
সাতক্ষীরায় ওষুধ বিক্রিতে নতুন নিয়মে অসন্তোষ
সাতক্ষীরার ফার্মেসিগুলোতে হঠাৎ করেই ওষুধের ডিসকাউন্ট কমিয়ে দেওয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। আগে যেখানে ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যেত, এখন সেটি কমে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৫শতাংশে। এতে ওষুধ কেনার খরচ বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের বাসিন্দা সম্রাট বলেন, তিনি নিয়মিত নলতার সৌখিন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে থাকেন। মে মাসের ওষুধ কিনতে গিয়ে দেখেন, আগের মতো ১২শতাংশ নয়, এবার দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৫শতাংশ ছাড়। জানতে চাইলে ফার্মেসি কর্তৃপক্ষ জানান, বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ফার্মেসিকে এই নিয়ম মানতে হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ফার্মেসিতেই একই নিয়ম কার্যকর হয়েছে। আগে অঘোষিতভাবে এমআরপি থেকে ১০শতাংশ ছাড় দিয়ে ওষুধ বিক্রি করা হলেও এখন তা সর্বোচ্চ ৫শতাংশে সীমিত রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতি সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে সর্বোচ্চ ৫% ছাড়েই ওষুধ বিক্রি করতে হবে। সেইসঙ্গে নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানানো হয়। এসব নিয়ম না মানলে জরিমানা বা দোকান বন্ধ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
তবে এ সিদ্ধান্তকে ‘সিন্ডিকেটের চাপ’ বলছেন ভোক্তারা। কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগরের সৈকত, রতনপুরের মনির হোসেন ও নলতার হারুন বলেন কিছু ফার্মেসি মালিক ছাড় দিয়ে বিক্রি করতে চাইলেও সমিতির চাপে পারছে না। সমিতি কী প্রশাসন? তারা কীভাবে জরিমানা করে?
ভোক্তারা জানান, আগের তুলনায় এখন ওষুধের পেছনে ৫-৭ শতাংশ বেশি খরচ হচ্ছে, যার ফলে মাসিক বাজেটের ওপর চাপ পড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা সৃষ্টি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শহরের একটি প্রতিষ্ঠিত ফার্মেসির মালিক বলেন, “কোম্পানিগুলো থেকে যে ছাড় পাই, তা থেকে ১০% ছাড় দিলে আমাদের কোনো লাভ থাকে না। বিশেষ করে ছোট ফার্মেসিগুলো টিকে থাকতে হিমশিম খায়। তাই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ৫% ছাড় দেওয়ার।
দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়ার জনতা ও রওশানারা ফার্মেসির মালিকরা জানান, সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫% ছাড়েই ওষুধ বিক্রি করছেন তারা।
কালিগঞ্জের একাধিক ফার্মেসি মালিক জানান, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়া, লাইসেন্স ইত্যাদি খরচ চালাতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন আবার কেউ কেউ ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সমিতির সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এসব অনিয়ম রোধ হবে বলে তাদের দাবি।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন বলেন, ওষুধ মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি অংশ। এখানকার মূল্যবৃদ্ধি বা ছাড় কমানো সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার ওপর প্রভাব ফেলে। বিষয়টি যাচাই করে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও সরকার নির্ধারিত মূল্যে ঔষধ বিক্রয় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবির ভিত্তিতে একাধিক বৈঠকের পর সমিতির ৭দফা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত শুধু সমিতির সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান তানভীর বলেন কোনো ব্যবসায়ী ওষুধ কম মূল্যে বিক্রি করায় সমিতি যদি তাকে জরিমানা করে এবং তিনি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সাতক্ষীরা জেলা ড্রাগ সুপার মো. বাসাররাফ হোসেন বলেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে ফার্মেসি মালিকেরা ওষুধ বিক্রি করতে পারেন। কেউ কম মূল্যে বিক্রি করলে কোনো সংগঠন বা সমিতি তাকে বাধ্য করতে পারবে না। সাতক্ষীরার এই পরিস্থিতি সাধারণ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকেই সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন, যাতে ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সবার জন্য মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হয়।