রবিবার - ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

লাইফ গার্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হয়রানিতে সাধারণ মানুষ

লাইফ গার্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হয়রানিতে সাধারণ মানুষ

 

রাজশাহী মহানগরীর লক্ষীপুরে লাইফ গার্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ অনুসন্ধানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি একটি প্রতারণা মহা ফাঁদ। লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ৩০ জন দালাল দিয়ে এই প্রতারণা ফাঁদ পাতা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দালালদের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়।
দালাল চক্রের সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির মূল টার্গেট গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সহজ সরল মানুষ। এতে দালালদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। দালালদের সঙ্গেও প্রতারণা করেন লাইফ গার্ড । দালালদের জিম্মি করে প্রতিনিয়ত সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
১২ ও ১৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার ও বুধবার) সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
প্রতিষ্ঠানটি সামনের রাস্তায় দাঁড়াতেই দালালরা সটকে পড়েন। তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক দাবিকারী এগিয়ে এসে বাজে কথা বলতে থাকেন। যদিও তারা জানন না, আসলেই সাংবাদিকরা সেখানে কি করছে? তবুও তারা ভয় পেয়ে বিভিন্ন লোক মারফত কথা বলতে শুরু করেন। সেখানে গত দুইদিনে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন নামকরা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে দালাল মারফত রোগী ধরে নিয়ে ভুয়া চিকিৎসা প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে নেই পর্যাপ্ত মেশিনারীজ। দু একটি মেশিন ঠিক থাকলেও তাতে নেই পর্যাপ্ত লোকোবল। সাইনবোর্ডে আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কিন্তু সেটা সাইনবোর্ড পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। দু-একজন চিকিৎসক দিয়েই চলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি। ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন গ্রামের সহজ সরল মানুষের অর্থ।
ভুক্তভোগী স্বজন ও রোগীরা বলেন, দালাল কতৃক নামীদামি চিকিৎসকের নাম করে রোগীগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে গেলে ওই ডাক্তার বা চিকিৎসক না থাকলেও অন্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। সেগুলো আসল কি না সন্দেহ রয়েছে অনেকের। এমনকি ওই নামি-দামি ডাক্তার পরিচয়েও ভুয়া চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দেওয়া হয় সেখানে। প্রতিষ্ঠানটি কতৃপক্ষ বলছে, বেশিরভাগ চিকিৎসক এখানে নিয়মিত বসে না, তবে চিকিৎসকরা অনকলে চিকিৎসা দেন। লিখিতভাবে চুক্তি করে প্রায় ৩০ জন দালাল পোষেন তারা। এমনকী দালালরা অন্য কোথাও রোগী নিয়ে গেলে তাদের মারধরও করেন তারা।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক পরিচয়দানকারী সামীম রেজা বলেন, এসব বলে লাভ নাই, দু-চারজন সাংবাদিক আমাদেরও আছে। প্রয়োজনে কথা বলতে পারেন। হুমকির ছলে বলেন আমাদের হয়রানি করলে আপনারা হয়রানিতে পরবেন।
কথা বললে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা: আবু সাঈদ বলেন, আমি বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনকলে চিকিৎসার কোনো সুযোগ নাই। দালাল কতৃক হয়রানি করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, লাইফ গার্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি মুলত পরিচালনা করেন সামীম রেজা নামে এক ব্যক্তি। কয়েকজন পার্টনার আছে প্রতিষ্ঠানটির। অনেক মালিক বা শেয়ারহোল্ডাও প্রতারিত হয়েছে এখান থেকে। সামীম রেজা এর আগে এয়ার ফোর্সে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তিনি বরখাস্ত হয়েছেন। চাকুরী হারিয়ে এখন প্রতারণা মাস্টার মাইন্ডার হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে অগনিত অভিযোগ।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দালাল গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করতো আরএমপি পুলিশ। দীর্ঘদিন এ অভিযান বন্ধ থাকায় দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সুধী সমাজ বলছে, অভিযান অব্যাহত থাকলে দালাল কতৃক হয়রানি বন্ধ হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn