শনিবার - ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ১৮ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

রামপালের সু্ন্দরবন হাসপাতালে ভুল অপারেশনে আবারো প্রসূতি তানিয়ার মৃত্যুঃসিলগালা করে বন্ধ করলেন কর্তৃপক্ষ

রামপালের সু্ন্দরবন হাসপাতালে ভুল অপারেশনে আবারো প্রসূতি তানিয়ার মৃত্যুঃসিলগালা করে বন্ধ করলেন কর্তৃপক্ষ

 

বাগেরহাট জেলার রামপালের ফয়লা বাজারে অবস্থিত বেসরকারি সু্ন্দরবন (প্রা) হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে আবারো প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (২৬ মে) রাত ৯ টায় ওই হাসপাতালে অজ্ঞাত চিকিৎসক দিয়ে সিজারিয়ান অপারেশনের এক ঘণ্টার মধ্যে তানিমা বেগম (২০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসা অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) দুুপুরে হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে হাসপাতালটির অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার পাল।

জানা গেছে, উপজেলার ছোট নবাবপুর গ্রামের ফেরদৌস এর স্ত্রী প্রসূতি তানিয়া বেগমকে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ান করানোর দুই দিন পূর্বে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন সোমবার রাত ৯ টায় প্রসূতিতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তাকে কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই অনভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে ভুল অপারেশন করার ফলে অপারেশন থিয়েটারে রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের লোকজন দ্রুত খুমেক হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তানিয়াকে মৃত ঘোষনা করেন। এরপরে সু্ন্দরবন হাসপাতালে পরিচালক নাজমুল হাসান রিয়াজ নিহত প্রসূতির স্বজনদের সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দফারফা করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এমন ধরণের যে কোনো অপারেশনে সার্জনের সহকারী অবশ্যই একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকতে হবে। প্রতি ১০ শয্যার হাসপাতালে কমপক্ষে তিনজন নিবন্ধিত মেডিকেল অফিসার থাকতে হবে এবং স্বীকৃত ডিগ্রিধারী এনেস্থেশিওলজিস্ট ছাড়া এনেস্থেশিয়া প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সুন্দরবন হাসপাতালে ছিল না কোনো ডিউটি ডাক্তার, সার্জনের সহকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন না কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক, এমনকি অপারেশন থিয়েটারে ছিল না মনিটরিং সিস্টেম, ব্লাড প্রেসার মেশিন, পালস অক্সিমিটার বা অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর। হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার পরিদর্শনে গিয়ে ভয়ঙ্কর ধরণের অনিয়ম দেখতে পান। ওটিতে এ্যানেসথেসিয়া যন্ত্রপাতি অকেজো ও বিকল অবস্থায় দেখতে পান। তার মানে রোগীকে অপারেশন করার সময় এ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র চালু না করে এবং কোন এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকলেও রোগীকে অপারেশন করা হয়। এক পর্যায়ে রোগী ইমার্জেন্সী সেবা চালু না থাকায় রোগীকে অনেক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়।

এলাকাবাসী বলছেন, সরকারি নিয়ম মেনে যদি চিকিৎসা সেবা প্রদান সংক্রান্ত বিধি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এসব প্রজ্ঞাপন বা বিধি কাদের জন্য ?
ভুক্তভোগী পরিবার এবং মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের শাস্তি, হাসপাতালের পরিচালকসহ সকলের সাস্তি এবং নীতিমালা অনুসারে সকল বেসরকারি ক্লিনিক পুনর্মূল্যায়ন ও লাইসেন্স যাচাই করে দেখার সময় এখনই।
এ বিষয়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হাসান রিয়াজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
রামপালের বৈশম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে খালিদ হাসান নোমান জানান, বেসরকারি সকল হাসপাতালের অনিয়ম রোধে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহনসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার পাল জানান, একজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু খু্বই হৃদয় বিদারক। হাসপাতাল পরিদর্শনের দেখা গেছে ক্লিনিক চালানোর মতো সরকার নির্ধারিত কোন প্রকার উপযোগী যন্ত্রপাতি নেই। অপারেশন চলাকালীন তিন জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কেউ ছিল না। আজকে এখনো কাউকে পাওয়া যায়নি। যে কারণে ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। কোন প্রকার অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
উল্লেখ, ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১৫ জন প্রসূতি রোগী ভুল চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। তা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বিগত সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতিপয় প্রভাবশালী নেতা ও সুবিধাবাদী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এমন ধরনের ভয়ঙ্কর অনিয়ম করে আসছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে এমন অব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল চলছে বলে মনে করেন সচেতনমহল।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn