সোমবার - ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৭শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরার বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ নিয়ে রশি টানাটানি-স্থায়ী সমাধানের দাবী

সাতক্ষীরার বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ নিয়ে রশি টানাটানি-স্থায়ী সমাধানের দাবী

প্রায় ১০ মাস ধরে আশাশুনির বড়দল আফতাব উদ্দিন কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ নিয়ে টানাটানি চলছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি কে? এ প্রশ্নের জবাব নেই খোদ প্রশাসনের কাছে। সব মিলিয়ে একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ। একে অপরকে দোষারোপ, বিদ্রুপ, কটাক্ষ ও নানামুখী তৎপরতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. শিহাব উদ্দিন সাতক্ষীরা সিটি কলেজে চাকরি নিয়ে চলে গেলে অধ্যক্ষের পদটি শূন্য হয়। এরপর শূন্য পদে সহকারী প্রধান শিক্ষক তরুণ কান্তি সানা অথবা কলেজ শাখার সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ আলীর স্থলাভিষিক্ত হবার কথা থাকলেও তৎকালীন সভাপতি সাবেক সাংসদ দুর্নীতিবাজ ডাঃ মোখলেছুর রহমান তা না করেননি। তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ১৩ নং শিক্ষক বাবলুর রহমান কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে বসিয়ে রেজুলেশন করেন। একই সময়ে ৫টি শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান ছিল। জনশ্রুতি আছে চাকরী দেওয়ার নাম করে সে সময় প্রায় অর্ধকোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে।
বাবলুর রহমান দায়িত্ব পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা পূণরায় আয়োজন করতে গেলে বিপত্তি দেখা দেয়। এসময় নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে পত্র পত্রিকায় একাধিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
৫ আগষ্ট দেশের পট পরিবর্তন হওয়ার পর কয়েক দিন অনুপস্থিত থাকার পর ১২ আগষ্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবলুর রহমান তার কার্যালয়ে আসেন। তখন থেকেই তাকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন সহ ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগে তার পদায়ন বাতিল করতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ আলী।
বিধি মোতাবেক দায়িত্ব প্রাপ্তির দাবিদার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর খুলনা শিক্ষা অফিস থেকে বাবলুর রহমান কে দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশনা এলেও তিনি তা না করে আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। এবং আদেশটি কেন অবৈধ নয় এ মর্মে মহামান্য হাইকোর্টে ১০৯৬৫/২৪ নং রিট পিটিশন দায়ের করেন।এরপর ৮ সেপ্টেম্বর যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে আবারো তাকে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য বলা হয়। সে সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় সরকারি আইনজীবীর কাছে আইনি মতামত নিয়ে বোর্ডে প্রেরণ করেন। আদালতে মামলা থাকায় বোর্ডের আদেশ রোহিত হয়। পরে আদালতে তার মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, ২২ মে যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে কলেজ পরিদর্শক স্বাক্ষরিত এক আদেশে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৩-০৪-২৫ তারিখের স্মারক পত্রের নির্দেশনা মোতাবেক বড়দল আফতাব উদ্দিন কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় কলেজ শাখার জ্যেষ্ঠ তম শিক্ষক কে অবিলম্বে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে বোর্ডকে অবহিত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও সভাপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভাপতি পদ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আতিয়ার রহমান অব্যাহতি নেওয়ার ফলে ও ২৪ মে থেকে বাবলুর রহমান অজ্ঞাত কারণে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে।
তাই বোর্ডের উক্ত আদেশের বলে আমি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে স্কুল প্রতিষ্ঠাতা পরিবারে সদস্য, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষক ও ছাত্রদের উপস্থিতিতে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। সাথে সাথে অফিসিয়ালি দায়িত্ব পেতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার প্রস্তুতি নিয়েছি।
এর আগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বাবলুর রহমান (কয়রা-পাইকগাছা) সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবুর পকেটের লোক হওয়ায় ক্ষমতার বলে ১২ জন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে উপেক্ষা করে চেয়ার দখল করেছিলেন। বর্তমানে তার শান্তি পূর্ণ ও আইনানুগ সমাধান হয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রতিষ্ঠানে আমার থেকে কেউ সিনিয়র হলে তাকে দায়িত্ব দিলেও আমার কোন আপত্তি নেই।
অপরদিকে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল বাবলুর রহমান বলেন, বিজ্ঞ আদালতের রায় অনুযায়ী আইনত ভাবে আমি এখনো বৈধ আছি। মোহাম্মদ আলী কিছু লোকজন নিয়ে জোর পূর্বক প্রিন্সিপালের রুমের তালা ভেঙে চেয়ার দখল করে অনেক প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র তসরুপ করেছেন।
প্রিন্সিপালের রুমে তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করা ও কাগজপত্র তসরুপ করার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী (এমএলএস) সুনিল কুমার বিশ্বাস বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা পরিবারের সদস্য ও সাবেক শিক্ষক- অভিভাবক-ছাত্ররা এসে রুমের তালা খুলে দিতে বললে আমি তালা খুলে দেই। তারা কিছুক্ষন সেখানে বসে আলোচনা করে মোহাম্মদ আলী স্যারকে দায়িত্বে বসতে বলে চলে যায়।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মোহাম্মদ আলীকে বসানোর বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতার কন্যা হাসিনা বেগম বলেন, স্কুলের সভাপতি পদে কেউ দায়িত্বরত না থাকায় শিক্ষাবোর্ডের সর্বশেষ চিঠি অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আমরা সবাই মিলে মোহাম্মদ আলীকে দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে বলেছি। অবশ্য প্রশাসন যখন সভাপতি হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দিবেন তখন তিনি প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিবেন।
এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আতিয়ার রহমান বলেন, আমি বড়দল কলেজিয়েট স্কুলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। এ পদ থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। বর্তমানে স্কুলের সভাপতি কে জানতে চাইলে তিনি জানেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় জানান, বিষয়টা আমার কানে এসেছে।প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমানের সঙ্গে আলোচনা করলে বিস্তারিত জানা যাবে। আতিয়ার রহমান আগেই পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn