শনিবার - ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৮ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে রাতে বিয়ে করে সকালের স্বামীর বাড়ি লুট করে পালিয়েছে নববধূ

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে রাতে বিয়ে করে সকালের স্বামীর বাড়ি লুট করে পালিয়েছে নববধূ

 

রাতে বিয়ে করে সকাল হতেই স্বামীর বাড়ির নগদ টাকা স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়েছে নববধূ ও তার খালাত বোন। চুরির নতুন কৌশলী এ চক্রের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী স্বামী হোসেন আলী।

শুক্রবার(১৬ মে) বিকেলে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী স্বামী হোসেন আলী।

হোসেন আলী আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী গ্রামের খিজির মামুদের ছেলে।

অভিযুক্ত নববধূ রুমানা খাতুন(৩০) একই উপজেলার সাপ্টিবাড়ি এলাকার এনছার আলীর স্বামী পরিত্যাক্তা মেয়ে। অপর অভিযুক্তরা হলেন, বিয়ের ঘটক একই এলাকার তালুক পলাশী গ্রামের জোবাইদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও লালমনিরহাট পৌরসভার নিকাহ রেজিস্টার কাজী আমজাদ হোসেন সরকার।

অভিযোগে প্রকাশ, এক বছর আগে প্রথম স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটায় দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তুতি নেন কৃষক হোসেন আলী। ঘটক জোবাইদুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম বিয়ে দেয়ার কথা বলে বুধবার(১৪ মে) হোসেন আলীকে ডেকে নিয়ে লালমনিরহাট শহরে নিয়ে যান। সেখানে পাত্রী হিসেবে স্বামী পরিত্যাক্তা রুমানা খাতুনকে দেখালে তার পছন্দ হয় এবং তাৎক্ষণিক তাদেরকে কাজী আমজাদ হোসেনের নিকাহ রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে এক লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ দেন।

বিয়ের পর নববধু রুমানাকে নিয়ে রাতে বাড়িতে ফিরতে চাইলে তাদের সাথে আসেন ঘটক জোবাইদুলের মেয়ে। পরদিন সকালে স্বামী হোসেন আলীর ঘরে থাকা তামাক বিক্রির এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও দেড় ভড়ি স্বর্ণালংকার নিয়ে ঘটকের মেয়েসহ নববধূ তার বাবা অসুস্থতার অজুহাতে চলে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও না আসায় এবং মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সন্দেহ হয় বর হোসেন আলীর। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ঘরে গচ্ছিত থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকার নেই।

ঘটনার পর থেকে ঘটকদের কাছে গেলেও তারা কোন পাত্তা দেননি। বিবাহের নকল চাইলে গেলে নিকাহ রেজিস্টার কাজী আমজাদ হোসেন সরকার তাদেরকে নকল সরবরাহ না করে উল্টো হুমকি দেন।

অবশেষে বর হোসেন আলী বুঝতে পারেন টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করতেই এ চোর সিন্ডিকেট বিয়ের নাটক তৈরি করেন। নববধূ ও তার সাথে আসা ঘটকের মেয়ে এসব চুরি করে পুরো চক্রটি তা ভাগবাটোয়ারা করেছেন।

চোরাই টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করতে নিকাহ রেজিস্টার ও নববধূ রুমানাসহ ৪জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার বিকেলে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বর হোসেন আলী।

বর হোসেন আলী বলেন, ঘটকরা জানত বাড়িতে তামাক বিক্রির টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিল। এসব চুরি করতে তারা বিয়ের নাটক তৈরি করে আমার বাড়িতে স্ত্রী হিসেবে পাঠায় রুমানা ও ঘটকের মেয়েকে। বিয়ে দেয়ার বখশিস হিসেবে ঘটক জোবাইদুল টাকাও নিয়েছেন দশ হাজার। তারা মূলত চুরি করতে বিয়ের নাটক তৈরি করেছে। তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেন।

অভিযুক্ত ঘটকে জোবাইদুলকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। নববধূ রুমানা খাতুনের ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার সাথেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রুমানাসহ এ চক্রটির কাজই হলো বিয়ের নামে মানুষের সাথে প্রতারণা ও জিম্মি করে অর্থ আদায় করা। তাই স্থায়ী ভাবে কোথাও বসবাস করে না রুমানা।

লালমনিরহাট পৌরসভার নিকাহ রেজিস্টার কাজী আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, রুমানা হোসেন আলী নামে কারও বিবাহ রেজিস্ট্রি করা হয়নি। তারা অহেতুক আমার নাম বলতে পারে।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আলী আকবর বলেন, এটি চুরি চক্রের নতুন কোন কৌশল হতে পারে। অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn