
ঠাকুরগাঁওয়ে অভিনয় কায়দায় ১ সপ্তাহে ৭টি অটোরিকশা ছিনতাই
ঠাকুরগাঁওয়ে ১ সপ্তাহে অভিনয় কায়দায় ছিনতাই হয়েছে ৭ টি অটোরিকশা। যাত্রী সেজে অভিনব কায়দায় এমন ছিনতাই করছেন একটি চক্র। কোমল পানীয়তে চেতনা নাশক মিশিয়ে অজ্ঞান করে হাতিয়ে নিচ্ছেন রিকশা। নিয়মিত এসব ঘটনায় শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি কর্মক্ষম হয়ে পড়েছেন চালকেরা। এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলার রিকশাচালক ও নেতারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরদার তৎপরতা আর চালকদের সচেতনতার আহবান সচেতন মহলের।
অভিনব কায়দায় যাত্রীবেশে অটোতে উঠে চালকদের চেতনানাশক খাইয়ে একের পর এক অটোরিকশা ছিনতাই করে নিচ্ছে চক্রটি। এতে করে সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন খেটে খাওয়া অটোচালকরা। বৃদ্ধ বয়সে উপার্জনের শেষ অবলম্বনটুকু হারিয়ে অনেকে এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন, কেউবা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয় অটোচালকদের অভিযোগ, একের পর এক অটো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। গত ১ মাসে ২০-২৫ জন অটোচালক সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এই নির্মমতায় শুধু চালকরাই নন, তাদের পরিবারেও নেমে এসেছে অন্ধকার। ক্ষুধার্ত মুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর ঋণের বোঝা নিয়ে ধুঁকছে তারা। অন্যদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ের রাস্তায় এখনো যারা অটো চালাচ্ছেন, তাদের চোখেমুখেও গভীর আতঙ্ক। কখন যে তাদের একমাত্র অবলম্বনটুকু কেড়ে নেওয়া হয়, সেই ভয়ে প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে তাদের।
শহরের টিকাপাড়ার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব হাফিজ উদ্দিন তেমনই একজন ভুক্তভোগী। শারীরিক দুর্বলতার কারণে অন্য কোনো কাজ করতে না পেরে সংসারের হাল ধরতে কিছুদিন আগে কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন। এখনো ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে তাকে। এর মধ্যেই দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়ে অটোটি হারিয়ে এখন ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উপার্জনের শেষ সম্বল হারিয়ে চোখে জল নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুধু ভাবছেন, সুস্থ হয়েও কী হবে! একদিকে কিস্তির চিন্তা, অন্যদিকে পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দুশ্চিন্তা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। হাফিজ উদ্দিনের মতো একই পরিণতি হয়েছে শহরের মুন্সিরহাট এলাকার বয়োবৃদ্ধ নিজাম উদ্দিনেরও। গত ১২ই এপ্রিল প্রতিবেশী হাদিসের কাছ থেকে ভাড়ায় অটো নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা তাকেও চেতনানাশক খাইয়ে অটোটি নিয়ে যায়। প্রথমে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে তাকে রংপুরে রেফার করা হয়। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও এখনো ভালোভাবে হাঁটতে পারছেন না তিনি। একদিকে নিজের ভরণপোষণ, অন্যদিকে যার অটো হারিয়েছেন তার ক্ষতিপূরণ কীভাবে দেবেন, এই চিন্তায় দিশেহারা নিজাম উদ্দিন। শুধু হাফিজ উদ্দিন বা নিজামউদ্দিন নন, গত এক মাসে ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০ থেকে ২৫ জন অটোচালক একই ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অটো হারানো চালকদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। হাফিজ উদ্দিনের স্ত্রী জানান, স্বামীর একমাত্র উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা অটো রিক্সা, ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আবু তাহের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গত এক মাসে আমাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি অটোরিকশা অজ্ঞান পার্টির মাধ্যমে হারিয়ে গিয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাইনি। তারা শুধু বলেন, দেখবেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। এই চক্রের কাউকে তারা ধরতে পারেনি।”রিকশা ভ্যান মালিক সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীরও একই সুরে বলেন, “হতদরিদ্র মানুষগুলো তাদের শেষ সম্বল দিয়ে একটি অটো কেনে। সেই অটো দিয়েই তাদের জীবন চলে। আর সেই অটো যদি এভাবে ছিনতাই হয়ে যায়, তাহলে তাদের আর কিছুই থাকে না। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, যেন তারা দ্রুত এই অজ্ঞান পার্টিকে ধরে আইনের আওতায় আনে। ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম চয়ন এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “গত কিছুদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে এই চিত্রটি খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। অজ্ঞান করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী তরল চেতনানাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ঔষুধ এতটাই তীব্র যে, অনেক রোগী সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছেন। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে এখনো পর্যন্ত এই চক্রের হাতে কেউ মারা যায়নি, তবে অন্যান্য জেলায় মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটেছে।”এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।