সোমবার - ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৪শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

রোজা কোন ধরনের ইবাদত

রোজা কোন ধরনের ইবাদত

আল্লাহ তায়ালার বাণী “আমি মানব ও জিন জাতিকে শুধুমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।”
“বল, আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, একান্তভাবে নিজের দ্বীনকে তারই জন্য নিবেদিত করো”-(যুমার-১১)।“নিশ্চয় আল্লাহ আমারও রব, তোমাদেরও রব। সুতরাং তারই ইবাদত করো। এটাই সহজ সরল পথ”- ( আলে ইমরান-৫১)।পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহ ইবাদত করার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত নবী-রাসূল মানব জাতিকে ইবাদত কি এবং কেন এ শিক্ষাই দিয়েছেন। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় মুসলিম জাতি ইবাদত কি এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেনা। তাই তাদের দুর্ভাগ্যেরও কোনো সীমা-পরিসীমা নাই। এর মূল কারণ হলো এর মর্মার্থ নিয়ে বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তির মূল কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাই যে, আরবে যখন কুরআন পেশ করা হয় তখন প্রত্যেকেই জানত ইবাদত কি এবং তা কিভাবে করতে হয়। এ কারনেই যখন রাসূল (দ.) ধর্মের যে দাওয়াত দেন, তখন তারা বুঝে-শুনেই তা গ্রহণ করেছিল আর যারা এর বিরোধিতা করেছিলো তারা বুঝে-শুনে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথেই করেছিল। অর্থাৎ কুরআন নাজিল হওয়ার সময় ধর্মের বিভিন্ন পরিভাষা অর্থাৎ ইলাহ, রব, দ্বীন ও ইবাদত এ শব্দগুলোর যে মূল অর্থ প্রচলিত ছিলো, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা পরিবর্তিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এক একটি শব্দ তার সম্পূর্ণ ব্যাপকতা হারিয়ে একান্ত সীমিত; বরং অস্পষ্ট অর্থের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে পড়ে। এর এক কারণ ছিলো আরবি ভাষার প্রতি সঠিক আগ্রহের ও জ্ঞানের অভাব। দ্বিতীয়ত ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় যেসব অবৈধ নেতৃত্বের আবির্ভাব বা উদ্ভব ঘটেছে তাদের কাছে ধর্মের সেই আবেদন বা ব্যাপকতা ছিলনা। যা কুরআন নাযিল হওয়ার সময় অমুসলিম সমাজে প্রচলিত ছিলো। তাছাড়া প্রকৃত ইসলাম ধর্মীয় ব্যাপকতা অর্থাৎ ধর্মের সাম্যতা, উদারতা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সমাজনৈতিক ন্যায়পরায়ণতা বা আধুনিক পরিভাষায় বাক স্বাধীনতা, এক কথায় অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মুক্ত আলোচনার স্বাধীনতা সমাজে ব্যাপক ভাবে চালু থাকলে এই সব দুরাচার অবৈধ ক্ষমতা দখলদারীদের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়া বা তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা প্রকৃতপক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ত। তাই তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকাটাই প্রাধান্য দিয়েছেন। এই কারণে তাদের তদানীন্তন একদল দালাল বুদ্ধিজীবীও তৈরি করতে সক্ষম হয়, যারা পবিত্র কুরআন ও হাদীসের এমন সব ব্যাখ্যা তৈরি করে, যার ফলে ইসলাম ধর্ম হিসাবে পুঁজিবাদ, রাজতন্ত্র, সামরিক তন্ত্র ও অভিজাতন্ত্রের প্রতিভূ বা স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসাবে অভিহিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অভিধান ও তাফসীর গ্রন্থে অধিকাংশ কুরআনিক শব্দের ব্যাখ্যা করা হয়েছে আভিধানিক শব্দের পরিবর্তে এমন সব অর্থে যা পরবর্তীকালের মুসলমানদের সহজে বিভ্রান্ত করা যেত। যেমন ‘ইলাহ’ শব্দের মূল অর্থ সার্বভৌম ক্ষমতা অথচ এই শব্দকে মূর্তি ও দেবতার সমার্থক করা হয়েছে। ‘রব’ শব্দের মূল অর্থ শাসন কর্তৃত্ব যেমন ফেরাউন বলে ছিলো “আনা রাব্বিকুমুল আলা” আমি কি তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান দাতা নই। এই ‘রব’ শব্দের প্রতিশব্দ করা হয়েছে পালন/লালন কর্তা। ইবাদতের অর্থ করা হয়েছে পূজা, উপাসনা। দ্বীনের অর্থ করা হয়েছে ধর্ম মাযহাব ও পাশ্চাত্য সংজ্ঞায় Religion এর সমার্থক হিসাবে। অথচ ধর্মের এই বিভ্রান্তিকর সংজ্ঞার মাধ্যমেই প্রকৃত ধর্মের ব্যাপক বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ‘ইবাদত’ অর্থ হলো পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য, মান্যতা বা আত্মসমর্পন। আবার ‘তাগুত’ এর তরজমা করা হয়েছে মুর্তি বা শয়তান। অথচ তাগুতের মূল অর্থ ছিলো অবৈধ ক্ষমাসীন সরকারের সমার্থজ্ঞাপক। এ কারণেই বর্তমানেও ইসলাম ধর্মে এতো মত বিরোধ ও বিভ্রান্তি। অন্য কথায় রাসূল (দ.) পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে যে ধর্ম প্রচার করেছিলেন, সেই ধর্ম বর্তমানে পৃথিবীতে কোথায়ও চালু নাই। অথচ পবিত্র কুরআন অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে কিন্তু তার অর্থ ও ব্যাখ্যা ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এ বিষয়টি সম্পর্কে সবাই দৃশ্যত নিশ্চুপ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন:-
“তাহাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য আমি তাহাদিগকে লানত করিয়াছি ও তাহাদের হৃদয় কঠিন করিয়াছি, তাহারা শব্দগুলির আসল অর্থ বিকৃত করে এবং তাহারা যাহা উপদিষ্ট হইয়াছিল উহার এক অংশ ভুলিয়া গিয়াছে। তুমি তাহাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা দেখিতে পাও। সুতরাং উহাদিগকে ক্ষমা কর ও উপেক্ষা কর, নিশ্চয় আল্লাহ স কর্মপরায়নদিগকে ভালোবাসনে”- ( মায়িদা-১৩)। এখন আমরা পবিত্র কুরআনের আলোকে ইবাদত শব্দটির প্রকৃত অর্থ, তাৎপর্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করব। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থায় যখন রাজা, রাজতন্ত্র, ধর্মীয় নেতৃত্ব তথা পোপের বিরুদ্ধে বা জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে মুক্তভাবে বা উদারভাবে আলোচনা করতে সক্ষম হলো কিন্তু মুসলিম সমাজ এখন পর্যন্ত রাজতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের বা সমাজতন্ত্রের যাঁতাকলে অদ্যাবধি পিষ্ঠ হচ্ছে।
আরবি ভাষায় ‘ইবাদত’ শব্দটির আসল অর্থ বাধ্য হওয়া। অনুগত হওয়া। কারো সামনে এমনভাবে আত্মসমর্পন। যার অনুগত্য করা হয় তার মর্জিমতো সে যেভাবে খুশি সেবা গ্রহণ করতে পারে বা অনুগত ব্যক্তিকে কাজে লাগাতে পারে। আরবি ভাষায় সর্ববৃহৎ অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ এ শব্দের যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার এই :-এক: যে ব্যক্তি কারো মালিকানাধীন, স্বাধীন নয়, তাকে বলা হয় ‘আব্দ’। এটা ‘হুর’ বা ‘আযাদ’ তথা স্বাধীনতার বিপরীত।দুই. ‘ইবাদত’ বলা হয় এমন আনুগত্যকে যা পূর্ণ বিনয়ের সঙ্গে করা হয়।‘তাগুতের ইবাদত করেছে, মানে তার বাধ্য-অনুগত্য হয়েছে। আমরা তোমারই ইবাদত করি মানে পূর্ণ আদেশানুবর্তিতার সঙ্গে তোমার আনুগত্য করি। তোমাদের ‘রবের ইবাদত’ করো অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য করো। যে ব্যক্তি কোনো রাজা বাদশাহর অনুগত। সে তার আবেদ গোলাম। অর্থাৎ রাজা বাদশাহর ইবাদত করে। তিন: তার ইবাদত করেছে অর্থাৎ তার পূজা অর্চনা বা উপাসনা করা। চার: সে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে পৃথক বা আলাদা হয়নি।পাঁচ: কোনো ব্যক্তি কারো কাছে আসতে বিরত থাকলে বলা হবে কোনো জিনিস তোমাকে আমার কাছে আসতে বিরত রেখেছে বা বারণ করেছে। অর্থাৎ আমার ইবাদত করতে তোমাকে কে নিষেধ করেছে।
এ ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে ‘আব্দ’ ধাতুর মৌলিক অর্থ হচ্ছে কারো কর্তৃত্ব বা প্রাধান্য স্বীকার করে তার মোকাবিলায় নিজের স্বাধীনতা বা স্বেচ্ছাচারিতা ত্যাগ করা। ঔদ্ধত্য, অবাধ্যতা ত্যাগ করা, তার জন্য অনুগত হয়ে যাওয়া। একজন আরবি ভাষাভাষী লোকের মনে শব্দটি যে ধারণার সৃষ্টি করে তাহলো গোলামী-বন্দেগীর ধারনা। গোলামের আসল কাজ যেহেতু আপন মনিবের আনুগত্য আদেশানুবর্তিতা,তাই কার্যত এ থেকে আনুগত্যের ধারণা সৃষ্টি হয়। একজন গোলাম বা দাস যখন স্বীয় মনিবের বন্দেগী আনুগত্যের কেবলে নিজেকেই সোপর্দ করেনা; বরং তার বিশ্বস্ততা, শ্রেষ্ঠত্ব, কর্তৃত্বও স্বীকার করে। বিভিন্ন উপায়ে তার মালিকের বা প্রভুর নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রকাশ করে। এমনি করে বন্দেগীর আনুষ্ঠানিকতা পালন করে। এর নাম পূজা-উপাসনা।
‘আবিদয়াত’ এর অর্থে ধারণা তখন স্থান লাভ করে, যখন গোলাম মনিবের সামনে কেবল মাথাই নত করেনা; বরং তার হৃদয় মনও অবনত থাকে। প্রকৃত পক্ষে সেজদার আনুষ্ঠানিকতার মূল ভিত্তি এর মাঝে নিহিত।প্রবৃত্তি পূজা সম্পর্কে কোরআন:“যে ব্যক্তি তার মনের লোভ-লালসাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে তার সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? তুমি কি তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারো?”( ফেরকান-৪৩)। অর্থাৎ মানবীয় চরিত্রের মন্দ দিক যথা লোভ-লালসা বা প্রবৃত্তিকে কিছু লোক উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করে এবং এরই অন্ধভাবে অনুসরণ করে এবং তার দ্বারা পরিচালিত হয়। এ ধরণের ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করতে আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলকে নিরুৎসাহিত করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ বলেন “পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি হইতে নিজকে বিরত রাখে।” (নাযিয়াত – ৪০ )। “সেই সফলকাম হইবে, যে নিজেকে পবিত্র করিবে এবং সেই ব্যর্থ হইবে, যে নিজকে কলুষাচ্ছন্ন করিবে” –( সামস্, -৯-১০)।
এই প্রবৃত্তির বিরদ্ধে সংগ্রাম করে জয়ী হলেই আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ হবে মর্মে কোরআন ঘোষণা করেছেন।“হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করিয়া থাকো। পরে তুমি তাহার সাক্ষাৎ লাভ করিবে”–(ইনশিকাক, আয়াত-৬)।প্রবৃত্তির বিরদ্ধে সংগ্রামের দ্বিতীয় ধাপের নাম রোজা বা সিয়াম সাধনা। রোজা বা সাওম এর অভিধানগত অর্থ বিরত থাকা, দূরে থাকা,নীরব থাকা।পানাহার, স্ত্রী সহবাস, অশ্লীল কথা, কাজ ও আচরণ থেকে বিরত থাকা। আর এই সাওম বা রোজা ফরজ হয়েছে রমজান মাসে। রমজান শব্দটির আভিধানিক অর্থ কষ্ট দেওয়া, জ্বালিয়ে ফেলা।তফছীরে ইবনে আরবীতে আছে “রমজুন” ধাতু থেকে “রমজান” শব্দটি উৎপন্ন যার অর্থ “ইহতিরাকুন্ নফছে বিনুরিল হক্কে”(খোদাতালার নূরের জোতীতে মানব সত্ত্বার পাপ বিদগ্ধ অবস্থা –(৩৬ পৃঃ)।
হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে :- “এমন কতেক রোজাদার আছে যাদের রোজায় উপবাস ছাড়া আর কিছু লাভ হয়না। এবং এমন কতেক রাত্রি জাগরণকারী আছে, যাদের রাত্রি জাগরণে বিনিদ্রা ছাড়া আর কিছুই অর্জন হয়না- (ইবনে হুযাইমা-৩৩৫)।
যে কেহ রোজা রেখে বিশ্বাস এবং শৃঙ্খলার সাথে কৃত কর্মের হিসাব রাখে, যেমন “আত্কা’ অর্থাৎ খোদাভয়, “তাকাদ্দোছ” বা অন্তর পবিত্রতা এবং ‘শোকর” বা সন্তোষ এই তিনটি অবস্থা বহাল রাখে, আল্লাহতায়ালা তাহার অতীত গুনাহ্ মাফ করিয়া দিবেন–(বোখারী)।
হাদীছ:- ” ছেয়াম বা রোজা অনর্থ এবং পাপ কার্য বিরত অবস্থায় হাছিল হয় উপবাস ও পানাহার বিবর্জনে নহে–” (বায়হাকী, হাকিম মুস্তাদারাক, ইবনে হুজাইমা–৩৩৪)। রোজার দিনে কেহ অকথ্য বা অন্যায় বকাবকী করো না অথবা শোরগোলও করোনা। যদি কেহ ঝগড়া করতে আসে, তাকে বল, আমি রোজাদার”- (বোখারী)।রোজার উপবাস ও সংযমের নির্দেশ, আত্মশুদ্ধকামী, ব্যক্তির জন্য যেমন মহান অনুগ্রহ।, অতএব উপরের পবিত্র কোরআন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খোদা ভয় অন্তর পবিত্র করা এবং সন্তুষ্ট চিত্ত্বতার নাম রোজা। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নিজেই এই রোজার ফজিলতের প্রতিদান। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছেঃ “আচ্ছাওমুলি ওয়া আনা উজ্জা বিহি।” অর্থাৎ রোজা আমার জন্য এবং আমিই তাহার পুস্কার”।
, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলতেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সা) বলেছেনঃ রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দী করে দেয়া হয়।(বোখারী–১৮৯৯)।সাহল ইবনু সা‘দ থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ( সা) বলেছেনঃ জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ‘রইয়্যান’ নামে একটি দরজা রয়েছে। সিয়াম পালনকারীগণ ছাড়া এ দরজা দিয়ে অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না( বুখারী ৩২৫৭, ।)হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র মর্জি হলে আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকাজের প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল্লাহ্‌ বলেন, তবে সিয়াম ব্যতীত, কারণ তা আমার জন্যই (রাখা হয়) এবং আমিই তার প্রতিদান দিবো। সে তার প্রবৃত্তি ও পানাহার আমার জন্যই ত্যাগ করে। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দঃ একটি আনন্দ তার ইফতারের সময় এবং আরেকটি আনন্দ রয়েছে তার প্রভু আল্লাহ্‌র সাথে তার সাক্ষাতের সময়। রোযাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট কস্তুরীর ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। ( বুখারী , মুসলিম, )। হযরত আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান (রমজান) মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় ‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে ‘ইবাদাতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। ( বোখারী,মুসলিম ,),।উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছিঃ যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রূপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।(তিরমিজী, নাসায়ী ।) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃরাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ সিয়াম ব্যতীত বনি আদমের প্রত্যেক আমলই তার জন্য, কারণ তা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব”–[বুখারি ও মুসলিম]।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃরসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ সিয়াম এবং কুরআন বান্দার জন্য শাফা‘আত করবে। সিয়াম বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনে খাবার গ্রহণ করতে ও প্রবৃত্তির তাড়না মিটাতে বাধা দিয়েছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার শাফা‘আত কবূল করো। কুরআন বলবে, হে রব! আমি তাকে রাতে ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে এখন আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে (বায়হাক্বী; শু‘আবূল ‘ঈমান)।মুনযির ইবনু হুবাইশ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আমি উবাই ইবনু কাব (রাঃ)-কে বললাম, হে আবুল মুনযির! আমাকে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলুন। কেননা আমাদের সাথী (ইবনু মাসউদ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘কেউ সারা বছর ক্বিয়ামুল লাইল করলে সে তা পেয়ে যাবে। এ কথা শুনে উবাই বললেন, আল্লাহ আবূ ‘আবদুর রহমানের প্রতি দয়া করুন। আল্লাহর শপথ! তিনি তো জানেন, ক্বদর রাত রমযান মাসেই রয়েছে।
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাঁর আনুগত্য পূর্ণ ভয়, অন্তরের পবিত্রতা এবং সন্তুষ্ট চিত্ততা অর্জনের মানসে পবিত্র রমজানের ৩০ রোজা পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন!

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn