নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে আবারও আলোচনায় চসিকের আলোচিত - সমালোচিত কাউন্সিলর জসিম
চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে সাবাড় করা, চাঁদাবাজি, হামলাসহ নানান অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সমালোচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম আবারও আলোচনায় এলেন নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোট কেন্দ্রে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে ভোটবাক্সে ঢুকান। এসময় তিনি নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিজের পরিচয় দিয়ে ভোটকক্ষের ভেতরে হাঁটতে থাকেন। তারই অনুসারিকে দিয়ে সেই দৃশ্য ধারণ করেন। পরে তার একাধিক অনুসারি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। মূহুর্তেই সেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হয়। জহুরুল আলম জসিম চসিকের ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ভোটকেন্দ্রটি একই ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের বাড়ির পাশেই অবস্থিত ফিরোজশাহ সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
নির্বাচনী আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, প্রকাশ্যে ভোট প্রদান করে ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা না করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৮৩ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে শাস্তিযোগ্য নির্বাচনী অপরাধ। এখন জনপ্রতিনিধি হয়েও তার এমন অপরাধকাণ্ডের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয়দের মাঝে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তার এই কর্মকাণ্ড সেদিন নির্বাচনকে স্থানীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাচন করা অন্য প্রার্থীরা। বিশেষ করে জাতীয় পার্টি মনোনীত নাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করা দিদারুল কবির এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঈগল প্রতীকের লায়ন মোহাম্মদ ইমরান জাল ভোটসহ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। নির্বাচন কমিশনেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এমনকি চসিকের এ কাউন্সিলর ৯ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে লাঙল ও ঈগল প্রতিকের এজেন্টকে বের করে দেওয়া এবং কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ারও অভিযোগ ওঠেছে।
এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ কয়েকজন সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত গত ৩০ আগস্ট জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। সর্বশেষ গত ৭ ডিসেম্বর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম খানকে হুমকি-ধমকি ও গালিগালাজের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের আদেশ দেন আদালত। তারও আগে ২০১৫ সালে পাহাড় কাটার দায়ে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় ২০১৭ সালে দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত তার বিচার শুরুর আদেশ দেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সিএমপির একাধিক থানায় ২৫টিরও বেশি মামলা, অসংখ্য সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুযায়ী, কোনো কাউন্সিলরকে কোনো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করে দেয়া অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহিত হলে তাকে সাময়িক বরখাস্তের বিধান রয়েছে।
এই বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, এভাবেই প্রকাশ্যে ভোট দিয়ে এলাকায় ভোট প্রভাবিত করেছেন চসিকের বহুল আলোচিত-সমালোচিত তিন মামলায় বিচার শুরু হওয়া কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। প্রকাশ্যে ভোট প্রদান করে ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা না করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৮৩ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে শাস্তিযোগ্য নির্বাচনী অপরাধ। স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে আদালতে অভিযোগপত্র গৃহিত হওয়ায় তিনি বহিস্কার হওয়ার কথা। একটি নয়, তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়ে বিচারও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ৫ মাসেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। এটা আইনের ব্যত্যয়। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে সে প্রকাশ্যে সীল মেরে ভোটের গোপনীয়তা ভঙ্গ করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশও ভঙ্গ করেছেন যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।