রবিবার - ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাতে কাটে পাহাড়,দিনে দেয় দেওয়াল

 

প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতায়ও বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটার মহোৎসব। বন্ধ হয়নি চসিকের আলোচিত সমালোচিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পরিবেশ ধংসের মহাযজ্ঞ। পাহাড় নিধনের উৎসস্থল হিসেবে আলোচনায় থাকা আকবরশাহ এলাকার উত্তর পাহাড়তলীতে বেপোরোয়া কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম নিজেই কাটছেন পাহাড় তার গরুর খামার তৈরির জন্য।

ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে সারারাতভর পাহাড় কেটে দিনের বেলায় দিচ্ছেন সুউচ্চ কনক্রিটের বাউন্ডারি।আর এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জেলা প্রশাসন দেখলো একজন জনপ্রতিনিধির সরাসরি অংশগ্রহণে পাহাড় নিধনের মহোৎসব।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় নগরের আকবরশাহ থানাধীন ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সিটি কর্পোরেশনের লেকসিটি হাউজিং এর পাশেই বিশালাকার পাহাড় কাটার স্থানে অভিযান চালান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (কাট্টলী সার্কেল) মো. ওমর ফারুক।

এসময় তিনি ১০০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের করুণ দৃশ্য অবলোকন করেন। পরে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদের সময় স্থানীয় আলোচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এই স্থাপনা তিনি নির্মাণ করছেন বলে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান এবং স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা দেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,জেলা প্রশাসনের অভিযানকারী দল ঘটনাস্থলে আসেন সকাল সোয়া ১০ টার দিকে। এসময় আকবরশাহ থানার একটি পুলিশ ফোর্স ম্যাজিস্ট্রেটকে সহায়তা করেন। বেলা পৌনে ১১ টার দিকে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে স্থাপনা ভাঙতে বাধা দেন। এসময় কিঞ্চিত হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক থানা পুলিশকে ফোন করে আরেকটি পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে আনেন।এক পর্যায়ে কাউন্সিলর জসিম তার বিরুদ্ধে মামলা দিতে বলে স্থাপনা ভাঙতে বাধা দেন।পরে পুলিশের উপস্থিতি ও পরিস্থিতি বিবেচনায় জসিম স্থান ত্যাগ করেন।

ম্যাজিস্ট্রেট নরম অবস্থায় থাকা কিছু অংশ ভাঙার পর ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।এরপর তিনি ওই এলাকার দখল হয়ে যাওয়া কালীরছড়া খালটির সূত্র অনুসন্ধান ও সার্ভে করেন।

স্থানীয়রা জানান,ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর আবারও কাউন্সিলর জসিম শ্রমিকদের দিয়ে কাজ শুরু করেন।
সহকারী কমিশনার ( ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, আকবর শাহ এলাকার উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ১৭৮ নম্বর দাগে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পিছনে পাহাড়ের খাড়া ঢালু অংশের সাথে পাহাড় কেটে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় খামার নির্মাণ করছিলো একটি চক্র। কাজ করার সময় বা পরবর্তীতে যে কোনো সময় পাহাড় ধ্বসে ও দেয়াল ভেঙে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের খবর পেয়ে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তিনি গরুর খামার নির্মাণ করছেন বলে জানান। আমরা দেয়াল ও স্থাপনার স্ট্রাকচার কিছুটা ভেঙেছি। দেয়ার শক্ত হওয়ায় আমরা পুরোটা অপসারণ করতে পারিনি। সেখানে আবারও অভিযান চালানো হবে। এসময় কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।

ওমর ফারুক বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি।অনেককেই জেল প্রদান ও অর্থদন্ড করা হয়েছে।পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনাও রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের অভিযানে ঝুকিপূর্ণ স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জায়গার মালিকসহ স্থাপনা নির্মাণের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইন ও নিয়মিত মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযানসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই অভিযানপূর্বক জেল জরিমানাসহ অনেককেই শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা।অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা অনুযায়ী পরিবেশ আইনে ও নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।আমাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।জিআর/জেবিএস /

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn