শনিবার - ২১শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২৫শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরার থানাঘাটা নারানজোলে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল পুনঃখনন প্রকল্পে নয়-ছয়ের অভিযোগ

সাতক্ষীরার থানাঘাটা নারানজোলে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল পুনঃখনন প্রকল্পে নয়-ছয়ের অভিযোগ

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার থানাঘাটা হতে নারান জোল পর্যন্ত অনুমান ১১কিলোমিটার মেইন খাল ও ৫ দশমিক ৯০৮ কিলোমিটার শাখা খাল মোট ১৬ কিলোমিটার ৯০৮ মিটার খাল ৫ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে পুনঃখনন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও সুকৌশলে নয়-ছয় করে প্রকল্প বাস্তবায়নসহ পুকুর চুরির অভিযোগ তুলেছে এলাকাবাসী।
একাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার থানাঘাটা হতে নারানজোল ও সংযুক্ত শাখা খালটি পানি নিষ্কাশনের জন্য জনকল্যাণে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খালের পাড়ে বাড়ি ঘর রয়েছে। কদমতলা বাজার থেকে পশ্চিম দিকে এক পাশে লাবসা অপর পাশে কাশেমপুর গ্রাম। সামনে আগরদাড়ি। প্রবাহমান খালের পাশে রয়েছে কয়েকটি ইটভাটা। উক্ত ইটভাটার মাটি খাল থেকে সংগ্রহ করে থাকেন কয়েকজন ইটভাটার মালিক। সেকারণে খালের গভীরতা ও প্রশস্ততা রয়েছে অনেক বেশি। খালখননের ডিজাইন অনুযায়ী দেখা যায়, কদমতলা ব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে বাইপাস ব্রিজ পর্যন্ত টপ কাটিং কোথাও ৫০ ফুটের বেশি নয়। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, খালের প্রশস্ত সর্বনি¤œ ৬০ থেকে ১৫০ ফুট রয়েছে। সিডিউলের গভীরতা যেটা দেখানো আছে তার থেকে খালের গভীরতা কোন কোন স্থানে গভীরতা অনেক বেশি আছে। খাল খননের নামে ব্যক্তি মালিকানা জমিতে ১০-১২ ফুট চওড়া করে মাটি কেটে সেই মাটি খালের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকদের গাছ গুলো ইচ্ছে মতো কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। বর্ষা মৌসুমে পাড় ভেঙে খালের মধ্যে পড়বে নাব্যতা কমে যাবে। খাল খননের নামে প্রহসন চলছে। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম ইউনুস এন্ড কোং খুলনা শাফি চৌধুরী ও তদারকি কর্তৃপক্ষ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব প্রাপ্তরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার রুবেল জানান, কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে খাল খনন হবে না। প্রকল্প সিডিউল অনুযায়ী কার্যক্রম চলবে।
যারা সরেজমিনে খাল খননের কাজের সাথে যুক্ত লেবার সরদার জানান, তাদের কতৃপক্ষ যে ভাবে কাজ করতে বলছে তারা সেই ভাবে কাজ করছে। জনৈক ব্যক্তি জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে খালের উঁচু জমি থেকে ১০-১২ ফুট চওড়া করে ২ ফুট গর্ত করে মাটিগুলো খালের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে ফলে গভীরতা পরিবর্তে খাল আরও ভরাট করা হচ্ছে। পুনরায় কিছু দিনপর বর্ষা শুরু হলে বেকু দিয়ে খালের মধ্যে ফেলা মাটি তুলে যেখানে ব্যক্তি মালিকানা জমি কেটে ক্যানেল তৈরী করছে ওই ক্যানেল ভরাট করে দিবে। তাহলে আসলে খাল পুনঃখনন প্রকল্প জনকল্যাণে আসছে কতুটুকু ? এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা গেলো খালের মধ্য থেকে মাটি কেটে উপরে রাখতে যেখানে যে রুপ কাটা দরকার সেখানে সেই রুপ খালের মধ্য থেকে মাটি কাটবে কিন্তু এখানে তা করা হচ্ছে না। সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা নয় ছয় করে লোপাট করার পরিকল্পনায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। লোক দেখানোর জন্য খাল পুনঃখননের দরকার নেই বাস্তবে খালটি পুনঃখনন জরুরী। খালের দুইধার কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে। বর্ষার জন্য অপেক্ষায় আছে বর্ষা এলেই বেকু দিয়ে পানি কাদা ঘুলাই দিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জনগণ জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জনগণের দাবি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট দপ্তর হতে একজন ম্যজিষ্ট্রেট দিয়ে ৩দিন পরপর সরজমিনে তদন্ত করলে ধরা পড়বে পরিকল্পিত সিডিউল তৈরী করে সরকারের ৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণে বাস্তবায়িত খাল পুনঃখনন প্রকল্পের নয়-ছয়। সরকারের অর্থ তছরুপ রোধকল্পে প্রকৃত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপকৃত হবে এলাকাবাসী। নয়-ছয় হলে এলাকাবাসী মারাতœক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীনের সাথে তার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে বার বার ফোন করা হলেও ফোনটি রিসিভ না হওয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বার্থে উক্ত প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন সদস্য কমিটির দাবি জানিয়েছেন এলাকবাসী।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn