
সিকান্দার’ এবং সালমান খান
কয়েক বছর ধরে সালমান খান অভিনীত সিনেমার বাজার পড়তির দিকে। মাঝখানে একই অবস্থা হয়েছিল শাহরুখ খানের। ২০২৩ সালে টানা তিন সুপারহিট সিনেমা দিয়ে প্রবলভাবে ফিরেছেন তিনি। সালমানের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। অবস্থা এতটাই খারাপ, সালমানের পেছনে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতেও সাহস পাচ্ছেন না প্রযোজকেরা। এ কারণে নাকি অ্যাটলির সঙ্গে সালমানের সিনেমা আপাতত স্থগিত হয়েছে।
সে যা—ই হোক, এবার আসা যাক ‘সিকান্দার’ প্রসঙ্গে। ঈদ উপলক্ষে গত ৩০ মার্চ মুক্তি পেয়েছে সালমান খানের ‘সিকান্দার’। বিগ বাজেটের এ সিনেমা নিয়ে তুমুল উত্তেজনা বলিউড ভাইজানের ভক্তদের মধ্যে। অগ্রিম বুকিংয়ের ক্ষেত্রেও নজির গড়েছিল সিনেমাটি। স্বাভাবিকভাবেই মেগা ওপেনিংয়ের অপেক্ষায় ছিল টিম সিকান্দার। কিন্তু মুক্তির আগেই বড়সড় ধাক্কা খায় সিকান্দার টিম। জানা গেছে, শনিবার গভীর রাতে সিনেমাটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। একটি—দুটি নয়, ৬০০টি ওয়েবসাইটে সিনেমাটি ফাঁস হয়েছে। টেলিগ্রামের একাধিক গ্রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে সিকান্দারের ডাউনলোড লিঙ্ক। বিষয়টি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নাদিয়াদওয়ালা গ্র্যান্ডসন এন্টারটেইনমেন্ট।
সিকান্দার পরিচালনা করেছেন এ আর মুরুগাদোস। তাঁর পরিচালনায় এটি প্রথম কাজ সালমানের। আরেক প্রথম, এতে রাশমিকা মান্দানা প্রথমবারের মতো হয়েছেন সালমানের নায়িকা। চলুন এবারে জেনে নিই সিনেমায় কী আছে? ‘টাইগার ৩’ সিনেমার প্রায় দু’বছর পর ফের ভাইজানকে বড়পর্দায় দেখার আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। সালমানের সিনেমায় আবার উপরি পাওনা ছিল রাশমিকা মন্দানার উপস্থিতি। প্রথমবার তাদের অনস্ক্রিন রোমান্সের জন্য উদগ্রীব ছিলেন অনুরাগীরা। পরিচালক এ আর মুরুগাদোস এক্কেবারে চেনা অ্যাকশন ছকে শুরু ছবি করেছেন।
আকাশপথে মন্ত্রীর ছেলে প্রতীক বব্বরকে ‘সবক’ শেখানোর দৃশ্য দিয়ে পর্দায় আসেন সালমান। তারপরই আগমন রাজকোটের ‘রানী’ রাশমিকার। তিনি রাজকোটের শেষ রাজা সঞ্জয় রাজকোটের স্ত্রী। গল্পের এক এবং একমাত্র টুইস্ট রানীর মৃত্যু। এখান থেকে ঘুরে যায় গল্পের মোড়। রানী মৃত্য়ুর আগে ফুসফুস, হার্ট এবং চক্ষু দান করে গিয়েছিল। পত্নী বিয়োগের পর স্ত্রীকে ‘ফিরে পেতে’ সেই মানুষগুলোর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে ভেঙে পড়া ‘রাজা সাহেব’। তাতেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। গল্পের শেষে সিকান্দার শুধু রাজকোটের রাজা না, মানুষের মনেরও রাজা হয়ে ওঠে।
সিকান্দার ছবির জমকালো ট্রেলার লঞ্চের সময়, সালমান খান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, উৎসব হোক বা না হোক, তাঁর অনুগত ভক্তরা সবসময় নিশ্চিত করেন যে তাঁর ছবি ১০০ কোটির ব্যবসা ছাড়িয়ে যাবে এবং এবার এটি ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি এলেন। দেখলেন। মন জয়ও করলেন। শুধুই সালমান খান হিসেবে। কারণ তাঁর ছবির গল্প ভক্তদের মন জয় করতে ব্যর্থ। স্টারডম, পর্দায় লার্জার দ্যান লাইফ, মারকাটারি অ্যাকশন দেখতে দর্শকরা নিঃসন্দেহে ভালোবাসেন। কিন্তু ওই যে, আসল নায়ক তো ছবির গল্পই। সেখানে দুর্বল ‘সিকান্দার’।
শুধু সিনেমার কাহিনি নয়, দুর্বল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে দর্শক খুব হতাশ। সোশ্যাল মিডিয়া হতাশ ভক্তদের প্রতিক্রিয়ায় ভরে উঠেছে, যারা দাবি করছেন যে সিকান্দারে কোনো আকর্ষণীয় গল্প নেই।
কেউ কেউ এটিকে সালমানের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ ছবিও বলছেন। যদিও সালমান খানের তারকা শক্তি সবসময় দর্শকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে, এবার মনে হচ্ছে তাঁর সবচেয়ে অনুগত ভক্তরাও সিকান্দার ছবিতে তাঁর অভিনয়কে সমর্থন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই তাঁর অভিনয়ের সমালোচনা করেছেন।
সালমান খানের পাশে নেই বলিউড
সহকর্মীদের দুঃসময় থেকে সুসময়—শতব্যস্ততার মধ্যে সবার আগে হাজির হন বলিউড তারকা সালমান খান। তাঁর মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে সুযোগ পেয়েছেন অনেক অভিনেতা থেকে নির্মাতা। নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পেলেও তিনি উৎসাহ দেন। কিন্তু নিজের সিনেমা মুক্তির পর তাঁর পাশে নেই কেউ। যেন গোটা বলিউড নীরব। আক্ষেপ করেই তাই সালমান বললেন, ‘আমারও উৎসাহ দরকার পড়ে।’
হত্যাচেষ্টা থেকে হুমকি; এর মধ্যে বক্স অফিস ব্যর্থতা—সময়টা ভালো যাচ্ছে না সালমান খানের। হত্যা হুমকির মধ্যে ‘সিকান্দার’ সিনেমার শুটিং করেছেন তিনি। তাই এই ছবি নিয়ে তাঁর অনুরাগীদের প্রত্যাশাও ছিল তুঙ্গে। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। অনেকেই মনে করছেন, প্রচারণার ঘাটতির কারণেও সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সুবিধা করতে পারেনি। নিরাপত্তার কারণে তেমন কোনো প্রচারে পাওয়া যায়নি সালমান খানকে। তবে তাঁর অনুরাগীদের অনেকে মনে করছেন, বলিউডের অন্য তারকারা ‘সিকান্দার’—এর প্রচারণায় পাশে থাকলে সিনেমাটির ভাগ্যে আরও ভালো কিছু থাকতে পারত। বলিউড বাবলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও প্রসঙ্গটি এসেছে। সেখানে সঞ্চালক সালমানের কাছে জানতে চান, সবাইকে তিনি উৎসাহ দিলেও তাঁর পাশে কেন কেউ নেই? এই প্রশ্নের পর সালমানের অভিব্যক্তি দেখে অনুরাগীদের মন ভেঙেছে। সেখানে তাঁকে বিধ্বস্ত ও ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। উত্তরে সালমান বলেন, ‘ওরা সবাই হয়তো ভাবে, আমার ছবির জন্য আলাদা করে উৎসাহ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সবারই উৎসাহের দরকার পড়ে।’