রবিবার - ২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ - ৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - ২৩শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীর মিরপুর বন্ধুসভার মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

রাজধানীর মিরপুর বন্ধুসভার মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

 

২১ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মিরপুর-২ এলাকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মিরপুর বন্ধুসভা। সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে রূপনগর ঊষা শিক্ষা নিকেতনে আসতে থাকে প্রতিযোগিরা। সকাল ১০ টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সূচনা হয়। মিরপুর বন্ধুসভার বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে জাতীয় সংগীত গায় সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপরে নির্ধারিত আসনে বসে পড়ে সবাই। তারপর দায়িত্বরত বন্ধুরা ছবি আকার উপকরণ সমূহ বিতরণ করেন। নির্ধারিত সময়েই শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিযোগিতা শেষ হয় এবং দায়িত্বরত বন্ধুরা অংকিত পেপারগুলো তুলে নেন। ৩০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। এরপর বিচারক প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তিনজনকে বিজয়ী নির্বাচিত করে। বিচারকার্য শেষে শুরু হয় আলোচনা পর্ব।

ভাষা আন্দোলন ও মাতৃভাষা নিয়ে আলোচনা করেন মিরপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা অপূর্ব বড়ুয়া। তিনি বলেন “ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও গৌরবের এক অনন্য অধ্যায়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলার ছাত্র-যুবক জীবন উৎসর্গ করে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করে। তাঁদের সেই আত্মত্যাগের ফলেই আমরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জন করি। এই গৌরবময় সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। মাতৃভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জাতিসত্তার পরিচায়ক। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো মাতৃভাষার সঠিক চর্চা, সংরক্ষণ ও বিকাশ নিশ্চিত করা, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এর গৌরব বহন করতে পারে।”

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিরপুর বন্ধুসভার শুভাকাঙ্খী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফ রহমান। তিনি বলেন “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মিরপুর বন্ধুসভা যে অনন্য আয়োজন করেছে, তার জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। আজকের এই দিন শুধু বাঙালির গৌরবের প্রতীকই নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী ভাষার মর্যাদা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন।
১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলার অকুতোভয় তরুণরা রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, মাতৃভাষার অধিকার কেবল ভাষার প্রশ্ন নয়, বরং এটি আমাদের অস্তিত্ব ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। তাঁদের সেই আত্মত্যাগের ফলে আমরা আজ গর্বের সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করতে পারি। আসুন, আমরা শুদ্ধ বাংলা চর্চা করি, ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করি। এই মহতী আয়োজনের জন্য মিরপুর বন্ধুসভাকে আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই।

অনুষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে ছড়া আবৃত্তি করেন নাঈমুল ইসলাম, ইয়াসিন আরাফাত ও লামিয়া আক্তার। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। অনুষ্ঠান সুন্দর ও সফল করতে যারা কাজ করেছে তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে সমাপনী বক্তব্য দেন সভাপতি মুহাইমিনুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান। অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান ও দপ্তর সম্পাদক মাসুরা আক্তার নদী।

এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী মোহাম্মদ লিখন, সাংগঠনিক সম্পাদক অরুপ বড়ুয়া, অর্থ সম্পাদক আল হোসাইন আবিদ, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক নাসরিন আক্তার মনি, জেন্ডার সমতা সম্পাদক জিনাত বিন তাজিয়া, দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সায়াফ হাসান সাদ, বইমেলা সম্পাদক কাইস বিন আহমেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য সাকিবুজ জামান সাগর, বন্ধু সাহিল মন্তাজ, আবদুল্লাহ্ আলিম, পিয়াস, ওবায়দুল্লাহ্ সালাফি ও আবু সুফিয়ান।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn