দুই ব্যারিস্টার মুখোমুখি চট্টগ্রামে
চট্টগ্রাম-৯ আসন (কোতোয়ালী-বাকলিয়া-চকবাজার) এলাকায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি ও ব্যারিস্টার সানজিদ রশীদ চৌধুরী নির্বাচনের মাঠে মুখোমুখি হওয়া অনেকটা নিশ্চিত। এই দুই তরুণ ব্যারিস্টারের নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় এবং পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিচয় দেশের অন্য রাজনীতিবিদদের চেয়ে বহুগুন বেশী। তরুণ প্রজন্মের কাছে তারা খুব জনপ্রিয়। নির্বাচনের ভোটের মাঠে ভোটের ফলাফলে নির্ধারণ হবে উক্ত আসন থেকে কে হবেন সংসদ সদস্য।
ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি প্রয়াত চট্টগ্রামের সিটি মেয়র এ.বি.এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর বড় ছেলে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকও। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ উপদেষ্ঠা ও তার মা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মাসুদা রশীদ চৌধুরী এমপি। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন, তার পিতা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মরহুম এডভোকেট এ.বি এম ফজলে রশীদ চৌধুরী। তার দাদা পাকিস্তান সরকারের বিরোধী দলীয় নেতা ফজলে কবির চৌধুরী ও তারা নানা পাকিস্তান সরকারের সাবেক মন্ত্রী। ব্যারিস্টার সানজিদ রশীদ চৌধুরী বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের প্রয়াত সংসদ সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মাসুদা এম, রশীদ চৌধুরীর সন্তান। তিনি (ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার) এর সংরক্ষিত আসনের এমপি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দায়ীত্বপ্রাপ্ত ছিলেন বিদুষী প্রফেসর মাসুদা রশীদ চৌধুরী। তিনি অত্যান্ত সৎ ও দক্ষ একজন শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
ব্যারিস্টার সানজীদের নানা মরহুম আবুল মনসুর পাকিস্তানের শীর্ষ ব্যবসায়ী, নানী মৌসুফা মনসুর বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থার সভানেত্রী ও চট্টগ্রাম বাওয়া স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। নানা খাঁন বাহাদুর আবুল মজিদ জিয়াউস সামস্ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টের শিক্ষামন্ত্রী। খাঁন বাহাদুর টি আহম্মেদ উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম ডিপিআই ও ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলের নেতা একেএম ফজলুল কবির চৌধুরী'র জ্যেষ্ঠ নাতি তিনি। তার পিতা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট এবিএম ফজলে রশীদ চৌধুরী। রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ভাইপো। ব্যারিস্টার সানজীদ চট্টগ্রামের রাজ পরিবারের সন্তান।
অন্যদিকে মুহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে তিনি। রাজনৈতিক যাত্রাও শুরু হয় চট্টগ্রাম মহানগর থেকে। যদিও এক-এগারোর সময়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিদেশি আইনজীবী ও অর্থনীতিবিদদের একত্রিত করে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের বাইরে জনমত তৈরির ভূমিকা রেখেছেন রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠা নওফেল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাবার পক্ষে কাজ করে আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১৪ সালে ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হয় নওফেলকে। যুক্ত ছিলেন যুব লীগের রাজনীতির সাথে। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি সর্বকনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ২৮৬ নং (চট্টগ্রাম-৯) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনীতির বাইরেও ঢাকা বারের আইনজীবী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বেও রয়েছেন। এ দুই ব্যারিস্টার চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রার্থী হওয়ার পর ভোটাররা কার চেয়ে কে যোগ্য এ নিয়ে বিচার বিশ্লেষন শুরু করেছে। জাতীয় ছাত্র সমাজ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজেমুল হাসান শাহেদ বলেন, চট্টগ্রাম-৯ আসনে ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরী প্রাথী হওয়ার পর হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে। উনার পরিবারিক ঐতিহ্য ইতিহাস বাংলাদেশের কয়জন প্রার্থীর আছে।নির্বাচনে ভোটাররা উনাকে বেঁচে নিবেন, উনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়েল মেধাবি সাবেক ছাত্র নেতা দেশী এবং আন্তর্জাতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যবসায়িক পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্বে রয়েছে উনার মত মানুষ সংসদ সদস্য হলে সংসদের মান মর্যাদা বৃদ্ধিপাবে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী চট্টগ্রামের মধ্যে যত প্রার্থী রয়েছে এগুলোর মধ্যে সব চেয়ে যোগ্য এবং গ্রণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে ব্যারিস্টার সানজিদ। উনি বিজয় হবে এটা আমরা আশা করি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র আমরা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে মানুষ আমাদেরকে ভোট দিয়ে বিজয় করবে। মানুষ এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিকল্প কোন কিছু চিন্তা করছে না বলে জানান।