
১৫ বছর ডায়ালাইসিস করছে ভুয়া চিকিৎসক
কুমিল্লা স্বাচিপ সভাপতি ডা. বাকি আনিছের মালিকানাধীন মুন হসপিটালের ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। পনেরো বছর ধরে তিনি এ হাসপাতালে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস করছেন। অথচ তিনি একজন ভুয়া টেকনিশিয়ান। তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ নেই। এরই মধ্যে তার অপচিকিৎসায় কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক সময় একটি বেসরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ছিলেন সাইফুল।
সাইফুল ইসলাম
অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে পারেননি। অথচ তিনিই এখন নগরীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাসপাতালের চিকিৎসক।
আওয়ামী লীগ আমলে কুমিল্লার স্বাস্থ্য বিভাগকে আঙুলের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করেছেন ডা. বাকি। তার হাসপাতালে পনেরো বছর ধরে কিডনি রোগের চিকিৎসা ও ডায়ালাইসিস করছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি অস্থায়ী ক্যাথেটার লাগিয়ে নেন ১৫ হাজার টাকা এবং স্থায়ী ক্যাথেটারে নেন ৩০ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার টাকা এ )
রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী কিডনি রোগীদের ভাসকুলার সার্জন দ্বারা ক্যাথেটার করতে হয়। কিন্তু সাইফুল ও তার সহযোগীরাই এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা রোগীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অভিজ্ঞতা ছাড়া ক্যাথেটার করার কারণে একবারের জায়গায় ৩-৪ বার তা করতে হচ্ছে। কারো কারো পায়ে ও গলায় একাধিকবার ক্যাথেটার করে ইচ্ছামতো টাকা নিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, সাইফুল এক সময় রাজধানীর গ্রিন রোডের রিলায়েন্স জেনারেল অ্যান্ড রেনাল হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় হিসাবে চাকরি করতেন। সেখানে এক রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে চাকরি হারান।
রিলায়েন্স হসপিটালের টেকনিক্যাল ইনচার্জ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস শান্ত বলেন, সাইফুল ইসলাম আমার অধীনে ওয়ার্ড বয় হিসাবে চাকরি করতেন। কুমিল্লায় গিয়ে কিভাবে ডায়ালাইসিস বিভাগের ইনচার্জ হলেন তা বোধগম্য নয়। সে লেখাপড়া জানে না। বর্তমানে নাকি সে কয়েক কোটি টাকার মালিক।
মুন হসপিটালের ডা. বাবলু কুমার পালের এসিস্ট্যান্ট রাকিব হাসান বলেন, সাইফুল ইসলামকে আমরা কিডনি ডায়ালাইসিসে অভিজ্ঞ হিসাবেই জানি। তিনি ক্যাথেটার থেকে শুরু করে কিডনির ডায়ালাইসিসসহ সব চিকিৎসাই করে থাকেন।
বুড়িচং উপজেলার কংশনগর এলাকার আব্দুল জলিলের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বলেন, দুই বছর মুন হসপিটালে আমার স্বামীকে কিডনির ডায়ালাইসিস করিয়েছি। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর জানতে পেরেছি সাইফুল ভুয়া
টেকনোলজিস্ট। তার কোনো সার্টিফিকেট নাই। তার সঙ্গে সিনিয়র সিস্টার ফাতেমাও জড়িত রয়েছে।
চান্দিনা উপজেলার হারং এলাকার বাসিন্দা কিডনি রোগী মো. হাসান বলেন, আমি দুই বছর ধরে সাইফুলের কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন জানতে পারলাম তিনি ভুয়া চিকিৎসক। মুন হসপিটাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে।
লালমাই উপজেলার বেলানগর এলাকার আয়েশা আক্তারের ছেলে খোরশেদ আলম বলেন, সাইফুল ইসলামের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ভুলভাবে ক্যাথেটার পরানোর কারণে আমার মা চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে মা মারা যায়।
অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোনো রোগী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকলে তা সঠিক নয়। আমি এরআগে ঢাকার ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলাম। শিক্ষা সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
ডা. বাকি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুন হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. বাকির ছেলে আফসান আনিছ যুগান্তরকে বলেন, সাইফুল ইসলাম পনেরো বছরে দেখতে দেখতে অনেক কিছুই শিখে ফেলেছেন। তবে আমরা অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়েই কিডনি রোগীদের সেবা প্রদান করে থাকি। তাছাড়া সাইফুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ রয়েছে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সারোয়ার রেজা বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ভুয়া চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।