
সুন্দর বন এলাকা ঐতিহ্যবাহী হরিনখালী মাতা বনবিবি মেলা
দক্ষিণ ২৪পরগনার জেলার জয়নগর এক নম্বর ব্লকের জাঙ্গালিয়া অঞ্চলের হরিনখালী মাঠে মাতা বনবিবি মন্দিরে আজ অর্থাৎ ২রা মাঘ মকর সংক্রান্তির উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হল মাতা বনবিবি মায়ের পূজা অর্চনা ও মিলনমেলা ।মাতা বনবিবি মায়ের এই মেলা এবছর ৭৫বছরে পদাপন করেছে । মাতা বনবিবি মন্দিরে মেলা কমিটির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বারুইপুর পূর্বের বিধান সভার বিধায়ক বিভাস সরদারের এবং দক্ষিণ বারাসত ইলেকট্রিক অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সরকারের ঐকান্তিক সহযোগিতায় বনবিবি মায়ের মন্দিরে এবছর ইলেকট্রিক সংযোগ মাধ্যমে মাতা বনবিবি মন্দিরে আলো আলোকিত হয়েছে। এবছর এইরকম একটি উন্নয়ন মূলক কাজে এগিয়ে আসায় মাতা বনবিবি মায়ের মেলা কমিটির সভাপতি শৈলেন মন্ডল বারুইপুর পূর্বের বিধান সভার বিধায়ক বিভাস সরদার কে এবং দক্ষিণ বারাসত ইলেকট্রিক অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সরকার কে ধন্যবাদ অভিনন্দন জানায় । এবছর মেলা কমিটির পক্ষথেকে বারুইপুর পূর্বের বিধান সভার বিধায়ক কাছে দাবী রাখেন খলিল গাজী মোড় থেকে মাতা বনবিবি মায়ের মন্দির পর্যন্ত রাস্তা যাহাতে পাশে চওড়া করা যায় তাহার দাবি জানায় ।বিধায়ক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন আমি যদি আজ এই মহামিলন মেলায় না উপস্থিত হতাম তাহলে আমি এই মেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতাম ।আমি এই প্রথম দেখলাম একদিন মেলায় ভিড়। তিনি বলেন আমি সামনের বছরের মেলাটি আরো কিভাবে উন্নয়ন করাযায় তার আমি চেষ্টা করবো। তিনি মেলা কমিটির উদ্দেশ্যে বলেন সামনের বছরে মেলার ১৫দিন আগে আমি জয়নগর এক নম্বর ব্লকের একটি প্রশাসনিক বৈঠক ব্যাবস্থা করবো। এই মহামিলন মেলায় জয়নগর বিধানসভায় বিধায়ক শিক্ষক বিশ্বনাথ দাস উপস্থিত হয়ে বলেন আমি আমার তহবিল থেকে একটি হাইমাসলাইট দেব মাতা বনবিবি মন্দিরে জন্য।মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন। মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ নিবিড়।বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সংস্কৃতির সমন্বয় । মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। এখনও নাগরদোলা সব বয়সীদের কাছে প্রধান আকর্ষণ।
গ্রামীণ মৃৎশিল্প ও কারুপণ্যের বিকিকিনি মেলার আরেক আকর্ষণ। এসব মৃৎশিল্পের মধ্যে শখের হাঁড়ি, বিভিন্ন ধরনের মাটির পুতুল বেশ জনপ্রিয়।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী। কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করে মহৎ’।
কবিগুরু যথার্থই বলেছেন। উপলক্ষ যাই হোক না কেন, বাঙালির সকল উৎসবের মধ্যে একটা সার্বজনীন রূপ আছে। এতে ধর্ম, সম্প্রদায়, জাত-পাত বা ধনী-গরিবের সামাজিক বিভক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বরং সকল শ্রেণির মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়। আর এ কারণেই কালের বিবর্তনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতার ধরন পাল্টালেও আবহমান বাংলার সামাজিক উৎসব, পার্বণ বা গণমানুষের মেলবন্ধনের ঐতিহ্য-কৃষ্টিগুলো আজও হারিয়ে যায়নি। মেলা মানেই মহামিলন। মানুষের উচ্ছ্বাস-উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটে মেলার মধ্য দিয়ে। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে মেলা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে দেয়। গ্রাম-বাংলার মেলা তাই হাজার বছরের ঐতিহ্যের এক মহা সম্মিলন।
ধর্মীয় চেতনার বাইরে অন্যান্য সামাজিক বা লৌকিক আচারগুলোও যুক্ত হতে থাকে মেলার সঙ্গে।
ভারতের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গ্রামীণ মেলার ওপর দেশজুড়ে এক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে ১৯৮৩ সালে। এই মহামিলন মেলায় উপস্থিত ছিলেন বারুইপুর পূর্বের বিধান সভার বিধায়ক বিভাস সরদার, বারুইপুর ব্লক সহ-সভাপতি শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর, মহেশ, জয়নগর বিধানসভার বিধায়ক শিক্ষক বিশ্বনাথ দাস , জয়নগর থানার ওসি পার্থসারথি পাল সহ জয়নগর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী,হরিনারায়নপুর অঞ্চলের তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রতাপাদিত্য অধিকারী,মাতা বনবিবি মন্দিরে পূজা কমিটির সমস্ত সদস্য,সভাপতি শৈলেন মন্ডল,গোবিন্দ সহ চারশত অধিক স্বেচ্ছাসেবক বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গগন।