বৃহস্পতিবার - ২৬শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১২ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১লা মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

খোদার পথের পথিকদের আলোকবর্তিকা “হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক.)”

খোদার পথের পথিকদের আলোকবর্তিকা
“হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক.)”

মুহাম্মদ মফিজউদ্দিন

 

মাইজভাণ্ডারী তরিকার মহান প্রবর্তক গাউসুল আযম হযরত শাহ্্ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) (১৮২৬-১৯০৬) এর নেগাহ্ করম ও স্নেহ মায়া-মমতায় ধন্য, প্রতিষ্ঠিত বাগানের অতুলনীয় খুশবুদার চোখজুড়ানো চমক। কনিষ্টভ্রাতার দ্বিতীয়পুত্র, খোদার তায়ালার নৈকট্য হাসিল কারীদের আলোকবর্তিকা, বিল বেরাসত গাউসুল আযম, হযরত মাওলানা শাহ্্ সুফি সৈয়দ গোলাম রহমান [বাবা ভাণ্ডারী] (ক.)(১৮৬৫-১৯৩৭)।

গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.) পবিত্র কুরআনুল করিমার খানিকটা অংশ পড়িয়ে সবক দান করে, চট্টগ্রাম মোহছেনীয়া মাদরাসায় লেখা-পড়ার সূত্রপাত, গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর দিকনির্দেশনার আলোকে স্বল্পভাষী, সদালাপী, বিনয়ী, নির্বিলাসী, স্বল্প আহারী এবং স্বল্প ঘুম, নিয়মিত অধ্যাবসায়ে, মোরাকাবায় নিজেকে গড়ে তুলেন পরিপূর্ণমাত্রায়।

মোহছেনীয়া মাদ্রাসায় পড়ার সময় চাঁদগাও নিবাসী আশরাফ আলী সওদাগরের বাড়ীতে লজিং থাকা কালিন সময় (“ছায়েমুদ্দহর”) সর্বদায় রোজা রাখতেন। গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.) কালাম করেছিলেন “আমার ছেলেরা সারা বছর রোজা রাখে”। জনাব আশরাফ আলী বর্ণনা করেন, রমজানের ঈদ ও কোরবানের ঈদের সময় ছাড়া তিনি অন্য সময়ে রাতদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেবল মাত্র সন্ধ্যাকালে একবার আহার করতেন।

হজ্ব যাত্রীদের জাহাজের টিকিট প্রদান:

পটিয়া থানার আসিয়া গ্রাম নিবাসি আছদ আলী সওদাগর ও শফি কেরানি হজ্জ পালনের জন্য বোম্বাই গিয়ে, সেখান হতে জাহাজের টিকেট ক্রয় করেন অতপর টিকেট হারিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে, হে! গাউছুল আযম মাইজভাণ্ডারীর (ক.) তোফায়েলে আমাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমাদের টিকিট যেন পুন: পেয়ে যায়। অতপর ঐ রাতে হযরত বাবা ভাণ্ডারী স্বপ্নে দর্শন ও টিকিট প্রদান করেন । জাহাজ ছাড়ার পূর্ব মুহূতে হজ্ব ক্যাম্প কর্মচারী মারফতে টিকিট পান এবং জাহাজে করে গিয়ে হজ্বের যাবতীয় কার্যক্রম সু-সম্পন্ন করেন।

রেল গাড়ীর দুর্ঘটনা হতে রক্ষা :

একদিন হযরত বাবা ভান্ডারি (ক.) চট্টগ্রাম রেল ষ্টেশনে গিয়ে রেল লাইনের উপর বসে থাকেন। আসাম মেইল ট্রেন ছাড়ার সময় হলে ট্রেন চালক ও স্টেশনে মাষ্ঠার আকুতি-মিনতি করে উঠার আপ্রাণ চেষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে যথাযত নিয়মে ট্রেন ছেড়ে দেওয়া হয়। হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক.) এর নিকটে এসে ট্রেন পুনরায় পিছনে দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর ষ্টেশন মাষ্ঠার টের পায় কদমতলী রেল লাইনের উপর বেশ কয়েকটি যাত্রী বাস আটকা পড়েছিল। হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক.) যদি বসে না থাকত, সময় মত ট্রেন ছাড়লে বাস ও যাত্রীদের জীবন বিপন্ন হত।

হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী ক: এর বেশারত:

বিল বেরাসত গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্্ সুফি সৈয়দ গোলাম রহমান মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর শান সম্পর্কে স্বীয় মুরশিদ পিত্যব্য বলেন “তিনি শাহ্ জালাল ইয়ামন দেশের অধিবাসি তাঁহাকে সম্মান করিও “।
হযরত গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বেছালের পর বোয়ালখালী থানা নিবাসি বিল বেরাসত গাউসুল আজম হযরত মাওলানা শাহ্্ সুফি শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (ক:).(১৮৫২-১৯২০) ও বেশ কয়েক জন ছাড়া, হযরত কেবলার (ক.) খোলাফায়ে এজাম হযরত বাবা ভাণ্ডারী (ক.) এর অতুলনীয় খুশবু প্রেম তরঙ্গের উত্তাল টেউয়ে নিজেদের গড়ে তুলেন সুনিপুনভাবে।

ইমাম শেরে বাংলা (রা.) দিওয়ানে আজিজে বর্ণনা:

শত স্বাগতম, শত মোবারকবাদ, শত ধন্যবাদ স্বাগতম, তিনি “বাবাজান কেবলা খেতাবে প্রসিদ্ধ, নিঃসন্দেহে গাউসুল আযম শাহ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর বাগানের বিশেষ ফুল, ঐ ফুলের খুশবু সাড়া দুনিয়ার মানুষকে দেওয়ানা করে ছেড়েছে, যা মাইজভাণ্ডারী আশেক গণের সাজিদাগাহে পরিণত হয়েছে। তিনি যখন ফানা-ফিল্লাহ্ ও বাক্কা-বিল্লাহ স্থরে পৌঁছে গেলেন নিজের মুখের উপর নিরবতার মোহর ছেপে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তিনি শেষ জমানার ইউসুফে ছানি, তাঁকে আল্লাহর জ্যোতির প্রকাশ স্থল বলে জানো। তাহাঁর কারামত সমূহ লেখনী ও বর্ণনার বাহিরে মানুষ সব সময় তাঁর বরকতময় সত্তা থেকে ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে ধন্য হচ্ছে।
পাহাড়-পর্বত-নগর-গ্রাম অনেক স্থান পরিভ্রমণ করে দীর্ঘ বার বছর পর (মুর্শিদ পিত্যব্য ওফাত প্রাপ্ত হওয়ার পর) পীর মুর্শিদের উপদেশ-নির্দেশ অনুসরণে ইসলাম ও তরিকতের খেতমতে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে সু-সম্পন্ন করে ৭১ বছর বয়সে ১৯৩৭ সালে ৫ এপ্রিল ওফাত লাভ করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn