
রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের আখাউড়া-সিলেট সেকশনে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনে দাউদ নগর বাজার এলাকায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের পরিত্যক্ত ভূসম্পত্তি বন্দোবস্তের নামে অবৈধ কাগজ দেখিয়ে দখলকৃত ৪৮ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে থেকে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের দাউদ নগর বাজার এলাকায় সদর উপজেলার চরনুর আহম্মদ মৌজার সাবেক ৮শ ৮৮ দাগের প্রায় এক একর ৩৩ শতাংশ রেলওয়ে পরিত্যক্ত ভূমি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দাবি করে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট রিট পিটিশন দায়ের করে তৎকালীন পৌরসভা মেয়র এফ এম আহমেদ অলি। উক্ত পরিত্যক্ত রেলওয়ে ৮শ ৮৮ দাগের ভূমি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাকে মালিকানাধীন বহাল রেখে পরবর্তী শুনানির আগ পর্যন্ত স্থিতিবস্থা আদেশ জারি করেন সুপ্রিম ও হাইকোর্টের বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও জাকির হোসেনের একটি ব্রেঞ্চ। এরপর থেকে রেলওয়ের পরিত্যক্ত ভূমি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা ভোগ করে। কিন্তু সম্প্রতি হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের তথ্য গোপন করে পাঁচজন ব্যক্তি মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকাস্থ ভূমি এস্টেট হতে ভূয়া বন্দোবস্ত কাগজ দেখিয়ে পৌর মার্কেট দখলকৃত ৪৮ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়কে দোকান বরাদ্দের নামে বিভিন্ন কৌশলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। আর এ চক্রটি সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শংকর দেব এবং তার সাথে পৌর মার্কেটে ব্যবসায়ী মো. ফুল মিয়া, অলি মিয়া, আব্দুর রউফ ও মর্তুজ মিয়া।
পৌর মার্কেট কয়েকজন ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায় , শায়েস্তাগঞ্জ এলাকার ৪৮ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পৌর মার্কেট বেশ কিছু দিন ধরে ব্যবসা করে আসছিল। হঠাৎ রেলওয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা এসে হাইকোর্টের রিট পিটিশন জায়গা বাদেও অসংখ্য স্থপনা ভেঙ্গে ফেলে। বেশ কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ক্ষতি গ্রস্থ হয়। সংঘবদ্ধ চক্রটি রেলওয়ের ভূমি বন্দোবস্ত লিজ এনে দিবে বলে পৌর মার্কেটের সামনের দোকান থেকে সাড়ে ৩ লাখ এবং পেছনের দোকান থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও সংঘবদ্ধ চক্রটির পৌর মার্কেটের রেলওয়ের ভূমি লিজ আনার স্হায়ী কোনো বৈধতা নেই।
এ বিষয়ে শংকর দেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রেলওয়ে পৌর মার্কেটের জন্য অনেক দৌড়া দৌড়ি করেছি এবং অনেক টাকা খরচ হয়েছে এবং পৌর মার্কেটের রেলওয়ের দেওয়া লিজের কাগজ আছে। এ কাগজ বৈধ। লিজ আনতে পাঁচ কোটি টাকা উপরে খরচ হয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মার্কেটের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান , সংঘবদ্ধ চক্রটি বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে ৬৮ জন দখলকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে টাকা আদায় করে নিয়েছে। বিশ্বাস করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ জায়গা বিক্রি, বন্ধক ও সুধের উপর ঋণ করে টাকা দিয়েছেন। রেলওয়ের দেওয়া লিজের কাগজ ৪৮ জনের নামে দেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তাদের পাঁচ জনের নামে লিজ এনেছে।
রেল সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেলওয়ে ভূমি লিজ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভূয়া।শায়েস্তাগঞ্জ পৌর সভার মেয়র এফ এম আহমেদ অলি বলেন, শংকর দেব, ফুল মিয়া, আব্দুর রউফ, মর্তুজ আলী, অলি মিয়া নামে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে পৌরমার্কেট বন্দোবস্ত এনেছে বলে লোকের মুখে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভূয়া। রেলওয়ের দেওয়া লিজের কাগজের অফিসিয়াল কোনো ডকুমেন্টস সংরক্ষিত নেই। হাইকোর্টের জারি স্থগিতাদেশ থাকার পর রেলওয়ের বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
উচ্চ আদালতের মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার দায়ের করা রিট পিটিশনে হাইকোর্টের জারি স্থগিতাদেশ থাকার পর মূল ভবনের ১৬ নম্বর কক্ষে বিষয়টি প্রথম শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০১২ সালের ১১ মার্চ ও ৪ জুন এবং ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ ও ২, ৩ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ৩০ জুলাই। কিন্তু এখনো শুনানি হয়নি। ৭১ ভবনে ৭নম্বর কক্ষে শুনানি হবার কথা রয়েছে।