নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষ চলাকালে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য'কে নির্মম ও নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৪ জন এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়েছিল৷আর ওই মামলায় ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিমকে ( ৫০) আটক করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (১২ নভেম্বর) মধ্যরাতে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানাধীন মোহাম্মদ আলী বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, মামলার ৮৮নং এজাহার আসামি মোঃ জাকির হোসেন জসিম। সে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্দেশে তার অনুসারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ মঞ্চের পাশে অবস্থান নেয়। নির্দেশনা মোতাবেক কাকরাইলে উপস্থিত কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলের সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি পার্টি অফিস সংলগ্ন ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিম তার অনুসারীদের নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়। সেসময় দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায়। আর অপর অংশটি জসিম ও অন্যদের নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের অপর প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে।
র্যাব আরও জানান, উক্ত হামলার প্রেক্ষিতে পশ্চিম প্রান্তে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে অপর প্রান্তে পুলিশ সদস্যরা পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ সদস্যদের ওপর ছাত্রদল নেতা আমান এবং ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিম এর নেতৃত্বে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল এবং সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়।
র্যাব এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক নূরুল আবছার জানায়, নাশকাতকারীদের বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে যায়। এমন সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করতে থাকে। উপর্যপুরি আঘাতের ফলে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। আঘাতের একপর্যায়ে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করে ছাত্রদল নেতা আমান এবং জাকির হোসেন জসিম তাদের অনুসারীদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
পরবর্তীতে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৪ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।