সোমবার - ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২০শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

হলফনামার সাথে বাতিল শিক্ষাসনদ দেওয়ার অভিযোগ চট্টগ্রাম -৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মামুনের

হলফনামার সাথে বাতিল শিক্ষাসনদ দেওয়ার অভিযোগ চট্টগ্রাম -৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মামুনের

বেশ কয়েক বছর আগেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির বাতিল হওয়া শিক্ষাসনদ নির্বাচনী হলফনামায় দাখিল করার অভিযোগ ওঠেছে চট্টগ্রাম -৪ আসনের নৌকার মাঝি এস এম আল মামুনের।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম – ৪ (সীতাকুণ্ড, আংশিক পাহাড়তলী ও আকবরশাহ) আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত এস এম আল মামুন বাতিল হওয়া ওই সনদপত্র দাখিল করেছেন বলে একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি এ বাতিল হওয়া সনদ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও সংরক্ষিত।
দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করা ও নির্বাচন কমিশনে সনদ জমা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম – ৪ (সীতাকুণ্ড, আংশিক পাহাড়তলী ও আকবরশাহ) আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এস এম আল মামুন বলেন, আমি দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাইভেটে এমবিএ করেছি। এই সনদপত্র নিবার্চনী হলফনামার সাথে জমা দিয়েছি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সনদ বাতিল করা হয়েছে সে হিসেবে আপনার সনদও বাতিল। তাহলে বাতিল সনদপত্র কেন জমা দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ২০০৬ সালে পাশ করেছি আমাদের সনদ বহাল আছে এর পরে যারা ভর্তি হয়েছে বা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে। ২০০৬ এর সনদও বাতিল করা হয়েছে বললে সেটি তিনি জানেন না বলে এড়িয়ে যান এবং মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। । উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক বিগত ৮ আগস্ট ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে ইউজিসি/বেঃবিঃ/৪৮৪(জেপা)/২০১৬/৬৬৫৫ নং স্মারকে জনস্বার্থে ও অভিবাবকদের অবগতির জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়েছে,”জনস্বার্থ এবং অভিবাবক ও শীক্ষার্থীদেও জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর অধিনে বর্তমানে ১০৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে যে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যা বিরাজমান সেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা জনস্বার্থে এবং অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে পূর্বের ন্যায় প্রকাশ করা হলো। উল্লেখ্য যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের হালনাগাদ তথ্য সময়ে সময়ে কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।” এই বিজ্ঞপ্তির ঝ অনচ্ছেদে বলা হয়েছে মাননীয় আদালতের আদেশ বলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইহার সকল আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে দেশের সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে।
এর পর ২০২১ সালের ৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের এর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ” দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য: ১১-০৪-২০১৬ পর্যন্ত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দেয়া হচ্ছে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হল:
১। দারুল ইহসানের সনদের বৈধতা দেয়া সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।
২। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে, ৩৭.০০.০০০০.০৭৮.৩১.০০১.১৯.৩৪ নং স্বারকে “দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক মাহমুদ আহমেদের অনুকূলে বৈধ ২৯ টি ক্যাম্পাসের সকল শিক্ষার্থীদের সনদের বৈধতা প্রদানের সম্মতি দেয়া গেল এবং একই সাথে শিক্ষার্থীদের মূল সনদ ইস্যু কার্যক্রম পরিচালনা পর্ষদের ৩ জনের তালিকা প্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো” বক্তব্যে যে আদেশটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে সে আদেশটি ভুয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই রকম কোন আদেশ জারি করা হয়নি এবং ওয়েব সাইটেও প্রকাশ করা হয়নি। এ ভুয়া আদেশের প্রেক্ষিতে কেউ যেন কোন রকমের অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।
৩। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত হল, মামলা সংক্রান্ত কারণে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের হাল নাগাদ প্রতিবেদন প্রেরণের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে এবং এই সংক্রান্ত একটি আদেশ ওয়েব সাইটি প্রকাশ করা হয়েছিল।
উল্লেখিত বিষয়, বিবেচনা করে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের বৈধতা দেয়া সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হলো।
২০১৬ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টের এক চূড়ান্ত রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই রায়ে যেহেতু ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে দেওয়া সব সার্টিফিকেটও অবৈধ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সেসময় গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে রিটার্ণিং অফিসার ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো তোফায়েল ইসলামকে মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। এ বিষয় নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসারের একান্ত সহকারী মো : আরিফুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখন আমাদের করার কিছু নেই। এখন এ বিষয়টি দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশনের। কারো কোন বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn