বুধবার - ১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি কাবিন এর কবি আল মাহমুদের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

সোনালি কাবিন এর কবি আল মাহমুদের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

আজ কবি আল মাহমুদের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৩৬ সালে ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল এবং পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। এই সময় থেকে তাঁর লেখালেখি শুরু। তিনি ২০১৯ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুরবণ করেন।

১৯৫০ সালে যে ক’জন লেখক বাংলা ভাষা আন্দোলন, জাতীয়তাবাদ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নিপীড়ন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি করেছেন তাদের মধ্যে আল মাহমুদ অন্যতম। ‘লোক লোকান্তর’ (১৯৬৩), ‘কালের কলস’ (১৯৬৬), ‘সোনালি কাবিন’ (১৯৭৩) ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। কবি আল মাহমুদ তাঁর গল্প ও উপন্যাসের জন্যও বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। তাঁর সাড়াজাগানো কাব্যগ্রন্থ একটি সনেটে বলেছেন,  “সোনার দিনার নেই, দেনমোহর চেয়ো না হরিণী”। তিনি শুধু কবি নন, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক,  ছোটগল্পকার শিশুসাহিত্যিক এবং পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন।

লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে আল মাহমুদ ঢাকা আগমন করেন। কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক কাফেলা’ পত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হয়। পাশাপাশি তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারত গমন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের পর কবি ‘দৈনিক গণকণ্ঠ’ নামক পত্রিকায় প্রতিষ্ঠা-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি গল্প লেখার দিকে মনোযোগী হন। ১৯৭৫ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্প গ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর তিনি পরিচালক হন। পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সালে বের হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’।

তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার নগরকেন্দ্রিক প্রেক্ষাপটের বিপরীতে ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে তাঁর কবিতায় অবলম্বন করেন।

১৯৬৮ সালে ‘লোক লোকান্তর’ ও ‘কালের কলস’ নামে দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম সোনালি কাবিন।

১৯৭০ সালের শেষার্ধে তার কবিতায় বিশ্বস্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস উৎকীর্ণ হতে থাকে; এর জন্য তিনি প্রগতিশীলদের সমালোচনার মুখোমুখি হন। কোন কোন তাত্ত্বিকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বিশ্বাসের কারণে তার বেশকিছু কবিতা লোকায়তিক সাহিত্যদর্শন দৃষ্টান্তবাদ দ্বারা অগ্রহণযোগ্য। এ কথাও সত্য, কবিতায় দর্শন থাকে, কিন্তু দর্শন দ্বারা কবিতা নিয়ন্ত্রিত নয়।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn