শনিবার - ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২২শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সুবর্ণচরে কোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও

সুবর্ণচরে কোটি টাকা নিয়ে উধাও ভুয়া এনজিও

 

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা নামক একটি ভুয়া এনজিও’র পরিচয়ে একটি প্রতারক চক্র গ্রামের সহজ-সরল মানুষ থেকে কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে। প্রথমে মানুষকে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে সঞ্চয় জামানত হিসেবে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় ভুয়া এনজিওটি।

এনজিওটির দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঋনের টাকা গ্রহণ করতে ভুক্তভোগী লোকজন আজ বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ৩ টায় সুবর্ণচরের চরবাটা খাসেরহাট রাস্তার মাথার উত্তরে ওজিফা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন নতুন একটি ভবনে ভাড়া নেওয়ার সংস্থাটির অফিসে এসে দেখে অফিসে তালা মারা। পূর্বে গ্রাহকের কাছে এই অফিসের সাইনবোর্ড দেখিয়ে অফিসের ঠিকানা দেখালেও গ্রাহকেরা এসে দেখে এখানে ঋণ প্রদানের কোনো কার্যক্রম নেই। তাতে লোকজনের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হলে তাদের দেয়া নম্বরে কল করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর তারা নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, তারা বড় ধরনের একটি প্রতারণার শিকার হয়েছে।

এরপর খবর পেয়ে আরো ভুক্তভোগীরা সেখানে জড়ো হয় এবং পুলিশকে খবর দেয়া হলে তাৎক্ষণিক পুলিশ আসে। উপস্থিত লোকজন পুলিশের কাছে ভুয়া অফিসের কাছে বাড়ি ভাড়া দেওয়া বাড়িওয়ালাকেও দায়ী করে অভিযোগ জানায়। তাতে বাড়িওয়ালা মাইন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, আমার নতুন বিল্ডিংয়ে অফিস হিসেবে ভাড়া নেওয়ার জন্য গতকাল কয়েকজন লোক এসেছে এবং আজকেই তাদের সাথে বাড়িভাড়া চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তারা যে ভুয়া এবং প্রতারক এই বিষয়টা আমার জানা ছিল না।’ এরপর পুলিশ তালা ভেঙ্গে অফিসের ভিতরে সাংবাদিক ও ভুক্তভোগী লোকজন সহ প্রবেশ করলে ভেতরে ভাড়া নিয়ে কয়েকটা চেয়ার টেবিল এবং লেখা বিহীন কয়েকটি রেজিস্টার খাতা ও কয়েকটি ফাইল দেখা যায়। এতে বোঝা যায় প্রতারক চক্র খুব কৌশলেই মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

প্রতারণা বিষয়ে চর জুবলি ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বললে নুরবানু নামক এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমাকে ১০ লক্ষ টাকা দিবে বলে আমার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছে। হাসিনা আক্তার নামে আরেক ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমাকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা দিবে বলে আমার থেকে ৪২ হাজার টাকা নিয়েছে। আলেয়া আক্তার নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, আজ সকাল ১০ টায় আমাদের কাছ থেকে গ্রুপভিত্তিক করে টাকা নিয়েছে আজকেই লোন দিয়ে দিবে বলায় আমিও ৪২ হাজার টাকা দিয়েছি। মোঃ খলিল নামক এক ব্যক্তি বলেন, গতকালকে আমাদেরকে লোন দিবে বলে জানিয়ে টাকা প্রস্তুত রাখতে বলে। আজ সকালে আমি ঠিকানা অনুযায়ী সাইনবোর্ড ঝুলানো অফিসে এসে দেখি অফিসে ৭-৮ জন লোক আছে এবং আজকে অনুষ্ঠান করে টাকার চেক হস্তান্তর করবে। অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে প্যান্ডেলেরও ব্যবস্থা করছে এবং সবাইকে আপ্যায়নের জন্য দাওয়াতও দেয়া হয়েছিল। এসব দেখে আমি নিজেও ১১ হাজার টাকা জমা দিই। ভুক্তভোগীদের দাবি অনুযায়ী এভাবে প্রায় দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

এ ব্যাপারে চর জব্বার থানার ওসি মো. শাহীন মিয়া বলেন, এই ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। প্রতারক চক্রটি ধরার জন্য পুলিশ কাজ করবে। এছাড়াও তিনি প্রতারণা থেকে বাঁচতে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn