সোমবার - ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২০শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাজাহান ওরফে গামছা শাহাজাহানের অভিনব কায়দায় নারী কেলেঙ্কারীসহ বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাজাহান ওরফে গামছা শাহাজাহানের অভিনব কায়দায় নারী কেলেঙ্কারীসহ বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

 

আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. শাহাজাহান আলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ‘১২ বছরের অধিক সময় ধরে কর্মরত সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার নারী লোভী, লম্পট, চরিত্রহীন, ধূর্ত, অতি সুমিষ্টভাষী, বেপরোয়া ঘুষখোর, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহাজাহান আলীর নারী কেলেঙ্কারী, আর্থিক দুর্নীতি, প্রতারণাসহ অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে যে, ০২ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে অপরাহ্নে আশাশুনি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফটকা শরিফুল এর বাসায় যায় শাহাজাহান। শবনম মোস্তারীকে সেখানে যাওয়ার জন্য বলা ছিল। কিন্তু শাহাজাহান আগেই পৌঁছে যায় ফটকা শরিফুলের বাসায়। শবনমের যেতে দেরি হওয়ায় গামছা শাহাজাহান শরিফুলের স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলে শরিফুলের স্ত্রী গামছা শাহাজাহানকে জুতা পেটা করতে শুরু করে। ইতোমধ্যে শবনম পৌঁছে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। ততক্ষণে বিষয়টি সবার জানাজানি হয়ে গেছে।

আরো জানা গেছে, গাজী সাইফুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার (বর্তমানে তালা উপজেলায় কর্মরত) ও গামছা শাহাজাহান যৌথভাবে ওই শবনম মোস্তারীর সাথে বিছানা শেয়ার অভিযোগ আগেই ছিলো। গত ২ জানুয়ারি ঘটনায় তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে ৩৪নং আগরদাড়ি সপ্রাবি এর ওই শিক্ষিকার সাথে শাহাজাহান আলী নলতার নিজ বাড়িতে বউ ছেলে-মেয়ে কেউ না থাকার সুবাদে ২৫-১২-২০২২ তারিখ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবৈধ কাজে লিপ্ত ছিলেন। ঘটনা জানাজানি হলে ওই শিক্ষকের স্বামী চাপাচাপি করলে নিজের বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন ০৭-০১-২০২৩ তারিখে। ওই শিক্ষকের স্বামী আবদুল হাই সিদ্দিকী মোবাইল ফোনে প্রতিদিনের কথোপকথনের কললিস্ট শাহাজান আলীর স্ত্রীকে দেখালে তিনি চলতি সপ্তাহে ছুটে যান স্বামী শাহাজানের শিক্ষা অফিস আশাশুনিতে। সেখানে শাহাজাহান আলীর মোবাইল কেড়ে নেওয়াসহ নানারকম সিন ক্রিয়েট করেছে। আরে জানা গেছে যে, শবনম মোস্তারী ও শারমিন নামের দু’ জনের সাথে গামছা শাহাজাহানের অবৈধ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তাদের দু’জনকে যেকোন ধরনের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয় আশাশুনি থেকে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতি অর্থবছরে শাহাজাহান আলী ক্ষুদ্র মেরামত থেকে স্কুল প্রতি নিজের জন্য ১৫হাজার টাকা, শিক্ষা অফিসারের নাম করে ১০হাজার টাকা করে ফিক্সড রেট বেঁধে উত্তোলন করেন। রুটিন মেরামত থেকে ৪হাজার করে উত্তোলন করে। সম্প্রতি শিক্ষকদের স্লিপের বরাদ্দের জন্য বিল হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে পাশ করিয়ে নেওয়ার জন্য তদবির করে শাহাজাহান কিন্তু শিক্ষকদের তুমুল প্রতিরোধের মুখে শাহাজাহানের এ প্রজেক্ট ধোপে টিকেনি।

এছাড়া মতের অমিল হলে শাহাজাহান আলী সে শিক্ষককে বিভিন্ন সময়ে ফোনে হয়রানি করে থাকেন। অথচ তিনি নিজেই সঠিক সময়ে অফিসে আসেন না। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের অনলাইন বদলিতে যে সকল যোগ্য শিক্ষক ছিল তাদেরকে রিজেক্ট করিয়ে অযোগ্যদের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে বদলির সুপারিশ করেছেন। অনলাইনে তথ্য দেখলে প্রমাণ পাওয়া যাবে। প্রতিটি বদলি হতে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এভাবে কমপক্ষে ১৫ লক্ষাধিক টাকা লেনদেন করেছেন। চলতি ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি হতে সম্ভাব্য বদলি হতে পারে সেজন্য শাহাজাহান অন্ততপক্ষে ২০ জন শিক্ষকের নিকট থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে। অডিট ফেস করার নাম করে ২০২৪ সালে বিদ্যালয় প্রতি ৪০০ টাকা করে ৬৫০হাজার টাকা করে বিগত ১০ বছরে ৬ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছেন শিক্ষা অফিসারের যোগসাজসে। চলতি দায়িত্বের জন্য ১০০০ টাকা করে, ১৩তম গ্রেডের জন্য বকেয়া ও অন্যান্য বেতন ছাড়া করার জন্য শিক্ষক প্রতি ১০০টাকা করে করে কয়েকবারে প্রায় ৩লক্ষাধিক টাকা বিভিন্ন সময়ে উত্তোলন করেছেন। কোন শিক্ষক তার এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে শিক্ষা অফিসার স্যারের ভয় দেখান এবং সার্ভিস বহিতে নেতিবাচক মন্তব্য লিখলে পেনশান পাওয়া যাবে না মর্মে হুমকি দেন। এদিকে স্লিপের প্লান তৈরির বই বাঁধাই বাবদ স্কুল প্রতি ৫০০টাকা, ওরিয়েন্টেশন বাবদ স্কুল প্রতি ৩হাজার টাকা, কয়েকটি সেম আইটেম দিয়ে সেখান থেকে মালের তিনগুন টাকা নিয়ে নিজে ১ভাগ ও ব্যবসায়ী ১ভাগ লাভ নেয় শাহাজাহান। গামছা ও তোয়ালে বিক্রি থেকে শুরু করে এহেন কাজ নেই যেটা শাহাজাহান আলী আমাদের ক্লাস্টারে করেন নি। এটিওদের মাঝে গামছা শাহাজাহান নামে শাহাজাহান অধিক পরিচিত। ১১টার আগে অফিসে আসে শাহাজাহন। সে প্রতিদিন সকাল ১০টার আগে তার নলতার বাসা থেকে রওনা হয় না। তার স্কুলগুলোতে বলা আছে কেউ যদি ফোন করে তারা বলবে যে স্যার এইমাত্র ভিজিট করে চলে গেলেন। শাহাজাহান আলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুন্নাহার স্যারের সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৮ এর নম্বর ঘষামাজা করে বাড়িয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ শিক্ষা অফিসার কর্তৃক দাখিল করা হয় কিন্তু বাবুল আক্তার স্যার কর্তৃক তদন্তে প্রমাণিত হলেও ডিপিইওকে ২লক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন শাহাজাহানসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। গামছা শাহাজাহান বই রিসেভের দায়িত্বে থাকে। ছাত্র যদি ৪হাজার হয় তাহলে চাহিদা দেখানো হয় ৫ হাজার । নতুন বই আসলে রিসিভ করে ৪ হাজার । এভাবে শাহাজাহান প্রতি ক্লাসের ১ হাজার করে বইয়ের টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। উপরি-উক্ত বিষয়াদি ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষক হতে আলিসান বাড়ি তৈরি জন্য কোন শিক্ষক থেকে ৩০হাজার, আবার কোন শিক্ষক থেকে ২০হাজার, আবার কারো নিকট থেকে ১লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধার নিয়েছে। পরিশোধ করবেন কিনা শিক্ষকগণ সংশয়ে আছেন কিন্তু ভয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। উপরি-উক্ত অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়াও তার দ্বারা নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয় যা তদন্তকালীন প্রমাণ পাওয়া যাবে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহাজাহান আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের তদন্তপূর্বক বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান শিক্ষকরা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn