
রাঙামাটিতে শেষ হলো সাংগ্রাই জলউৎসব:
স্নিগ্ধতা, ভালোবাসা আর উৎসবের উচ্ছ্বাসে ভিজল পাহাড়
পরম স্নিগ্ধতায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় একে অপরকে ভিজিয়ে মারমা তরুণ-তরুণীদের আয়োজনে রাঙামাটির চিংহ্লামং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই জলউৎসব। এর মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বড় সামাজিক উৎসব—বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিসু, বিহু—উৎসব শেষ হলো ।
শনিবার দুপুর ১২টায় মারমা সংস্কৃতিক সংস্থা (মাসস) এর উদ্যোগে আয়োজিত এই জলউৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ কিছু নেই। বৈষম্য দূর করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে সকলের জন্য।” তিনি শিক্ষা ভিত্তিক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের জন্য স্যাটেলাইট এডুকেশন পলিসির পাশাপাশি আবাসিক হোস্টেল গড়ে তোলা জরুরি।
তিনি আরও জানান, খাগড়াছড়িতে অপহৃত পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সাংগ্রাই উৎসব পাহাড়ে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
মারমা সংস্কৃতি সংস্থার সভাপতি থোয়াই সুই খই মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার,রাঙামাটি জোন কমান্ডার লে,কর্নেল জুনাইদ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন,রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু ও সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, মাসস এর কেন্দ্রীয় কমিটির পাইসিং মং মারমা, মাসস সাধারন সম্পাদক উষানু মারমা নয়নসহ আরও অনেকে।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন,
নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে সমবায় সমিতির মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করা হবে। দেশের বৈষম্য দুর করা এবং আর্থিক উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে সরকার কাজ করছে।
উৎসবে প্রধান অতিথি ফিতা কেটে ও পানি ছিটিয়ে জলকেলির উদ্বোধন করেন। এরপর মারমা তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে একে অপরকে জল ছিটিয়ে অংশ নেন ঐতিহ্যবাহী এ খেলায়। সঙ্গে চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। পাহাড়ি-বাঙালি মিলনমেলায় পরিণত হওয়া এ আয়োজন দেখতে হাজারো মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন।
যদিও সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে কাউখালী, কাপ্তাই ও রাজস্থলী থেকে অনেকেই উপস্থিত হতে পারেননি, বৃষ্টি থামার পরপরই স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয় হাজারো উৎসুক মানুষে।
মারমা সম্প্রদায়ের এই ঐতিহ্যবাহী জলউৎসব শুধুমাত্র আনন্দ ও বিনোদনের উপলক্ষ নয়, এটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও জাতিগত সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে।