
কলাপাড়ায় মাইজভান্ডারি খানকার জমির টাকা আত্মসাত ও প্রতারনার অভিযোগে চাচা ও চাচাতো ভাইদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাইজভান্ডার খানকা শরীফের নামে দেওয়া ভূমির অধিকগ্রহণকৃত টাকা ও পৈত্রিক সম্পত্তির অধিগ্রহনকৃত ক্ষতিপূরনের টাকা আত্মসাত। পাওনা টাকা না দিয়ে উল্টো মিথ্যা চুরির মামলায় জেল খাটানো এবং বর্তমানে জীবননাশের হুমকির অভিযোগ তুলে সৎ চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন মিঠু হাওলাদার (৩৫) নামের এক যুবক। শনিবার দুপুর ১২টায় কলাপাড়া রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিঠু হাওলাদার। সংবাদ সম্মেলনে মিঠুর স্ত্রী শাহিনুর বেগম, মা আছমা বেগম ও চাচি কাজল রেখাসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মিঠু হাওলাদার বলেন, আমার বাবা জহিরুল ইসলাম নয়া হাওলাদার মাইজ ভান্ডার শরীফের একজন মুরিদ ছিলেন। তিনি খানকা শরীফেরও সভাপতি ছিলেন। আমার বাবা ও আমার দাদা ওয়াজেদ আলী হাওলাদারের নামে ১৫ নং জে.এল বানাতীপাড়া মৌজায় এস.এ ৪১ ও ৪৫ নং খতিয়ানের এস.এ ২৫৫ নং দাগে ২ একরের বেশি সম্পত্তি ও মাইজভান্ডার শরীফের ঘর ছিলো। ২০০২ সালে আমার বাবা খানকা শরীফের নামে ওই জমি থেকে ৯ শতাংশ জমি দান করেন। ২০০৩ সালে আমার বাবা মৃত্যু বরন করার পরে আমার চাচা নাসির হাওলাদার ওই খানকা শরীফের সভাপতির দায়িত্ব নেন। পরে পায়রা বন্দর নির্মানের জন্য ওই ঘর ও জমি অধিগ্রহন করা হলে সে নিজে ঘরের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। শুধু এই ঘরের টাকা আত্মসাতই নয় পায়রা বন্দর কৃর্তপক্ষ ওই খানকা ঘরের পরিবর্তে লালুয়া হাসনাপাড়ায় একটি ‘এ টাইপ’ ঘর দিলে সেটাও তিনি দখল করেন।
মিঠু আরও বলেন, আমার জানামতে আমার দাদার এসএ বানাতী মৌজায় ১০০ নং খতিয়ানের ৫৯৩ দাগের ১ একর ৪২ শতাংশ, ৬৯৯ নম্বর দলিলে ৬৬ শতাংশ ও ৯৯ খতিয়ানের ৫৮৭ দাগের ২ একর ৭৪ শতাংশ জমি ছিলো। আমার দাদার ৩ জন স্ত্রী ছিলেন। ৩ নম্বর স্ত্রীর ৫ জন ছেলে ওয়ারিশ সূত্রে কোন জমি আজ পর্যন্ত আমার বড় চাচা নাসির হাওলাদার বুঝিয়ে দেয়নি। তিনি তার ছেলে মাকসুদ হাওলাদার, মিজান হাওলাদার ও হালিম হাওলাদারের নামে বিএস রেকর্ড করে নেন। পরে ওই জমি শের-ই-বাংলা নৌঘাটি নির্মানের লক্ষে অধিগ্রহন করলে তিনি সব টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা আমাদের ওয়ারিস সূত্রের সম্পত্তির ভাগ চাইলে সে নানা রকম তালবাহানা শুরু করে। অদ্যবধি সে আমাদের জমি বা টাকা বুঝিয়ে দেয়নাই।
ভূক্তভোগী মিঠু হাওলাদার বলেন, আমার চাচা নাসির হাওলাদারের ছোট ছেলে হালিম হাওলাদার লালুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও পটুয়াখালী এলএ শাখার একজন দালাল। ২০১৯ সে বানাতী বাজারের মেলাপাড়া গ্রামে জমি কেনার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ধার নেয়। টাকা ধার নেয়ার বিষয়ে তার এবং আমার কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রমান হিসাবে রয়েছে। দুই মাসের মধ্যে আমার টাকা ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সে টাকা ফেরত না দেয়ায় ৫ মাস আগে আমি কলাপাড়ার সেনাবাহিনীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করি। সেনাবাহিনী বিষয়টি আমলে নিয়ে লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান ৪ বার সালিশ বৈঠক ডেকেও বিষয়টি মিমাংসা করতে পারেননি। পরে এপ্রিল মাসে আমার চাচাতো ভাইয়েরা লালুয়ার হাসনাপাড়া গ্রামে একটি ট্রলারের মালামাল চুরির মিথ্যা মামলায় আমাকে ষড়যন্ত মূলক ফাঁসিয়ে দেন। এ মামলায় আমি ২৩ দিন জেলে ছিলাম। দীর্ঘ দিনেও আমার পাওনা টাকা না পাওয়ায় আমার স্ত্রী শাহিনুর বেগম ২০ মে আমার চাচাচো ভাই সহ ১৩ জনের নামে কলাপাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু মাত্র পাওনা টাকা ফেরত চাওয়া ও অংশীদার হিসেবে জমি বুঝে পাওয়ার জন্য আমার চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা আমার সম্মান হানি করেছে। বর্তমানে তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। আমি সুবিচার পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে জানতে নাসির হাওলাদারের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মিঠু নিজে জমিজমার বিরোধ নিয়ে আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা করেছে, সে মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়া সে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতেও আমার ছেলে ও স্বজনদের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।
অভিযুক্ত হালিম হাওলাদার বলেন, আমার সঙ্গে মিঠুর টাকা পয়সার লেনদেন হয়নাই। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।