ঢাকা কেরানীগঞ্জে স্ত্রীর নির্যাতনে স্বামীর ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
ঢাকা কেরানীগঞ্জে খেজুরবাগ সাতপাখি এলাকায় স্ত্রীর নির্যাতনে স্বামী ১০ জনের বিরুদ্ধে আসামি করে ঢাকা বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আমলী ৩নং আদালতে মামলা দায়ের করেছেন মোঃ হাজী আলী আকবর শেখের অভিযোগ।
উল্লেখ্য সি.আর মামলা নং৭৬৪ দায়েরকৃত ধারা-১৪৩/১৪৪/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩৫৪/৪৫১/৪৫২/৩০৭/১০৯/ ১০ জনের বিরুদ্ধে প্রধান শাহানাজ বেগমকে (৫৩) আসামি করে ২/ হুমায়ুন কবির (৪০) ৩/ আনোয়ার হোসেন (৪২) ৪/ হ্নদয় (২৬) ৫/ নাফিস (১৮) ৬/ মিনি (৪৮) ৭/ জেসমিন (৩৮) ৮/ চায়না (৩৫) ৯/ আইরিন (৩৪) ১০/ ফতে বেগমসহ বাদী মোঃ হাজী আলী আকবর শেখ পিতা: মৃত হাবিবুর রহমান শেখ বর্তমান ঠিকানা খেজুরবাগ সাতপাখি স্কুল রোড ঢাকা দক্ষিন কেরানীগঞ্জ স্থানীয় ঠিকানা সদর পঞ্চসার ইউনিয়ন ভট্টাচার্যের বাগ মুন্সিগঞ্জ।
এঘটনায় মামলার ১ নং আসামী বাদীর স্ত্রী। তাদের দীর্ঘ প্রায় ৩৬ বছরের সংসার। অপরদিকে অত্র মামলার ক্ষতিগ্রস্ত ভিকটিম বাদীর শ্যালিকা ও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। তাহারা উভয়েই একই বাড়ীতে (ভিকটিম) থাকেন ৩য় তলায় ও (বাদী) ২য় তলায় বসবাস করেন। বিভিন্ন সময় ঘরের দরজা খোলা পেয়ে ঘরে ঢুকে এবং দেখে কেউ নাই।
৩। এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করার পর বাদী তার মেয়েকে ফোন দেয়। মেয়ে কতক্ষণ পর ফোন ব্যাক করে জানায় তার মা তার নানুর বাসায় গিয়েছে। এরপর বাদী আশ্বস্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। বাদীর ঘুম শেষে উঠে বিকালে আছরের নামাজ পড়তে বাইরে যায় এবং রাত ১০.০০ ঘটিকার দিকে বাসায় এসে দেখে তার স্ত্রী ঘর লক করে চলে গেছে। তাই সে ডাকাডাকি করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ তার স্ত্রী আসে। স্ত্রীকে/১ নং আসামীকে দেখে কই ছিলা প্রশ্ন করতেই সে রেগে বাদীকে বেভন্ড/অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। এমন সময় ৩য় তলা থেকে বাদীর শ্যালিকা (ভিকটিম) নীচে এসে ১ নং আসামীকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে আপা, চিল্লাচিল্লি কেন? এই প্রশ্নের সাথে সাথে ভিকটিমকে ও তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করেও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে।
৪। এই ঘটনার পরও বাদী রাগ না হয়ে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ঘরের ভিতর প্রবেশ করেন এবং কোন কথা না বলে শুয়ে পড়েন। এর পরের দিন ৯ তারিখ সকাল ৮/৯ ঘটিকার সময় তিনি তার ছোট ভাই আলালকে নিয়ে গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সেখানে তার আরেক ছোট ভাই দুলালের মেয়ের কাবিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য। ঐদিন রাত ৯.০০ ঘটিকার সময় ১ নং আসামী অন্যান্য আসামীদের নিয়ে ৩য় তলার ফ্ল্যাটে থাকা বাদীর শ্যালিকার অর্থাৎ ভিকটিমের ফ্ল্যাটে অবৈধভাবে অনধিকার গৃহ প্রবেশ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিল নিতু আক্তার, ভিকটিম নাসিমা নাসরিনকে ও তার মেয়ে খাদিজা আক্তার (১৫) সেখানে গিয়ে ১ নং আসামী ও তার সাথে 'থাকা অন্যান্য আসামীগণ ভিকটিমকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করে চলে যান।
