শনিবার - ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ৯ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

রেজায়ে ইলাহী ও হজরত শাহে চরণদ্বীপি (কঃ)

রেজায়ে ইলাহী ও হজরত শাহে চরণদ্বীপি (কঃ)

 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ” আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় নি‘আমাত, এটা হচ্ছে অতি বড় সফলতা।”
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২ )
অত্র আয়াতের তাফসির তথা ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে কুরতুবী’তে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত সমুদয় নিয়ামত রাজির মধ্যকার সর্বোত্তম অনুগ্রহ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। রেজায়ে ইলাহী তথা স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন ইসলাম ও ইসলামের অন্তর্নিহিত দিক তাসাওউফের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সমগ্র সৃষ্টির মধ্যকার মর্যাদাবান ও মর্তবাময় করেছেন স্বীয় করুণায়। জীবন প্রবাহে কেবল খাদ্যগ্রহণ, ঘুমানো, সন্তন সন্ততি লালন পালন, বিলাসিতায় গড্ডালিকা প্রবাহে যাপিত জীবনে শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মহত্ব, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত রয়েছে যাপিত জীবনের প্রতিটি ক্ষণে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন আর এটাই রেজায়ে ইলাহী তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কুতুবুল আকতাব শায়খুল হাদীস হজরত মাওলানা শাহসুফী শায়খ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) পার্থিব জাগতিক সম্পর্ক বিসর্জনের মাধ্যমে রবের প্রেম প্রেরণায় কাঙ্খিত মাকাম লাভে জীবনের প্রতিটি ক্ষণ ব্যয় করে রেজায়ে ইলাহী লাভে ধন্য হয়েছেন।

কোরআন ও হাদীসের আলোকে রেজায়ে ইলাহী :
আল্লাহ তায়ালার রেজা বা সন্তুষ্টির বিষয়ে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের বিভিন্ন আয়াতে পাকে বর্ণিত রয়েছে। রেজায়ে ইলাহী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বাইআত গ্রহণ করল , তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন; তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়। (সুরা: ফাতহ, আয়াত : ১৮)

মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন,
‘তাদের জন্য উত্তম হত যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো যা কিছু তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রদান করেছিলেন, আর বলতঃ আমাদের পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট, ভবিষ্যতে আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে আরো দান করবেন এবং তাঁর রাসূলও, আমরা আল্লাহরই প্রতি আগ্রহান্বিত রইলাম।
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ৫৯)

আল্লাহ সুবহানুহু ওয়া তায়ালা আরো বলেন,
‘আর যে সব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনায়) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যে সব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি রাযী-সন্তুষ্ট হয়েছেন যেমনভাবে তারা তাঁর প্রতি রাযী সন্তুষ্ট হয়েছে, আর আল্লাহ তাদের জন্য এমন উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন যার তলদেশে নহরসমূহ বইতে থাকবে, যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, তা হচ্ছে বিরাট কৃতকার্যতা। ( সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০০)

পবিত্র হাদীসে পাকেও রেজায়ে ইলাহী তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে রাসুলে করিম হজরত মুহাম্মদ (দঃ)’র মুখ নিঃসৃত পবিত্র হাদীস রয়েছে। রেজায়ে ইলাহী সম্পর্কে নবী করিম (দঃ) ইরশাদ করেন,
‘সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে সন্তুষ্ট হয়েছে রব হিসেবে আল্লাহকে, দ্বীন হিসেবে ইসলামকে এবং রসূল হিসেবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রাপ্তিতে। ( সহিহ মুসলিম, অধ্যায় : ঈমান, হাদিস নং ৫৭)

আল্লাহর রাসুল (দঃ) আরো ইরশাদ করেন,
‘ বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও তদনুরূপ বিরাট হবে। নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন। যে কেউ তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যে কেউ তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য রয়েছে অসন্তুষ্টি।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায় : কলহ বিপর্যয়, হাদিস নং ৪০৩১)

রেজায়ে ইলাহীর প্রয়োজনীয়তা :
আমলের গ্রহণযোগ্যতা পরিশুদ্ধ নিয়ত তথা অভিপ্রায়ের উপর নির্ভরশীল। নিয়তের পরিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতা রেজায়ে ইলাহী তথা আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যমে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা কোন ব্যক্তির উপর সন্তুষ্ট হওয়া মূলত দুনিয়া ও আখেরাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তাদেরকে রুকু ও সাজদায় অবনত দেখবেন।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৯)

রেজায়ে ইলাহী তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশী ব্যক্তি কোন বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট নন, তিনি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশী। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন, “আর আল্লাহর সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় নি‘আমাত, এটা হচ্ছে অতি বড় সফলতা।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২ )

কুতুবুল আকতাব হজরত মাওলানা শাইখ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ)’র জীবনী পর্যালোচনায় পরিদৃষ্ট হয় যে, রেজায়ে ইলাহী অর্জনে তিনি সেই শৈশবকাল হতে তৎপর ছিলেন। বাল্যকালে সাথীরা যখন খেলাধুলায় মত্ত থাকতো, তিনি খেলাধুলায় মনোযোগী না হয়ে মাঠের একপাশে কিংবা মসজিদে অন্য মনস্ক ভাবুক মনে ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। রেজায়ে ইলাহী প্রাপ্তির প্রত্যাশায় হজরত মাওলানা অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) ছাত্রাবস্থায় চট্টগ্রাম সরকারি মাদ্রাসা, রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা ও কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে অবসর সময়ে মসজিদে কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির আজকার এবং তাহাজ্জুদ আদায়ে অভ্যস্ত ছিলেন।

রেজায়ে ইলাহী ও হজরত শাহে চরণদ্বীপি (কঃ) :
স্বীয় প্রাণ কোরবানীর মাধ্যমে রেজায়ে ইলাহী অর্জন : মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের সর্বোত্তম স্তর হলো স্বীয় প্রাণ উৎসর্গের মাধ্যমে তাঁরই সন্তুষ্টি লাভ করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
“মানবের মধ্যে এমন লোক আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধনের জন্য আত্মবির্সজন করে, এবং আল্লাহ হচ্ছেন সমস্ত বান্দার প্রতি স্নেহ-পরায়ণ। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৭)
কুতুবুল আকতাব হজরত মাওলানা শায়খ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) স্বীয় পীর ও মুর্শিদ হজরত গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)’র নির্দেশে নবী করিম (দঃ)’র হেরা গুহায় ধ্যানের তরিকা অনুসরণে পাহাড় পর্বতে সায়ের ইলাল্লাহ, সায়ের ফিল্লাহ, সায়ের মায়াল্লাহ’ হালতে রিয়াজত ও ধ্যান রত অবস্থায় সময় সময় প্রাণহীন অবস্থায় থাকতেন। পাহাড়তলী নিবাসী মিঞা আমানত আলী চৌধুরী সাহেব বর্ণনা করেন, সন ১২৪৪ মঘীর ফাল্গুন মাসে হজরত মাওলানা অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (ক.) পাহাড়ে রিয়াজতকালীন একদা আমাদের পাহাড়তলী গ্রামে এসে একটি ফলগা বনে রিয়াজত, ইবাদত ও ধ্যানে নিমগ্ন থাকেন। তাঁর সহচর ভক্তগণ তাঁর গতিবিধি ঠিক করতে না পেরে স্থানান্তরে গিয়ে তাঁর অন্বেষণ করতে লাগলেন। আমাদের বাড়ির কয়েকজন লোক জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে ফলগা বনে দেখতে পেলেন, একজন মুমূর্ষ অবস্থা ব্যক্তি ‘আল্লাহ’ শব্দ উচ্চারণ করছেন। উপস্থিত লোকগণ তাঁকে বার বার ডেকে কোন সাড়া শব্দ না পাওয়াতে সকলেই স্থির করল এই লোকটির মৃত্যুকাল উপস্থিত। লোকটি নিশ্চয়ই নিরাশ্রয় হইবে। রাত্রিকালে লোকের অজান্তে এই স্থান হতে কোন দূরবর্তী স্থানে অথবা নদীর কিনারায় রাখলে ভাল হয়। আর এখানে যদি মৃত্যু হয় তাহলে আমাদের সকলের উপর বিপদ ঘটতে পারে। রাত্রিকালে আমাদের পাড়ার সমস্ত লোক সমবেত হয়ে তাঁকে নদীর ধারে রেখে আসবার জন্য ফলগা বনে তালাশ করতে লাগল। ফলগা বনে ও তাঁর চারি ধারে বহু সন্ধান করেও তাঁকে পাওয়া গেল না। সুতরাং তাঁরা সকলেই আপন আপন গৃহে চলে আসেন। এই ব্যাপারে আমার মনে নিতান্ত সন্দেহ হল যে, লোকটি নিশ্চয়ই কোন বুজুর্গ লোক হবে। নতুবা মৃত্যু শয্যায় শায়িত লোকটি কি প্রকারে অল্প সময়ের ব্যবধানে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তখন আমি নিজেই তাঁর অনুসন্ধানে বহির্গত হয়ে নানা স্থানে অন্বেষণ করে অবশেষে আমাদের মসজিদের পুকুরের পূর্ব পাড়ে উপস্থিত হই। সেখানে হিজ কাঁটার বন হতে যেন ‘আল্লাহু’ শব্দ শুনিতে পেলাম। কাঁটা বনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে হঠাৎ দেখতে পেলাম একজন লোক চাদর আবৃত, তাঁর চারদিকে আলোকরশ্মি বিচ্চুরিত হচ্ছে। কাঁটাবনে প্রবেশ করতে চারদিকে পথ অন্বেষণ করলাম কিন্তু কোনদিকে প্রবেশ দ্বার না পেয়ে চিন্তিত হলাম। এমন সময় হজরত মাওলানা শায়খ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) মৃদু স্বরে বললেন তুমি কে? আসতে চাও? চলে আস। তখন আমি বিনীত ভাবে বললাম, হুজুর কাঁটা বনে আমি কিরূপে প্রবেশ করতে পারি? মৌলানা আকদছ (ক.) বলিলেন, না, না কাঁটা নাই, তুমি আসতে চাও চলে আস। তখন সত্য সত্যই দেখলাম কাঁটা বনে কাঁটা নেই। একটি স্বর্গীয় পুষ্প উদ্যানে হজরত মাওলানা শায়খ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) উপবিষ্ট আছেন। আমি তাড়াতাড়ি তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে চরণ যুগলে চুমা প্রদান করলাম এবং নিজের মকসুদ নিবেদন করলাম। তিনি আমার মস্তকে মোবারক হাত ফিরিয়ে দিয়ে বললেন ‘মিঞা চল মসজিদে যাই’।

ধন সম্পদ কোরবানির মাধ্যমে ‘রেজায়ে ইলাহী অর্জন :
অর্জিত ধন সম্পদ নিঃসংকোচে আল্লাহর রাহে কোরবানির মাধ্যমে প্রাপ্ত রেজায়ে ইলাহী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “এবং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও স্বীয় জীবনের প্রতিষ্ঠার জন্য ধন সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন উর্বর ভূভাগে অবস্থিত একটি উদ্যান, তাতে প্রবল বৃষ্টিধারা পতিত হয়, ফলে সেই উদ্যান দ্বিগুণ খাদ্যশস্য দান করে; কিন্তু যদি তাতে বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে শিশিরই যথেষ্ট এবং তোমরা যা করছ আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।
(সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৫ )

