রবিবার - ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২০শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সিঙ্গাপুরে পুনরায় পিএপি’র নিরঙ্কুশ বিজয়

সিঙ্গাপুরে পুনরায় পিএপি’র নিরঙ্কুশ বিজয়

 

সিঙ্গাপুরের সাধারণ নির্বাচনে পিপলস অ্যাকশন পার্টি (পিএপি)-এর ভূমিধস বিজয় আবারও প্রমাণ করে দিল যে দেশটির রাজনীতিতে এখনো ধারাবাহিকতা এবং স্থিতিশীলতাকেই বড় ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে ভোটাররা। প্রায় সাত দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা পিএপি শনিবার (৩ মে) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৯৭টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৮৭টিতেই জয়ী হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি আসনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছে, যা সিঙ্গাপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় অর্জন এবং একই সঙ্গে নতুন প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং-এর জন্য এক বিশাল জনগণের ম্যান্ডেট।

এই ফলাফলের মাধ্যমে দেশটির টানা ৬৬ বছরের একদলীয় শাসনের ধারা অব্যাহত রইল এবং সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়াং পেলেন পূর্ণাঙ্গ জনমতের সমর্থন। এটি ছিল ওয়াংয়ের অধীনে প্রথম জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের পর লরেন্স ওয়াং বলেন, “এত দৃঢ় ম্যান্ডেট পেয়ে আমি অনুতপ্ত ও কৃতজ্ঞ। জনগণ একটি শক্তিশালী সরকার চায় এবং আমরা সেই প্রত্যাশা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সিঙ্গাপুরের নির্বাচন বিভাগ জানায়, এবার পিএপি’র জনপ্রিয় ভোট শতাংশ দাঁড়িয়েছে ৬৫.৬ শতাংশে, যা ২০২০ সালের ৬১ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

এদিকে প্রধান বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের আগের ১০টি আসন ধরে রেখেছে। দলটির নেতা প্রিতাম সিং বলেন, “এটি ছিল কঠিন একটি লড়াই। আমরা আগামীকাল থেকেই আবার নতুনভাবে কাজ শুরু করব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া কিছুটা বিস্ময়কর। সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইউজিন ট্যান বলেন, “ভোটাররা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তারা স্থিতিশীলতা ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।”

২০২৪ সালের মে মাসে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, যিনি দুই দশক ধরে দেশ শাসনের পর লরেন্স ওয়াংয়ের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তার এই বিদায়ে শেষ হয় লি পরিবারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অধ্যায়, যার সূচনা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ’র মাধ্যমে।

তবে নির্বাচনে পিএপি’র জয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সমালোচকরা মনে করছেন, নির্বাচনী এলাকা পুনর্বিন্যাস (গেরিম্যান্ডারিং), বিরোধীদের সম্পদের ঘাটতি, রাজনৈতিক পরিবেশে নিয়ন্ত্রণের উপস্থিতি এবং তরুণ ভোটারদের হতাশা বিরোধীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের নতুন সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ওয়াংকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আমাদের কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও জোরদার হবে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারকার জয়ে ওয়াং সরকারের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হলেও সামনের দিনে অর্থনৈতিক বৈষম্য, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং গণতন্ত্রের পরিসর সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই হবে বড় পরীক্ষা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn