
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জামাতা, জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামী, বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী আজ
১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া ও মরহুমা ময়জান নেছার সন্তান ওয়াজেদ মিয়া এলাকা ছাড়াও সারাদেশে ‘সুধা মিয়া’ নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চক করিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৫৬ সালে রংপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী সরকারী কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান এবং ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ সম্পন্ন শেষে ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম শ্রেণীর এই বিজ্ঞানী তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগ দিয়ে চাকরী জীবন শুরু করেন। পরে আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে ইতালির খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাঁকে ‘এ্যাসোসিয়েটশীপ’ প্রদান করে।
১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরে ‘ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরি’তে পোষ্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন। ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে শুরু করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লীর ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন ।
বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগে যোগ দেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালের ২ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাত হয়। ওই বছরই আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন ড. ওয়াজেদ মিয়া। আজন্ম সৎ, সম্পূর্ণ নির্লোভ, নিভৃতচারী ও নিখাদ দেশ্রপ্রমিক এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের সময় ড. ওয়াজেদ মিয়া জার্মানিতে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা থাকায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। এই বিজ্ঞানীর দু’সন্তান। বড় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় পেশায় সফটওয়্যার বিজ্ঞানী এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা। ছোট মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম নিয়ে দেশ-বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করছেন।