রবিবার - ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে আওয়ামী লীগের উদ্বেগ

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে আওয়ামী লীগের উদ্বেগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে বাতিলের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আওয়ামীলীগ মনে করে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের ফলে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও এর ধারাবাহিকতা, সাংবিধানিক শাসন ও সংবিধানের প্রাধান্য এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে।

আওয়ামীলীগ মনে করে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থাকে টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। মূলত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সংশোধনী আনা হয়েছিল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ ও ৪৪ এর বিধান অনুযায়ী সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছিল। এদেশে গণতন্ত্রের বিপরীতে অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিয়ে জারি করা সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক, বেআইনি, অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এ ছাড়া, দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা এবং অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা দখলের সুযোগ থাকার কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক বিষয় থেকে উদ্ভূত মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায়গুলো প্রদান করে। যেমন- পুরান ঢাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা সংক্রান্ত মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়ার শাসনামলকে অসংবিধানিক, অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছিল।
জেনারেল এরশাদের সময় সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের সিদ্দিক আহমেদের এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ আদালত সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। এ সকল মামলার পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। কেবলমাত্র সাংবিধানিক বিধানের আলোকেই সর্বোচ্চ আদালত ঐ সংশোধনীগুলো বাতিল করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেছিল।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ একটি সর্বদলীয় সংশোধনী কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটিকে মতামত জানানোর জন্য সকল দলের রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি সংবিধান বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদসহ সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের সকলের মতামত গ্রহণ করা হয়েছিল। সংসদীয় কমিটি সকলের মতামত শোনার পর সংসদে তাদের সুপারিশ পেশ করেন। সে আলোকেই পঞ্চদশ সংশোধনী সংসদে গৃহীত হয়।

আমরা মনে করি, দেশে বর্তমানে অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী যে অপশক্তি ইতোমধ্যে বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংসযজ্ঞে নেমেছে, তারই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে অবরুদ্ধ করার অশুভ উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বলপূর্বক এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করানো হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে একই বিষয়ে রিভিউ মামলা চলমান থাকায় সেটি নিষ্পত্তির পূর্বে হাইকোর্টে এই মামলা চলতে পারে না‌। এটি অসাংবিধানিক।

আমরা মনে করি, অতীতের অসাংবিধানিক ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের নতুনভাবে বৈধতা দিয়ে গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চায়।

আমরা মনে করি, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশসমূহের সাংবিধানিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এই রায়গুলোর মূলনীতিই হচ্ছে কোন অনির্বাচিত গোষ্ঠী সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারবে না এবং জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না। জনগণের প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এবং সাংবিধানিক নিয়ম মেনে সংবিধান সংশোধন করতে পারবে। যারা অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করবে, তাদের ক্ষমতা গ্রহণ বেআইনি, অবৈধ ও বাতিল ঘোষিত হবে। এছাড়া, সংবিধান স্থগিত রেখে কিংবা বাতিল করে ক্ষমতা দখল করাও সর্বোচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই রায়ের আলোকেই পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ক সংযোজিত হয়েছে। এই বিধান দেশের জনগণের পবিত্র ইচ্ছার প্রতিফলন সংবিধানের সুরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে ‘সংবিধানের রক্ষাকবচ’ বা ‘constitutional entrenchment’ হিসাবে কাজ করছে।

ষড়যন্ত্রমূলক ও অবৈধভাবে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সংবিধান সুরক্ষার এই বিধান বাতিল করে গণতন্ত্রের ধারা স্থগিত করা হলো। যে কোনো অসাংবিধানিক গোষ্ঠীর সংবিধান লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পথ সুগম করা হলো।

আওয়ামী লীগ মনে করে, ৭৫ পরবর্তী সময়ে জেনারেল জিয়া যেভাবে দেশের সংবিধান, আর্মি রুলস ও আর্মি আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল এবং তার বেআইনি শাসন ও অবৈধ রাজনীতিকে বৈধতা দেয়ার জন্য তথাকথিত হ্যাঁ/না ভোট এবং প্রহসনের গণভোট আয়োজন করেছিল, সেই প্রক্রিয়া পুনরায় চালু করার জন্য নতুন করে আবার তথাকথিত রেফারেন্ডাম এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ দেখেছে, কীভাবে দেশের সকল জনপ্রতিনিধিকে অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়েছে। শুধু অপসারণ করাই হয়নি, অসংখ্য জনপ্রতিনিধি নির্মমতার শিকার হয়েছেন। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ধারাকে স্তব্ধ করার অশুভ উদ্দেশ্যে এক ধ্বংসলীলা চলছে। দেশ ও জাতিকে রক্ষার লক্ষ্যে এই অশুভ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের পরাস্ত করতে হবে। ইতিহাসের প্রতিটি ক্রান্তিকালে বাঙালি বিজয়ী হয়েছে। এই অশুভ শক্তির পতন হবেই, ইনশাল্লাহ।

জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn