মঙ্গলবার - ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১লা জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নওগাঁর মহাদেবপুরে ৬২ বিঘা ওয়াকফ্ সম্পত্তি র ফসল মাদ্রাসায় না দিয়ে ৪৯ বছর ধরে আত্মসাত

১২ অক্টোবর ২০২৩ নওগাঁর মহাদেবপুরে ৬২ বিঘা ওয়াকফ সম্পত্তির ফসলের হিস্যা মাদ্রাসায় না দিয়ে ৪৯ বছর ধরে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। ফসল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মাদ্রাসা কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতার ছেলে, ছেলের ছেলে ও মেয়ের ছেলেকে সদস্য করারও অভিযোগ করা হয়েছে। মাদ্রাসায় কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। এতসব অভিযোগ উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর ওয়াজেদীয়া বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসার নামে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এসব অস্বীকার করেছেন। স্থানীয়রা জানান, এনায়েতপুরের সকলের শ্রদ্ধেয় মরহুম হাজী গিয়াস উদ্দিন এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার সময় মাদ্রাসার নামে ৬২ বিঘা জমি লিখে দেন বলে প্রচার করেন। কিন্তু এর কোন দলিলপত্র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে দেননি। প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর তার ছেলে রিয়াজুল ইসলামকেও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি, ছেলের ছেলে রিমান ইসলামকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য হিসেবে কমিটির সদস্য ও মেয়ের ছেলে আনিছুল আম্বিয়া বাবলুকে দাতা সদস্য হিসেবে কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। ফলে ওই জমি সম্পর্কে কেউ কোনদিন কথা তোলেননি। ওই জমির কোন ফসলও মাদ্রাসায় দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠাতার ছেলে কখনোই আবার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পারেন না বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান। এলাকার বয়োবৃদ্ধরা জানান, হাজী গিয়াস উদ্দিন খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি এই মাদ্রাসায় ৬০ বিঘা জমি লিখে দিয়েছেন বলে সবাই জানে। কিন্তু সে জমি কে খান তা তারা বলতে পারেন না। এই মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নিজাম উদ্দিন ফারুকী। তিন বছর আগে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনিও একই কথা জানান। মাদ্রাসায় জমি দান করেছেন এটা ঠিক। কিন্তু মাদ্রাসায় কোন ফসল দেয়া হয়না। দলিলও দেয়া হয়নি। তার অবসর গ্রহণের পর সিনিয়র হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবার কথা ছিল শিক্ষিকা ফাহমিদা জেরিনের। কিন্তু দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার চেয়ে জুনিয়র সহযোগী অধ্যাপক এনামুল হক সরদারকে। তিনি জানালেন, ফাহমিদা জেরিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করায় কমিটি তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। জমি আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেননি। জমির কোন ফসল তিনি পাননি বলেও জানান। বিষয়টি জানাতে বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে পদাধিকার বলে ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহেল রানার অফিসে গেলে তিনিও জমির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতার ছেলে, ছেলের ছেলে ও মেয়ের ছেলে থাকার বিষয়ও তিনি জানেন না বলে জানান। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাজী গিয়াস উদ্দিনের মা সফুরা বেওয়া ১৯৭৪ সালে ২০ একর ৬৭ শতক সম্পত্তি ওয়াকফ্ করে দেন। এই ওয়াকফ্ স্টেটের নাম সফুরা বেওয়া ওয়াকফ্ স্টেট। এই সম্পত্তির শতকরা ২৫ ভাগ এনায়েতপুর ওয়াজেদীয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ পাবে। জানতে চাইলে নওগাঁ ওয়াকফ্ পরিদর্শকের কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ওয়াকফ্ অডিটর সজল মিঞা জানান, সফুরা বেওয়া ওয়াকফ্ স্টেট এখনও চালু আছে। গত অর্থবছর পর্যন্ত এর অডিট সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, ওয়াকফ্ দলিলের শর্ত অনুযায়ী ওই জমির ফসলের ভাগ অবশ্যই মাদ্রাসায় দিতে হবে। যদি দেয়া না হয় তাহলে এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। এই মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন পদে প্রায় ১২ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে এলাকার মানুষের মুখে মুখে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু কোন পত্রিকায় কবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো তা কেউ বলতে পারেন না। ফলে উৎসাহী অনেকেই নিয়োগ পাবার জন্য দরখাস্ত করতে পারেননি। এলাকাবাসী জানান, ওই মাদ্রাসার অফিস সহকারী ওসমান আলীর ছেলে কামরুজ্জামান কম্পিউটার অপারেটর কাম ক্যাশিয়ার পদে, মৃত মজিবর রহমানের ছেলে নুরে আলম দপ্তরী পদে এবং আসাদ আলীর স্ত্রী সুমি খাতুন আয়া পদে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন কথা সকলের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। গোপন সমঝোতার ভিত্তিতে তাদেরকে এবং অন্যসব পদেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এসব পদে প্রায় কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছেন কামরুজ্জামান, নুরে আলম ও আসাদ আলী। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তিনিও এসব অস্বীকার করেছেন। এসব ব্যাপারে দায়ি করা হয় মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলামকে। বিষয়গুলো জানতে এনায়েতপুরে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। একজন মহিলা কেয়ার টেকার জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী শহরে বসবাস করেন। তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনে বার বার রিং দিতেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। মাদ্রাসার সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা বলেন, নিয়োগে আগে কে নিয়োগ পাচ্ছে তা প্রকাশের সুযোগ নাই। নিয়োগের জন্য দরখাস্ত পাওয়া গেছে। নিয়োগ বোর্ড গঠনের জন্য ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয়ে লেখা হয়েছে। বিতর্ক এড়ানোর জন্য নিয়োগ পরীক্ষা নওগাঁ জেলা সদরে নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn