
সাংবাদিক সাফির মামলা: পুলিশ গ্রেফতার না করায় জামিনে সব আসামি
কুমিল্লায় সাংবাদিক মো. সাফির ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার না হয়েই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন চার অভিযুক্ত। হামলার ঘটনার ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও কোতোয়ালি থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, অভিযুক্তরা হামলার পরও এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করেছেন। এমনকি গত ১৪ জুন রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম নিজে গিয়ে আসামিদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। পুলিশের এমন ধীরগতি ও রহস্যজনক আচরণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ৪ জুন দুপুরে কুমিল্লা দুর্গাপুর গোমতির ভেড়িবাঁধ এলাকায় বুড়িচং প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক সাংবাদিক মো. সাফির ওপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। সাংবাদিক সাফি ওই সময় কুরবানির গরু কেনার উদ্দেশ্যে বাবুবাজার এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দুর্গাপুর এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে জনি, মৃত মনু মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া, মাহবুব এবং মাহবুবের ছেলে সায়িমসহ ৪-৫ জনের একটি চক্র তার ওপর হামলা চালায়। তারা সাংবাদিক সাফিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এবং তার সঙ্গে থাকা গরু কেনার ১.৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
হামলার ঘটনার পর ৪ জুন রাতেই সাংবাদিক সাফির মা কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের ৭ দিন পর ১১ জুন গিয়ে পুলিশ সেটিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে। অভিযোগ রয়েছে, সাংবাদিকদের চাপের মুখে পড়ে পুলিশ বাধ্য হয়ে মামলা রেকর্ড করে।
স্থানীয় সাংবাদিক ও এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, মামলাটি শুরু থেকেই পুলিশের অনীহা ও ধীরগতির শিকার। পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, “আজ গ্রেফতার হবে”, “কাল ধরবো”, কিন্তু বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে আহত সাংবাদিক মো. সাফি বলেন, “গতকাল রাতে এসআই সাইফুল আমাদের লোককে ফোন করে আসামিদের ঠিকানা জানতে চেয়েছেন। অথচ আজ সবাই জামিন পেল। পরে এসআই সাইফুল আমাকে বলেন, আসামিপক্ষ আমার বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারে, তাই আমাকে সজাগ থাকার ও হুশিয়ারী দেন তিনি।”
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু বলেন, “আমরা পুলিশকে বারবার অনুরোধ করেছি আসামিদের গ্রেফতার করতে। কিন্তু পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে আসামিদের জামিন নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক।”
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক ফারুক বলেন, “এতদিনেও আসামিদের গ্রেফতার না করতে পারাটা পুলিশের চরম ব্যর্থতা। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক।”
কোতয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার ফারুক জানান, আমরা চেষ্টা করেছি আসামি গ্রেফতার করার জন্য ।আমাদের কোন কমতি ছিল না।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, “আসামি গ্রেফতার জন্য আমার চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। হামলার পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে।
তবে সাংবাদিক মহল মনে করছেন, পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা এবং মামলাটিকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই আজ পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি এবং তারা জামিনে মুক্ত হয়ে গেছে।