শনিবার - ৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২০শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ৫ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

খাল খনন বিএনপির রাজনীতির অন্যতম খুঁটি

চট্টগ্রামে খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধনকালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী–
খাল খনন বিএনপির রাজনীতির অন্যতম খুঁটি

খাল খনন কর্মসূচি বিএনপির রাজনীতির অন্যতম পিলার (খুঁটি) বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, খাল খনন বিএনপির রাজনীতির অন্যতম পিলার। খাল খনন মানে শুধু পানি নিষ্কাশন না, একটি শহরের পানির যে স্রোত এটা নিশ্চিত করতে হবে। খালের আশেপাশে একটি ভিন্ন অর্থনীতি গড়ে তোলা যাবে। স্থানীয় মানুষদের জন্য একটা বিনোদনের জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে, তাদের হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে করে দেওয়া যেতে পারে।

তিনি শুক্রবার (২ মে) সকালে নগরের কাট্টলী কর্নেলহাট বাজারের বামপাশে ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন রেললাইনের পাশে নাজির খাল ও কালির ছড়া খাল স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির অর্থায়নে খনন ও পরিষ্কার কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিক উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলমের পরিচালনায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।

আমীর খসরু বলেন, শহরের মধ্যে প্রতিটি খাল যখন আমরা এভাবে প্রতিস্থাপন করতে পারবো এবং সেই প্রক্রিয়ায় নিয়ে যেতে পারবো তখনই খালের একটি অগ্রগতি হবে। এছাড়াও, খালের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষির যে কাজগুলো আছে, সেগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে। তবে পানিগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।

স্থানীয় উদ্যোগে খাল খনন এটি মহৎ কাজ জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, একটি ওয়ার্ড থেকে দুটি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি অবশ্যই ভালো কাজ, মহৎ কাজ। তবে এটি যেন চট্টগ্রাম নগরের প্রত্যেক ওয়ার্ডেই প্রতিস্থাপন করা হয়৷ বিএনপির রাজনীতি, স্লোগান আর বক্তৃতা নয় শুধু, এটা শহীদ জিয়ার রাজনীতি, উন্নয়নের রাজনীতি, উৎপাদনের রাজনীতি। তাই আমাদের এ সমস্ত কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে৷

ডা. শাহাদাত হোসেন আন্দোলন সংগ্রাম করে ওঠে আসা নেতা মন্তব্য করে তিনি বলেন, খাল খনন এবং পরিষ্কারে স্থানীয় একটি উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এগিয়ে আসা এবং সহযোগিতা করার এটাই প্রথম প্রমাণ। আজকে চট্টগ্রামবাসীর সৌভাগ্য অনেকদিন পরে চট্টগ্রামে একজন দক্ষ, সুযোগ্য, শিক্ষিত, সৎ একজন মেয়র এসেছে নেতৃত্ব দিতে। শাহাদাত রাস্তায় আন্দোলন সংগ্রাম করে ওঠে এসেছে। খুব খারাপ সময়েও সে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাই এটা আমাদের জন্য একটা সুযোগ, এই সুযোগটা গ্রহণ করতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, আন্দোলন সংগ্রাম শেষ, এখন দেশ গড়ার সময়৷ দেশ গড়তে হবে এটার জন্যই বিএনপির সৃষ্টি। দেশ গড়ার যত ফর্মুলা আছে এখন সেগুলোকে সামনে আনতে হবে।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম শহরে একসময় ৭১ টি গুরুত্বপূর্ণ খাল ছিল। এসব খাল ভরাট হয়ে যাওয়াই নগরীর জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। এসব খাল খননের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হওয়ার কথা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির চক্রান্তে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই কাজ সিডিএ’র হাতে চলে যায়।

সিডিএ ৫৭টি খাল চিহ্নিত করলেও মাত্র ৩৬টি খাল খননের কাজ করছে। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশন মাত্র একটি খাল খনন করছে। ফলে অন্তত ২০টি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে, যার ফলে নগরবাসী এখনও জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।

এছাড়া, খাল খননে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সিডিএ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও তারা প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি, বরং এর মাধ্যমে মেগা দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সিডিএ ও চসিকের প্রধানরা খাল ও নালার ওপর মার্কেট, ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা খাল বা নালার ওপর থাকতে পারে না।

জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, কিন্তু এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সততার সঙ্গে কাজ করছি। তাই আমি অতিদ্রুত যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজে খাল খনন করে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছেন। খাদ্য উৎপাদন দিগুণ করে বিদেশে রপ্তানি করেছেন। তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে খাল খনন বিষয়ে একটি দফা আছে। বিএনপির ৩১ দফা হচ্ছে আমাদের মুক্তির সনদ।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, গত ১৬ বছরে উন্নয়নের নামে চট্টগ্রাম নগরকে জলাবদ্ধতার নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে জলাবদ্ধতা এখন চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনে দলমত নির্বিশেষে একযোগে কাজ করতে হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মঞ্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী।

উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য আবুল হাশেম, জাফর আহমেদ, বিএনপি নেতা আব্বাস র‌শিদ, আবদুস সাত্তার সে‌লিম, মঈন উ‌দ্দিন চৌধুরী মাঈনু, রেহান উদ্দিন প্রধান, আলী আজম চৌধুরী, আইয়ুব খান, শামছুল আলম সে‌ক্রেটারী, শ ম জামাল উ‌দ্দিন, জ‌মির আহমদ, সাইফুল আলম, হা‌বিবুর রহমান চৌধুরী, কুতুব উ‌দ্দিন চৌধুরী, স‌কিনা বেগম, মো. সে‌লিম, মো. আলাউ‌দ্দিন, মো. শফি প্রমূখ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn