণ মেধাবী সন্তান কে হারিয়েছি , সন্তানকে নিয়ে মা বাবা র অনেক স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে । ব্যাথিত হয়েছে জ্ঞাতী,সমাজ , রাষ্ট্র হারিয়েছে সম্পদ ।
তাই আমি তরুণ সমাজকে বলবো আমাদের সচেতন হতে হবে । সংগঠক , মানবিকতার কাজ করলেও নিজের প্রতি সচেতন হতে হবে । বাইক চালানোর সময় সাবধান হতে হবে , অপ্রয়োজনে ব্যবহার পরিত্যাগ করতে হবে ।কারণ মা বাবা , ভাইবোনদের প্রতিও আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে । সেই দায়িত্ব চিন্তা করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে । কর্মের বিচিত্রময়তায় আজ আমরা একজন উজ্জ্বল তরুণ প্রজন্মকে হারিয়ে , ভেঙ্গেছে তার মায়ের স্বপ্ন , অসহায় হয়েছে পরিবার । ব্যাথিত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ । হাজার মানুষের আর্থিক , কায়িক, বাচনিক, মানসিক সর্বদিক সহযোগিতা তাকে শেষ রক্ষা করতে পারে নাই কর্মের অঘোম নিয়মে চলে যেতে হলো এই তো অসহায় জীবন , সব হারাতে হয় জীবনের নিয়মে , প্রিয় মানবতাবাদী তাপস বড়ুয়াও তার বাহিরে নয় , এই সত্যকে মেনে নিয়ে আমাদের পথচলা …।
ভালো থেকো , নির্বাণ লাভ করো এই কামনায় পুণ্যদান করছি ।
সূত্র: এস. লোকজিৎ মহাথেরো’র ফেইসবুক থেকে…