রাঙ্গুনিয়ায় শতবর্ষের গাছ নিধন করে হুমকি মুখে বিদ্যালয়
রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিনদুপুরে শতবর্ষের ১০০টির বেশি গাছ কর্তন করে পরিবেশের হুমকীর মুখে বিদ্যালয়। আইন, পরিবেশ ভারসাম্য তোয়াক্কা না করে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান মার্কেট করার লক্ষে বিদ্যালয়ের শতাধিক গাছ কেটে শশ্মান করে রেখেছে প্রভাবশালী স্থানীয় নেতারা। গাছ নিধনের ফলে বিদ্যালয়ে ডিপ টিউবেল থাকলে এখন বিলীন হওয়ার পথে।
এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন- দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী কায়েম করা কিছু কুচক্র মহল বিদ্যালয় বন্ধের দিনে কোন নিয়ম কানুন তোয়াক্কা না করে গাছ গুলো কেটে নিয়ে যায়, আমরা এলাকাবাসী স্কুল - মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে প্রতিবাদ করলেও কোন কথা শুনেনি, উল্টো হুমকী দিয়ে আসছে অনবরত। সরকার ও প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ বিচার চাই।
জানা যায় -রাঙ্গুনিয়া সাবেক ইউএনও মাহমুদুল হাসান নিলামে নামে মাত্র ১৩৬৫০০/ টাকার বিনিময়ে গাছগুলো সরফভাটা সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইলকে কেটে ফেলার অনুমুতি দেয়, শেষ পর্যন্ত বির্তকিত কর্মকান্ডে রোষানলে পড়ে এই সাবেক ইউএনও, রাঙ্গুনিয়া বৈষম্যবিরোধী প্রেসক্লাব নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালে গত ২৮ই মে ইউএনও বিরুদ্ধে অভিযোগে শুনানি গ্রহণ করেন।
গাছ কর্তনের মূল হোতা সাবেক মেম্বার ইসমাইল বলেন- আমাকে ইউএনও বলছে, নিলাম থেকে গাছ ক্রয় করেছি, তবে বিদ্যালয়ের গাছ এইভাবে কাটা আমার উচিত হয়নি। মার্কেট করার উদ্দেশ্য এই গাছ কাটার কারন জানতে চাইলে বলেন- এখানে চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ সহ আওয়ামীলীগ ক্যাডাররা জড়িত, আমাকে ফাসানো হচ্ছে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- সরফভাটা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরফভাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাহাড়ঘেরা,, পাখির কলকাকলি, সবুজের প্রকৃতি নিয়ে যে পাঠদান চলত অনেকটা এখন শশ্মান হয়ে গেছে। শতবর্ষের গাছ নিধন করার পর যেন বিদ্যালয় চারপাশে সৌন্দর্য বিলীন হয়ে গেছে।
এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- আমরা বিদ্যালয়ে যে একটা গাছগাছালির পরিবেশ ছিল, পাখিদের একটা আশ্রয়স্থল ছিল এখন তো মনে একটা দূষিত স্থান।
পরিবেশ বাচা আন্দোলন (পবা) সভাপতি এই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- বর্তমান যেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইড মাত্রা, পরিবেশ হুমকীর মুখে সেখানে কিভাবে শতবর্ষের গাছ কেটে নেয়! আমরা এর তিব্র নিন্দা জানাই
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওগ্রাফি ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর কাজী বরকত বলেন-গাছ প্রকৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা পরিবেশ জীববৈচিত্র্য এবং মানবজীবনের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে বনাঞ্চল সংকুচিত হচ্ছে যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
গাছ কাটার আইন ২০২৪” এমন একটি পদক্ষেপ যা পরিবেশগত সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন ধারা তৈরি করেছে। এই আইনে ব্যক্তিগত ও সরকারি জমিতে গাছ কাটার নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনটি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অবৈধ গাছ কাটার ঘটনা কমানোর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে।
জানা যায়- সরফভাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গাটি ভুল বশত জেলা বোর্ড, চট্টগ্রাম এর নামে রেকর্ড হয়। এভাবে স্কুলের পক্ষে বাংলাদেশ সরকার খাজানা দিয়ে আসছে। দীর্ঘ ১১৮ বছর পর জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম ওক্ত জায়গা তাদের বলে দাবি করছে এবং পুরাতন এই বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি চলছে। এমতাবস্থায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। না হয় জেলা পরিষদ পাহাড় কেটে মার্কেট নির্মাণ করলে বিদ্যালয়ের দ্বীতল ভবন ধসে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দৃষ্টি দিলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ থেকে জায়গাটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
পরিবেশের ভারসাম্য যারা নষ্ট করার পায়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান এলাকাবাসী।