৫। উক্ত ঘটনা নিতু বাদী আলী আকবরকে জানান ও তার ভাই আলালকে জানান। অতঃপর বাদী নিতুকে জানায় যে, "তুমি যেভাবে পারো থামাও, কারণ কালকে আমার ভাতিজীর কাবিন অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠান শেষ করে আসবো।" ইহার পর 'নিতুর আশ্বাসে বাদী কাবিন অনুষ্ঠান শেষ করে ১০ তারিখ দুপুর ২.০০ ঘটিকার দিকে কেরাণীগঞ্জ ফিরে আসে।
৬। পরের দিন ১১ তারিখ বাদী পক্ষ দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা করার উদ্দেশ্যে যায়। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ জানায় আপনারা মৌখিক অভিযোগ করে রাখেন। আমরা বিষয়টি দেখবো। তখন বাদী পক্ষ অনুনয়-বিনয় করতে থাকে মামলাটি নেওয়ার জন্য। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় আমরা দেখবো। আপনারা নিশ্চিন্তে বাসায় চলে যান।
৭। পরের দিন ১২ তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.০০ ঘটিকার সময় আসামী পক্ষ পুলিশ নিয়ে আসেন। এসআই রফিকুল ইসলাম (লিটন) ও তার সঙ্গীয় কনষ্টেবল সহ ঘটনাস্থলে আসেন। উল্লেখ্য যে, ৯ তারিখ রাতেই (ভিকটিম) নাসিমা নাসরিনকে মারধর করে আসামী পক্ষ আবার থানায় বাদীর আত্মীয়-স্বজনকে অভিযুক্ত করে এক মিথ্যা মৌখিক অভিযোগ দায়ের করেন। যখন বাদী পুলিশদেরকে জিজ্ঞাসা করেন তাদের আসার ব্যাপারে তখন পুলিশ উক্ত মৌখিক অভিযোগের তদন্তে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ইতিমধ্যেই ১ নং আসামী ২য় তলায় পুলিশের সাথে আলোচনারত অবস্থায় বাদীর সামনে দিয়েই বাদীকে কিছু না বলেই ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক নিয়ে ভিকটিম এর গৃহে ৩য় তলায় অতর্কিত ঢুকে পড়ে এবং পুলিশের সাথে কথা বলতে মাথা ফ্লোরে সজোরে আঘাত করতে থাকে। ইহার ফলে ভিকটিম মাথায় মারাত্মক জখম হয় এবং বমি করে দিয়ে সেন্সলেস হয়ে যায়। এই সেন্সলেস অবস্থায় সকল আসামীগণ ভিকটিমকে ফেলে রেখে সন্ত্রাসী স্টাইলে ৩য় তলা হইতে নেমে যাওয়ার সময় জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়।
৮। অতঃপর বাদী পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনারা উপস্থিত থাকতে কিভাবে সন্ত্রাসীগণ আমাদের বাড়ীতে ঢুকে মেরে গেল? যেহেতু ইতোপূর্বে আরও ২ বার বিভিন্ন সময় ও তারিখে ১-৩ নং আসামীগণ এই ধরণের কার্যকলাপ করেছেন। কিন্তু সামাজিক লোকলজ্জা ও মানবিক কারণে তাদের বিরদ্ধে মামলা করিনি। তখন পুলিশ দেখি কি করা যায় বলে থানায় চলে যায়। পরবর্তীতে থানায় যোগাযোগ করিলে কোনরকম কথা না বলে মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
৯। ইহার পর ভিকটিমকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে বলে দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে যান। ভিকটিম এর অবস্থা গুরুতর। কারণ ভিকটিম ক্রমাগত বমি করছিল। তখন মিটফোর্ডে নেওয়া হয়। মিটফোর্ড এর দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বলেন রোগীর অবস্থা গুরুতর/আশঙ্কাজনক। অতি দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। অতঃপর রোগীকে/ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। ভিকটিম নাছিমা আক্তার নাসরিনকে হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য ভর্তি পূর্বক অত্র মামলাটি দায়ের করিতে কিছুটা বিলম্ব হই।
এবিষয়ে ঢাকার আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ জহিরুল হক খাঁন এর মাধ্যমে পিবিআই তদন্তের নির্দেশনা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আমলী ৩নং আদালতে জানান।