আল্লাহর প্রেমে বিভোর হজরত মাওলানা অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) জাগতিক সম্পর্ক বিসর্জন দিয়ে কেবল প্রেমাস্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিবেদিত সত্ত্বা ছিলেন। হজরত মাওলানা অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ)’র সংসারের প্রতি অনাসক্তি ও কঠোর রেয়াজত দিন দিন বর্ধিত হচ্ছে দেখে তাঁর আব্বাজান বিশেষ চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং তাঁকে বলেন, বাবা তুমি রাত দিন এত মেহনত করছো, তদ্বারা তোমার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশংকা করছি। মাইজভান্ডারী ছাহেব তোমাকে পাগল বানিয়েছে। তুমি তথায় আসা যাওয়া বন্ধ কর তাহলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। সংসার ধর্ম পালন কর, অর্থাৎ উপার্জনের চেষ্টা কর। এতে তোমার মঙ্গল হবে। হজরত মাওলানা অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) উনার আব্বাজানকে প্রতি উত্তরে বলেন, ‘মাইজভাণ্ডারী ছাহেব আমাকে বাদশা বানাতে চান আর আপনি চান তালুকদার জমিদার বানাতে। তিনি আপনাদিগকে বেহেস্তের (মেওয়া) নেয়ামত খাওয়াতে চান। আর আপনি চান পিয়াজ, রসুন ও শাকসব্জী খাওয়াতে। তিনি চান আমাকে আল্লাহর পরোয়ানা বানাতে। আপনি চান সে আগুন হতে বাঁচাতে। আব্বাজান আমাকে বাঁচাইবার বৃথা চেষ্টা করবেন না। আমাকে ক্ষমা করুন, আমি পাগল আগুনে পুড়িয়া মরছি, মরিব! সেই আগুনে পোড়ার জন্যই আমার বাঁচা। বাঁচিয়া থাকবার জন্য নহে। অতএব সে আগুনে জ্বলে পুড়ে দগ্ধ না হলে আমার জনম-জীবন বৃথা যাবে। ”

মান সম্মান কোরবানির মাধ্যমে ‘রেজায়ে ইলাহী’ অর্জন :
আল্লাহর ইরশাদ করেন, “তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া করবে না; এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন; বস্তুতঃ আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।(সুরা মায়েদা, আয়াত : ৫৪)

গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)র দস্তে মোবারকে বায়াত হওয়ার পর হজরত মাওলানা অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ)’র হাল জজবা প্রবল হওয়ার প্রেক্ষিতে জাগতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ প্রেমে বিভোররত অবস্থায় কখনো পাহাড়ে পর্বতে, স্থলে জলধারে তন্ময়তা ও ছিন্নভিন্ন বসনের কারণে বন্ধুমহল, সমাজ ও আত্মীয় স্বজনের নিন্দা, গালমন্দ, বিদ্রূপ সত্ত্বেও মাওলা সন্তুষ্টি অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে নাই।

পরিশেষে, রেজায়ে ইলাহী তথা আল্লাহ তায়ালার রেজা তথা সন্তুষ্টি অর্জনে সফল ব্যক্তিত্ব অলি আল্লাহর সন্তুষ্টিও আল্লাহর উদ্দিষ্ট হয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “হে প্রশান্ত চিত্ত! তুমি তোমার রবের নিকট ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষ ভাজন হয়ে, অতঃপর তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও,এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। (সুরা ফজর, আয়াত : ২৭- ৩০)
উক্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে দার্শনিক আল্লামা ইকবাল বলেন,
“খুদি কো কর বুলন্দ ইতনা কে হর তাকদির ছে পেহলে
খোদা বান্দে ছে খোদ পুঁছে বাতা তেরি রাজা কিয়া হ্যায়!”
অর্থ : খুদিকে তথা আত্নাকে ততটাই উপরে তুলো; যেন প্রতি বার ভাগ্য লেখার আগে খোদা তোমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার রেজা বা সন্তুষ্টি কী?’

কুতুবুল আকতাব শায়খুল হাদীস হজরত মাওলানা শাহসুফী শাইখ অছিয়র রহমান ফারুকী চরণদ্বীপি (কঃ) স্বীয় অস্তিত্বকে আল্লাহর প্রেম সাধনায় উপসর্গের বিনিময়ে রবের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সন্তোষ ভাজন বিখ্যাত অলি আল্লাহ হিসাবে পরিণত হয়েছেন। আগামী ০৭ মাঘ ২১ জানুয়ারি উনার বেলায়ত ও বেলাদত বার্ষিকী ওরশ শরীফ উপলক্ষে উনার পবিত্র সত্তায় সালাম আরজ করছি।

লেখক : পীরজাদা সাইফুল্লাহ ফারুকী চরণদ্বীপি

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn