
উখিয়া সিবিও এনজিও এ্যালায়েন্স – UCNA এর এগারো দফা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মানবিক বিপর্যয় গুলোর একটি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেয়, বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলায় । এই সংকটে হোস্ট কমিউনিটি অর্থাৎ স্থানীয় জনগণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
প্রায় দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। এ পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশ সরকারের জন্য নয় , বরং হোস্ট কমিউনিটি বা স্থানীয় জনগণের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তাদের এই আগমন স্থানীয় পরিবেশ, অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
হোস্ট কমিউনিটির জনগণ শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও মানবিক সহায়তা প্রদর্শন করে। তারা নিজেদের সীমিত সম্পদের মধ্যেও খাদ্য, পানি, আশ্রয় এবং সহযোগিতা প্রদান করেছে। শুরুতে এই মানবিক সহায়তা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিক।
রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি হোস্ট কমিউনিটির জীবিকা, জমি, বনজ সম্পদ এবং পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে। স্থানীয় জনগণের জন্য শ্রম বাজার সংকুচিত হয়, কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বন উজাড়ের হার বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবনধারার পার্থক্য থাকায় মাঝে মাঝে সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তার ঝুঁকি এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কাও দেখা গেছে।
তবে হোস্ট কমিউনিটি সাধারণভাবে সহনশীলতা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে।
হোস্ট কমিউনিটির অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের জন্য বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবিকা উন্নয়নে হোস্ট কমিউনিটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক সহায়তা আরও জোরদার হওয়া উচিত।
রোহিঙ্গা সংকটে হোস্ট কমিউনিটির মানবিক অবদান অবিস্মরণীয়। এই বিপর্যয়ের মোকাবেলায় স্থানীয় জনগণের সহানুভূতি, ত্যাগ ও ধৈর্য গোটা বিশ্বের কাছে একটি মানবিক উদাহরণ। তবে এই অবদান টেকসই রাখতে হলে তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট সহায়তা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা অপরিহার্য।
এ লক্ষ্যে ইউসিএনএ র পক্ষ থেকে এগারো দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
১/রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বরাদ্দের ৩০% হোষ্ট কমিউনিটির মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
২/হোষ্ট কমিউনিটির প্রকল্প গুলো হোষ্ট কমিউনিটির এজেন্সির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩/হোষ্ট কমিউনিটির কে জিআরপি তে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং হোষ্ট কমিউনিটি উখিয়া টেকনাফে র বাহিরে ৩০% বরাদ্দ থেকে কোন প্রকল্প নেওয়া যাবে না।
৪/কোন দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্যাম্পে কাজ করতে পারবে না । রোহিঙ্গাদের কোন সংস্থা র মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে ক্যাম্পে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।
৫/অধিকার ভিত্তিক প্রকল্পগুলো, যেমন মানব পাচার প্রতিরোধ, সহিংসতা প্রতিরোধ , জিবিভি ইত্যাদি স্হানীয় এনজিও ও সিবিও দের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে
৬/ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংঘের সংস্থাগুলোর রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে ইউসিএনএ র প্রতিনিধি বা হোষ্ট কমিউনিটির প্রতিনিধি র উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৭/ উখিয়া টেকনাফে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৮/যানজট নিরসনে বাইপাস সড়ক তৈরি করতে হবে এবং একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
৯/ হোষ্ট কমিউনিটির মানুষের জন্য মানবিক প্রকল্প গুলো চলমান রাখতে হবে এবং কোন অজুহাতে বন্ধ করা যাবে না ।
১০/ UCNA এর সাথে RRRC, DC ও UN এজেন্সিগুলো র মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে।
উখিয়া তে আইনপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কে প্রয়োজনীয় সাপোর্ট করতে হবে।
১১/ সম্প্রীতি রক্ষায় সম্প্রীতি পরিষদের কর্মকাণ্ডে
স্বীকৃতি প্রদান করে রোহিঙ্গা ও হোষ্ট কমিউনিটির মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
সংলাপ এ এগারো দফা দাবি উপস্থাপন করেন হেলপ এর নির্বাহী পরিচালক UCNA এর সভাপতি আবুল কাশেম
বাংলাদেশ জামাত ইসলামী র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আমির মাওলানা আবুল ফজল
উপজেলার সেক্রেটারি মাওলানা সুলতান আহমদ
মাওলানা আবদুর রহিম, মাওলানা আবুল হোসেন মাস্টার মুহাম্মদ হাশেম,মোহাম্মদ ইউনুছ, মনজুর আলম
উখিয়া সিবিও এনজিও এ্যালায়েন্স -UCNA এর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন , মোহাম্মদ শাহ আলম, রাকিব আল হাসান, রাশেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল মারজুদুর রহমান আয়াত,নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ,মনজুর আলম, খোরশেদ আলম বাবু , আব্দুর রহমান প্রমুখ।