৪৫ দিন পর টিন ও নগদ সহায়তা পেলেন সেই দম্পতি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার হঠাৎ ঝড়ে বসবাসের একমাত্র ঘর হারিয়ে দিশাহারা গৃহ হীন আব্দুল বাছেত।
দীর্ঘ দেড় মাস কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। দর্জিপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ পাথর শ্রমিক আব্দুল বাসেদ ও তার স্ত্রী বাসিরন। ঈদের মতো বড় উৎসবও কেটেছে তাদের না খেয়ে, খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি ভাঙাচুরা টিনের চালায়।
অবশেষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রশাসন ৷ দীর্ঘ দেড় মাস পর সেই অসহায় দম্পতিকে ডেকে দেয়া হল ঢেউটিন ও ৬ হাজার টাকার চেক।
জানা যায়, গত ১১ মে’র হঠাৎ ঝড়ে তাদের ঘর সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে যায়। বার্ধক্য ও কর্মহীনতার কারণে সংসার চালানোই যেখানে দায়, সেখানে আশ্রয় হারিয়ে চরম দুরবস্থায় পড়েন আব্দুল বাসেদ। স্থানীয়দের সহায়তায় কিছু ভাঙা টিন ও বাঁশ জোগাড় করে একটি অস্থায়ী ছাউনি বানানো হলেও তা ছিল ঝড়-বৃষ্টিতে একেবারেই অরক্ষিত। ঘুম ভাঙত আতঙ্কে, ভিজে যেত সবকিছু।
কিন্তু এতো অসহায়ত্বের পরও সরকারি কোনো সহায়তা পাননি তারা। পিআইও মাইদুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও এতোদিন বঞ্চিত ছিলেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার থেকে শুকনো খাবার, ঢেউটিনসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ আসলেও তা যথাসময়ে বিতরণ না হওয়ায় অনেকেই তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রায় ৬ লক্ষ টাকার ত্রাণসামগ্রীর টাকা ব্যাংক একাউন্টে পড়ে থাকে৷
প্রশ্ন উঠেছে পিআইও কার্যালয়ের দায়িত্ব পালনের প্রতি এই উদাসীনতা ও গাফিলতি কেন?, নিয়মিত অফিস করেন না তিনি। কেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও দেড় মাস অপেক্ষা করতে হলো এক অসহায় পরিবারকে?
স্থানীয়রা জানান, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনেক সময় কর্মকর্তাদের অবহেলায় এসব পরিবারগুলো সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। মিডিয়ায় খবর না এলে হয়তো এই পরিবারটিও কোনোদিন কিছু পেত না।”
অবশেষে সংবাদ প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ নড়ে চড়ে বসে এবং দম্পতিকে ডেকে কিছু ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল বাসেদ বলেন, “এতোদিন কেউ খোঁজ নেয়নি। ঈদও করলাম না খেয়ে। আজ মিডিয়ার খবরের পর যা পেলাম, তাই-ই অনেক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলাম শাহ বলেন, “আজকে বাসেদ দম্পতিকে ২ বাট টিন ও ৬ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে৷” তবে শুকনো খাবার ক্রয় ও বরাদ্দের টাকা উত্তোলন হয়েছে কি-না এবিষয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি অফিসে আসার কথা বলে ফোন কেটে দেন৷
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “পিআইও সাহেব উপস্থিত থেকে বিতরণ করেছে ৷ আমরা এর পর থেকে চেষ্টা করবো যথাসময়ে এগুলো বিতরণ করার। শুকনো খাবার কেনা হয়েছে, এগুলো গরীবের মাঝে দেখে শুনে বিতরণ করা হবে৷”