শুক্রবার - ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৫ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প জনগণের আশার ঠিকানা

১০ কোটি মানুষের জন্য ৪ ধরনের পেনশন স্কিম চালু হয়েছে আজ ১৭ আগস্ট। সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন। দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ এবং ২০৪১ সালে তাঁদের সংখ্যা হবে ৩ কোটি ১০ লাখ।

এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনতে এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা (স্কিম) চালু করছে সরকার। পেনশন স্কিমের মাধ্যমে ১৮ বছরের বেশি দেশে-বিদেশে থাকা ১০ কোটি মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার চিন্তা রয়েছে সরকারের। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা এবং তাঁদের নিরাপত্তাহীনতা। আর এ কারণেই চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা।

চারটি আলাদা স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়েছে।

এগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। প্রবাস স্কিমটি শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। প্রগতি স্কিম বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য। সুরক্ষা স্কিম রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। আর সমতা স্কিম নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য।
পেনশন-ব্যবস্থা পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা অর্থ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট চালু হয়েছে গতকাল বুধবার।
এতে বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করে আপনার ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।’ ওয়েবসাইটের ঠিকানায় পেনশন স্কিমগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য উল্লেখ করা আছে।
পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আসতে গেলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁদের এনআইডি নেই, তাঁরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে পারবেন। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এনআইডি সংগ্রহ করে পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে তা জমা দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে পেনশন পদ্ধতি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর দেশে-বিদেশে বসবাসরত ১৮ বছরের বেশি বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন আজ থেকেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আজ পেনশন-ব্যবস্থা চালু হলেও ২০১৫ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ নেন। ২০১৬ সালে ভারত ঘুরে এসে অর্থ বিভাগের একটি দল একটি ধারণাপত্র তৈরি করে। তবে কাজটি আবদুল মুহিত শেষ করে যেতে পারেননি। নতুন করে এ আলোচনা গতি পায় ২০২২ সালে এবং এ বছর আরেকটি ধারণাপত্র তৈরি করে অর্থ বিভাগ। এরপর এ বছরের ৩১ জানুয়ারি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এবং আইনের আওতায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করে। এতে দেশে একটি ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পেনশন-ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে পেনশন-ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি আলাদা পেনশন হিসাব থাকবে। চাঁদাদাতা ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে তাঁর নমিনি মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ হওয়ার বাকি সময় মাসিক ভিত্তিতে পেনশন পাবেন। ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে কেউ মারা গেলে জমা হওয়া অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন নমিনি। পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে এবং মাসিক পেনশনের অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।
এই স্কিমের মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণির মানুষ পেনশন সুবিধা পেতে পারেন। তারা নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ জমা করলে মেয়াদ শেষে পেনশন পাওয়া শুরু হবে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক দূর্দশার কথা চিন্তা করে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছেন। বাংলাদেশের অপরাপর সামগ্রিক ভাবে উন্নয়নের সাথে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের সুখ ও দুঃখের কথা মাথায় রেখে এই স্কিম পেনশন স্কিম হিসেবে চালু করেছেন। বাংলাদেশের প্রতি শহিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান শাহাদাত বার্ষিকীকে সামনে রেখে দেশের দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছেন।

এই স্কিমের মাধ্যমে সরকারী বেসরকারী , ব্যাবসায়ী , দিনমজুর , তাতী , কামার থেকে শুরু করে সবশ্রেণী পেশার মানুষ সুরক্ষা পাবে। বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেশের মানুষকে ভালেবেসেছিলেন, মানুষের জন্য তিনি যেভাবে চিন্তা করতেন , ভাবতেন কিভাবে তিনি বাংলাদেশের সবশ্রেণীর মানুষের মধ্যে হাসি ও সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। অর্থনৈতিকভাবে তাদেরকে কিভাবে স্বাবলম্বী করবেন নানাভাবে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির সুখ শান্তির কথা সর্বদা চিন্তা করতেন। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সেই ভালবাসা ও মায়া মমতার প্রতিফলন ঘটিয়ে এদেশের গণমানুষের জন্য এই প্রকল্পটি উদ্বোধন করলেন।

প্রকল্প যেনো সুন্দর ও সুশৃংখলভাবে পরিচালিত হয়। জনগণ যেনো এই স্কিমের কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার না হয়। প্রকল্পের পরিচালক কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে সর্বসাধারণকে ভোগান্তিবিহীন কার্যক্রমের মাধ্যমে এই স্কিমের সুবিধা গ্রহণে যেনো সব সুযোগ করে দেয়া হয়।সরকারের মূল উদ্দেশ্য যেনো জনগণ পেতে পারে। অর্থ লেনদেনের মধ্যে কোনো ধরনের দুর্নীতি যেনো বাসা না বাঁধে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবং সংশ্লিষ্ট  যারা এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পরিশ্রম এবং সাধনার মাধ্যমে কল্যাণমূলক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছেন তাদের সকলের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা জনগণের পক্ষ থেকে। নির্বিঘ্নভাবে এই প্রকল্প সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যে বাস্তবায়িত হোক সেই প্রত্যাশা।

লেখক
মাহমুুদুল হক আনসারী
সংগঠক,গবেষক,কলামিষ্ট

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn